মিসরের গণতান্ত্রিক উত্তরণ হুমকির মুখে

মিসরের গণতান্ত্রিক উত্তরণ হুমকির মুখে

মিসরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা অনুষ্ঠানের ঠিক দু’দিন আগে দেশটির সুপ্রিমকোর্ট মুসলিম ব্রাদারহুড নিয়ন্ত্রিত নবনির্বাচিত সংসদ অব্যশই ভেঙে দেওয়া উচিৎ- বলে রায় দিলেন। একই সঙ্গে সাবেক সামরিক শাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার রাজতৈনিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়ার পক্ষেও অবস্থান নিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।

আদালতের এ রায়ের ফলে জনগণের আপত্তি সত্ত্বেও ক্ষতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ শফিকের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথে আর কোনো বাধা থাকে না।

গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্টের এ রায়ের সঙ্গে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার হলো- মিসরের নতুন সংবিধান যা লেখার প্রক্রিয়ায় আছে তাতে ক্ষমতাসীন সশস্ত্র বাহিনীর সুপ্রিম কাউন্সিল পূর্ণ প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাবে। এ কারণে গত বছরের রক্তাক্ত বিপ্লবের পর মিসরে আবার সামরিক শাসন ফিরে আসা অথবা পরোক্ষভাবে সেনা বাহিনীর প্রভাব প্রতিষ্ঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ রায় ঘোষণার পরই মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির (এফজেপি) ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আল বেলতাগি তার ফেসবুক পাতায় সুপ্রিমকোর্টের রায়কে এবং ঘটনার ধারাবাহিকতাকে ‘পূর্ণ অভ্যুত্থান’ বলে অভিহিত করেছেন।

তবে মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মোহাম্মদ মুরসি সংসদ ভেঙে দিতে সুপ্রিমকোর্টের আদেশকে সামরিক অভ্যুত্থান বলতে চান নি।

একটি মিসরীয় টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, ‘আমি সামরিক বাহিনীকে ভালবাসি।’

তিনি বলেন, ‘আদালতের রায় আসলে ‘এখানে এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যারা জনগণের বিরুদ্ধে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করছেন বা পরিকল্পনা করেছেন’- এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছে।’

তবে ব্রাদারহুড সুপ্রিমকোর্টের রায়কে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করবে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছে। এ ব্যাপারে ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির নেতা বর্তমান সংসদের স্পিকার সাদ আল কাতাতানি বলেছেন, মিসরের অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধানে সংসদ ভেঙে দেওয়ার অধিকার বা ক্ষমতা কোনো কর্তৃপক্ষ বা ব্যক্তিকে দেওয়া হয়নি।

এর আগে সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ গঠনে সদস্য নির্বাচনে কোটা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কাউন্সিলের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয় ব্রাদারহুডের। গণপরিষদে দুই তৃতীয়াংশ রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং এক তৃতীয়াংশ নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তারা।

পরে অবশ্য আনুপাতিক হারে আসন বণ্টনের ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত হয়।

কিন্তু সামরিক কাউন্সিলকে চাপের মুখে ফেলে গণপরিষদ গঠন করার সিদ্ধান্তটি এখন সুপ্রিমকোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে ব্রাদারহুডের জন্য বুমেরাং হয়ে গেল বলে অনেকে মনে করছেন।

মিসরের বিপ্লবী জনগণও সুপ্রিমকোর্টের আদেশকে মেনে নিতে পারছে না। তারা তারা একে প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা বলেই মনে করছে। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পরই কয়েকশ’ মানুষ জড়ো হয়ে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে আহমেদ শফিককে অযোগ্য ঘোষণা করার দাবি জানায়।

এদিন ফেব্রুয়ারি বিপ্লবে অংশ নেওয়া অনেকে বলেছেন, শফিক হচ্ছেন প্রতিবিপ্লবীদের অংশ। তিনি যদি এখন প্রেসিডেন্ট হন তাহলে তো তার মানে দাঁড়ায়- বিপ্লব হয়নি!

মিসরের তরুণ রাজনীতি বিশ্লেষক ওয়াইসাম মোহাম্মদ বলছেন, সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালত স্বাধীন হওয়া এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও সেনা বাহিনীর বেষ্টনিতে থাকাটা মোটেও ভাল লক্ষণ নয়।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার সময় সুপ্রিমকোর্টে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রায় শুনে মানুষ বিক্ষোভ শুরু করলে দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও হয়েছে।

আন্তর্জাতিক