বিচারপতিরাও জনগণের মনোনীত বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট।
শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্পিকার বলেন, “ বিচারপতি হিসেবে যারা নিয়োগ পান, সরকার তাদের নামের তালিকা তৈরি করে। এর পরে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে বিচারপতি নিয়োগ দেন। আর রাষ্ট্রপতি কারো ভগ্নিপতি নন। তিনি সংসদ থেকে নির্বাচিত। মানে জনগণের নির্বাচিত। এজন্য বিচারপতিদের মনে করতে হবে তারাও জনগণের মনোনীত।”
কিশোরগঞ্জ সাংবাদিক ফোরাম-ঢাকা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু, আওয়ামী লীগের আফজাল হোসন, বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।
আবদুল হামিদ বলেন, “আমি বলেছিলাম স্পিকার যদি সংসদ সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে জনগণের স্বার্থ পরিপন্থী আইন প্রণয়ন করেন এবং সেটা যদি একাধিকবার হয়, তবে জনগণ সংসদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। একইভাবে বলেছিলাম, বিচার বিভাগ যদি বিচারের নামে অবিচার করে, তবে জনগণ বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। সরকার নিয়েও একই কথা বলেছিলাম। সারাবিশ্বেই একই বিধান। সবকিছুই জনগণের জন্য।”
তিনি বলেন, “ক্ষমতা পেয়ে গেলাম আর ভাবলাম হাম কি হনুরে, এটা ভাবলে সমস্যা। মনে করতে হবে এটা আমার দায়িত্ব।”
তিনি বলেন, “আমি কারো নাম উল্লেখ করে কিছু বলিনি। ব্যক্তিগতভাবেও কিছু বলিনি।”
তিনি আরো বলেন, “প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন আমার বন্ধু। তাকেও মানুষের কথা ভেবে বিচার করতে হবে। এটা ম্যান্ডেটরি।”
স্পিকার বলেন, “রাষ্ট্রের তিনটি অর্গান একে অপরের শত্রু না। বিচারক যখন ওয়ারেন্ট দেন তখন পুলিশ যদি বলে আমি আসামিকে ধরতে পারবো না। আসামিকে ধরতে হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহায়তা প্রয়োজন। তিন বিভাগের মধ্যে ধাক্কা-ধাক্কি লেগে গেলে সমস্যা।”
তিনি বলেন, “আমাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলা হয়েছে-কিন্তু করারতো কিছু নেই। আমি বহুবার জেলে গেছি। আই টেক ইট ইজি।”
এর আগে তিনি বলেন, “স্পিকার পদ নিরপেক্ষ। সরকার ও বিরোধী দল সবার কথাই আমাকে শুনতে হয়। বিরোধী দল রাজনৈতিক কারণে বলে আমি নিরেপক্ষ না। কিন্তু মন থেকে যদি তারা বলে, তবে স্বীকার করতে হবে যে আমি নিরপেক্ষ।”
এর আগে কিশোরগঞ্জের উন্নয়ন কাজ নিয়ে তিনি বলেন, “অনেকেই বলেন, গোপালগঞ্জ আর কিশোরগঞ্জ ক্ষমতার উৎস। এটা আমি মনে করি না। রাষ্ট্রপতি কিশোরগঞ্জের মানুষ। কিন্তু তার ক্ষমতা সীমিত। স্পিকারেরও ক্ষমতা নেই। প্রধানবিচারপতিও কিশোরগঞ্জের। তার ক্ষমতা বিচার বিভাগ নিয়ে। তিনি উন্নয়নের কিছু করতে পারেন না। বর্তমান সেনাপ্রধানও মনে করেন কিছু বলতে গেলে কি হয়। এজন্য তিনিও কিছু বলেন না।”
এ সময় তিনি অনুযোগ করে বলেন, “রাষ্ট্রপতি আমাদের মুরুব্বি। তিনি যদি কিশোরগঞ্জের উন্নয়ন নিয়ে এমপিদেরসহ আমাকে ডাকতেন, তবে আমি যেতাম। কিন্তু উনিতো ডাকলেন না।”
কিশোরগঞ্জের উন্নয়নে বিশেষ নজর দিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে চিন্তা করতে হবে। জাতীয় পার্টি-বিএনপি সব আমলেই কিশোরগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগ পাঁচটি আসনে নির্বাচিত হয়েছে। এ এলাকার জন্য স্পেশাল কিছু প্রয়োজন।”
তিনি আরো বলেন, “আমি ন্যায্য কথা বলতে পিছপা হই না। তেল দিয়ে রাজনীতি করি না। আজ এ দলে তো কাল আরেক দলে এটা আমার নীতি না। যা ভালো মনে করি, তাই বলি। দলের সঙ্গে যদি সুবিধা না হয় তবে অবসর নেবো।”