ইউরো জোনে থাকা না থাকার প্রশ্ন সামনে রেখে রোববার শুরু হয়েছে গ্রিসের পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এই নির্বাচনের ফলাফলেই পরিষ্কার হবে ইউরো জোন নামের ইউরোপীয় অর্থনৈতিক জোটে শেষ পর্যন্ত গ্রিস অবস্থান করতে পারবে কি না ? অথবা এর ফলাফল শেষ পর্যন্ত ইউরো জোনের ভাঙ্গন বয়ে আনে কি না?
অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে পুনরুদ্ধারে আর্থিক সহায়তার বিনিময়ে গ্রিসের ওপর কঠোর ব্যয় সংকোচন নীতি বাস্তবায়নের শর্ত আরোপ করেছে ইইউ। মূলত এর পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বামপন্থি সিরিজা পার্টি এবং ডানপন্থি নিউ ডেমোক্রেসি পার্টির মধ্যেই নির্বাচনের আসল লড়াই কেন্দ্রীভূত থাকবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
ব্যয় সংকোচন নীতি বাস্তবায়নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ডানপন্থিরা, কারণ তাদের আশঙ্কা ইইউ’র প্রস্তাব মেনে না নিলে গ্রিসকে ইউরো জোন থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। অপর দিকে বামপন্থি সিরিজা পার্টি ইউরো জোনে থাকার কথা বললেও যে কোন মূল্যে তারা এই কৃচ্ছ্র-সাধন নীতির বিরোধিতা করে যাবে বলে ঘোষণা করেছে। কারণ তাদের আশঙ্কা কৃচ্ছ্রসাধন নীতি বাস্তবায়িত হলে দেশের সাধারণ মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসবে। ফলে দেখা দেবে সামাজিক বিশৃঙ্খলা।
তবে ইউরো জোনের নেতারা অবিলম্বে এই নীতি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য গ্রিসের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন ব্যয় সংকোচন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের অর্থ হলো গ্রিসের ইউরো জোনের বাইরে চলে যাওয়া।
রোববারের নির্বাচন গত ছয় সপ্তাহের মধ্যে গ্রিসের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন । গত ৬ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোনো দলই সরকার গঠন করতে না পারায় নতুন নির্বাচন আবশ্যিক হয়ে দাঁড়ায়।
গ্রিসের ভোটের ফলাফলের দিকে এখন সারাবিশ্বের উৎসুক মানুষ কৌতূহলভরে তাকিয়ে আছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন ইউরো জোন থেকে গ্রিসের বেরিয়ে যাওয়া ক্রমান্বয়ে পুরো জোটকেই বিলুপ্তির পথে এগিয়ে নেবে।
গ্রিসের পথ অনুসরণ করে সংকটপীড়িত অন্যান্য দেশও ইউরো থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। আর এর প্রভাব শুধু ইউরোপীয় অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং এর রেশ ছড়িয়ে পড়বে পুরো বিশ্বেই। ফলে মন্দা আক্রান্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক বিশ্লেষক।
রাষ্ট্রীয়ভাবে দেউলিয়ার মুখোমুখি হওয়া গ্রিসকে রক্ষার জন্য দু’টি আন্তর্জাতিক সহায়তা কর্মসূচিকে সামনে রেখে প্রণীত হয় কঠোর ব্যয় সংকোচন নীতি। ২০১০ সালে বরাদ্দ দেওয়া ১১ হাজার কোটি ইউরোর পথ ধরে পরবর্তীতে গত বছরের শেষ দিকে ১৩ হাজার কোটি ইউরোর আরেকটি আর্থিক সহায়তা বরাদ্দ করা হয় গ্রিসকে। কিন্তু শর্ত হিসেবে গ্রিসের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক সংস্কার প্রস্তাব আরোপ করে ইইউ।
সমালোচকদের মতে এই নীতি বাস্তবায়ন করা হলে সংকুচিত হবে গ্রিসের সেবাখাত। চাকরি হারানোর শঙ্কায় পড়বে হাজারো লোক এবং হুমকির মুখে পড়বে অসংখ্য লোকের পেনশন সুবিধা।
এসব দিক বিবেচনা করে ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ‘অরগানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কো অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’র প্রধান অ্যাঞ্জেল গুরিয়া বলেন, পরবর্তীতে যারাই গ্রিসের সরকার গঠন করুক না কেন তাদেরকে ব্যয় সংকোচন নীতির বিভিন্ন শর্ত পর্যালোচনার সুযোগ দেওয়া উচিৎ।
তবে ইউরো জোনের সবচেয়ে প্রভাবশালী সদস্য রাষ্ট্র জার্মানি গ্রিসকে নতুন কোনো ছাড় দিতে রাজি নয় বলেই মনে হচ্ছে। তারা সর্তক করে দিয়ে বলেছে অন্যান্য সদস্য যেভাবে আর্থিক সহায়তার বিনিময়ে অর্থনৈতিক সংস্কার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে ঠিক সেই পথ গ্রিসকেও বেছে নিতে হবে।
অ্যাঞ্জেলা মের্কেল বলেন, ‘ গ্রিসের নির্বাচনে এমন একটি দলের বিজয়ী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ যারা বলবে ‘হ্যা, আমরা আমাদের পূর্বের অঙ্গীকার রাখতে চাই’।’
এদিকে নির্বাচনের আগ দিয়ে ডানপন্থি নিউ ডেমোক্রেসি পাার্টির প্রধান অ্যান্তোনিও সামারাস বলেছেন, তিনি ইউরো জোনে থেকেই তার দেশকে অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে বের করে আনতে পারবেন। অপর দিকে বামপন্থি সিরিজা পার্টির প্রধান অ্যালেক্সিস সিপরাস এই ব্যয় সংকোচন নীতি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, তিনি গ্রিসকে ইউরো জোনে দেখতে চান তবে কৃচ্ছ্রসাধন নীতির কঠোর শর্তগুলো গ্রহণ করা তার দলের পক্ষে সম্ভব নয়।
এখন নির্বাচনের ফলাফলই বলে দেবে গ্রিসের সামনে কোন পথ অপেক্ষা করছে। তবে ফলাফল যাই হোক না কেন এটা নিশ্চিত আগামী দিনে গ্রিসের সামনে অনেক কঠোর ও বন্ধুর পথ অপেক্ষা করছে।