আইকাও আসছে মঙ্গলবার কালো তালিকা থেকে বের হচ্ছে বাংলাদেশ

আইকাও আসছে মঙ্গলবার কালো তালিকা থেকে বের হচ্ছে বাংলাদেশ

ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিশেন অর্গানাইজেশন (আইকাও) প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসছে মঙ্গলবার।

আইকাও প্রতিনিধি দল এর আগে তাদের দেওয়া সুপারিশগুলো বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বাস্তবায়ন করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখতেই এ সফরে আসা।

২০০৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিশেন অর্গানাইজেশন (আইকাও) বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কার্যক্রমে নানা অসঙ্গতির কারণে বাংলাদেশকে নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়ে সিগফিকেন্ট সেফটি কনসার্নের (এসএসসি) তালিকাভুক্ত করে। যা বিমান চলাচল ব্যবসায় কালো তালিকা হিসেবে ধরা হয়। তালিকাভুক্ত করার পর এ তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য আইকাও বেবিচককে কয়েকটি সুপারিশ দেয়।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, আইকাও’র সুপারিশ অনুযায়ী সব ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। তাই এবার তারা এ কালো তালিকা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।

দুই সদস্যের একটি আইকাও পরিদর্শক দল মঙ্গলবার এলেও ২১ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত বেবিচকের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করবে তারা। প্রতিনিধি দল মূলত ৫টি বিষয়ে আলাদাভাবে পরিদর্শন করবে। এর মধ্যে রয়েছে এয়ার ওয়ার্দিনেস, লাইসেন্স প্রদান, অপারেশনাল কার্যক্রম, অর্গানোগ্রাম ও এভিয়েশনের বিভিন্ন নিয়ম কানুন। আইকাও থেকে এ ৫টি বিষয়ে ৩৯টি পর্যবেক্ষণে ৩০৪টি প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে বেবিচককে। সে প্রশ্নগুলোর উত্তর যথাযথভাবে দিতে পারলেই বাংলাদেশ আইকাও’র কালো তালিকা থেকে বের হতে পারবে।

প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এর বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করবে। পরিদর্শকরা আইকাও প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে ২ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিবে।

জানা গেছে, আইকাওয়ের চাহিদা অনুযায়ী এয়ার ওয়ার্দিনেসের ক্ষেত্রে বেবিচক এরই মধ্যে একটি পরিকল্পনা ছক তৈরি করেছে। এই ছকের মাধ্যমেই চলতি মাস থেকে কাজ শুরু করেছে।  অর্গানোগ্রাম ও এভিয়েশনের আইন তৈরি করে অনুমোদনের জন্য যথাক্রমে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স প্রদান ও অপারেশনাল কার্যক্রম নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। এর জন্য আইকাওয়ের নির্দেশ অনুযায়ী প্রায় ২০টির মত ম্যানুয়েল তৈরি করেছে বেবিচক।

ইতিমধ্যে  বিমান সংস্থাগুলোর এয়ার অপারেশন লাইসেন্স নিয়ে যেসব ত্রুটি ছিল সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। কয়েকটি বিমান সংস্থার লাইসেন্স, এয়ার ওয়ার্দিনেস সার্টিফিকেট ও এয়ার ট্রান্সপোর্ট অপারেশনাল লাইসেন্স (অ্যাটল) সংশোধন করা হয়েছে। এসব কাজ পর্যবেক্ষণের জন্য বেবিচক গত এপ্রিল মাসে আইকাও থেকে একজন বিশেষজ্ঞ এনেছিল। সেই পর্যবেক্ষকের রিপোর্টও ইতিবাচক।

এ প্রসঙ্গে বেবিচকের পরিচালক (সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন) উইং কমান্ডার এস এম নাজমুল আনাম বলেন, “আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এখন আইকাওয়ের পরিদর্শন  দলের অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করি আমরা পরিদর্শকদের খুশি করতে পারবো।”

এদিকে এসএসসিতে থাকার ফলে আমেরিকান ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) বেবিচককে ক্যাটাগরি-২ তে রেখেছে। ক্যাটাগরি-২ থেকে বের হওয়ার জন্য এফএএ ৬১টি বিষয়ে সুপারিশ করেছে।

সূত্র জানায়, বেবিচক আইকাও’র সুপারিশগুলোর বাস্তবায়নের পাশাপাশি এফএএ এর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করছে। ৬১টি সুপারিশের মধ্যে ৪৬টির কাজ এরই মধ্যে শেষ করেছে বেবিচক। ১৫ বছরের পুরনো আইএলএস (ইন্সট্র-মেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম) পাল্টে আন্তর্জাতিক মানের সিস্টেম সংযোজন করা হয়েছে। আগে উড়োজাহাজ ল্যান্ডিংয়ের জন্য পাইলটদের একমাত্র উপায় ছিল রানওয়ের বাতি। একই সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে এভিয়েশন ওয়েদার অবজারভেশন সিস্টেম (এডব্লিউওএস)। পাইলটদের দৃষ্টিসীমাকে সহায়তা করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে রানওয়ে ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ (আরভিএস) মেশিন। আগামী অক্টোবর থেকে বিমানবন্দরের রানওয়ের সংস্কার কাজও শুরু হবে। আগস্টে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য কয়েকজন আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ আনা হবে।

এ প্রসঙ্গে বেবিচকের পরিচালক (সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন) উইং কমান্ডার নাজুল আনাম বলেন, “এসএসসি থেকে যদি আমরা বের হতে পারি তাহলে ক্যাটাগরি-২ এর বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে যাবে। তাই  আমরা এসএসসি থেকে বের হওয়ার পাশাপশি ক্যাটাগরি-২ থেকে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। সবকিছু ঠিক থাকলে আশা করি আগামী নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এফএএ এর একটি পরিদর্শক দল ঢাকায় আসবে।”

প্রসঙ্গত, আইকাও এর একটি দল ২০০৯ সালের মে মাসে বেবিচকের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করে একটি রিপোর্ট প্রদান করে। ওই রিপোর্টে বলা ছিল, বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন (বেবিচক) থেকে যেসব বিমান সংস্থাকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তার বেশির ভাগের উড্ডয়ন নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সুক্ষ্ম যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম, রক্ষণাবেক্ষণ, প্রশিক্ষণ, যোগ্য জনবল বা অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রয়েছে। এর মধ্যে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে ১২টি, পরিচালনার ক্ষেত্রে ৭টিসহ প্রকৌশল, এয়ার নেভিগেশন ও আইন মানার ক্ষেত্রে সিভিল এভিয়েশনের অনেক ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত আইকাওয়ের নিয়ম মানা হয়নি। আর এসব দক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ, পরিচালনা ও মান উন্নয়নে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষর (বেবিচক) ঘাটতি রয়েছে। আইকাও এ ধরনের নিয়ন্ত্রণকারী লাইসেন্স পাওয়া বিমান সংস্থাকে ঝূঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত  করছিল।

বেবিচক এসএসসিতে  থাকার ফলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের নিউইয়র্ক রুট চালু করতে পারছে না। দেশের কোনো বিমান সংস্থা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নতুন করে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পাচ্ছে না। এছাড়া দেশের বিমান সংস্থাগুলো ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেতে বেগ পেতে হচ্ছে।

অর্থ বাণিজ্য