হজযাত্রী পরিবহনে এভিকো ও এয়ার আটলান্টার উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তবে বিতর্কিত কাবো ও ইউরো আটলান্টা এখনো হাল ছাড়েনি। তারা যে কোনো মূল্যে বিমানের হজ ফ্লাইটে যুক্ত হতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সভায় হজের জন্য এ দুটি এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি অনুমোদিত হয়। এ বছর হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান মোট ৩টি উড়োজাহাজ ভাড়া করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে দুটি উড়োজাহাজ ভাড়া চূড়ান্ত হলো। আর একটি উড়োজাহাজ ভাড়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এই একটি উড়োজাহাজ বিমান যাতে কাবো কিংবা ইউরো আটলান্টার কাছ থেকে নেয় সেজন্য লবিং চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।
প্রথম দফার দরপত্রে আবেদন বাতিল হওয়ার পরেও দ্বিতীয় দফায় দরপত্রে অংশ নেয় কাবো ও অর্থ কেলেঙ্কারি করা ইউরো আটলান্টা। শুক্রবার বিমান দুটি উড়োজাহাজ ভাড়া পরিচালনা পর্ষদের সভায় চূড়ান্ত হয়।
প্রথম দফায় দরপত্রে অংশ নেওয়া এভিকো এভিয়েশন ও এয়ার আটলান্টার সঙ্গে বিমানের আলোচনা চূড়ান্তই ছিল। এরপরেও বিমান এ দুটি কোম্পানির উড়োজাহাজ না নিয়ে দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, যাতে কাবো ও ইউরো আটলান্টা হজ ফ্লাইটে যুক্ত হতে পারে সেজন্যই বিমানের প্রভাবশালী একটি চক্র এভিকো ও এয়ার আটলান্টার সঙ্গে চুক্তি করতে গড়িমসি করে।
কাবো প্রথম দফায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তাদের আবেদন বাতিল করে বিমান। এরপরেও তারা দ্বিতীয় দফার দরপত্রে আবেদন করেছে।
এ বছর রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স বিমান ৬০ হাজার হজ যাত্রী পরিবহনের দায়িত্ব পেয়েছে। যাত্রী বেশি হওয়ায় এবার বিমান ৩টি উড়োজাহাজ ভাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় বেশ কয়েক মাস আগে। এরই মধ্যে ২টি উড়োজাহাজ ভাড়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে ফেলা সত্ত্বেও দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করে। যা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয় বিমান সংশ্লিষ্টদের। অভিযোগ উঠেছে, নিজেদের পছন্দের কোম্পানির উড়োজাহাজ ভাড়া নিতেই বিমানের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা দ্বিতীয়বার আবার দরপত্র আহ্বান করেছে।
নাইজেরিয়াভিত্তিক উড়োজাহাজ কোম্পানি কাবো এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে হজ কেলেঙ্কারির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এজন্য বিমানের পরিচালনা পর্ষদ কাবোকে তালিকাভুক্তির সুপারিশও করেছিল। অপর কোম্পানি ইউরো আটলান্টা তো বিমানের জামানতের টাকা ফেরত না দিয়ে চলে গিয়েছিল।
হজ যাত্রী পরিবহনে এভিকো ও এয়ার আটলান্টার উড়োজাহাজ ভাড়া নিতে বিমান দুটি লিজিং কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত করেও চুক্তি সই করতে কালক্ষেপন করছিল। শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর এই চক্র কিছুটা পিছুটান দিয়েছে।
বিমান সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, বিগত বছরগুলোর ন্যায় এবারও বিমানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা তাদের পছন্দ কোম্পানির উড়োজাহাজ নিতেই চুক্তি চূড়ান্ত করতে গড়িমসি করছে।
কাবো এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ নিয়ে হজ কেলেঙ্কারির পরেও বিগত কয়েক বছর ধরে বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদের তৎপরতার কারণে বিমান এই উড়োজাহাজ নিতে বাধ্য হয়েছে। হজ মৌসুমের আগে একাধিক লিজ প্রদানকারী কোম্পানি বিমানে দরপত্র জমা দিলেও বিভিন্ন অজুহাতে তা বাতিল হয়ে যেত। ২০১১ হজ মৌসুমে কাবোর উড়োজাহাজ ভাড়া নিতে দরপত্র ৪ দফায় বাতিল করার নজিরও রয়েছে। এবছরও ঠিক একই ধরনের ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে।
ইউরো আটলান্টা কোম্পানির বিমানের জামানতের ২০ কোটি টাকা ফেরত না দিয়েই চলে যায়। পরবর্তীতে বিমান এ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ঘোষণা দিলে তারা ১০ কোটি টাকা ফেরত দিলেও এখন পর্যন্ত বাকি অর্থ ফেরত দেয়নি।