মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশের বাস্তুহারা মুসলিম রোহিঙ্গা এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন নৃগোষ্ঠীর লোকজন মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রদেশটিতে সাম্প্রতিকতম ভয়াবহ দাঙ্গার পর খাদ্য, পানি এবং আশ্রয়ের অভাবে এসব লোকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে বলে জানা যায়।
রাখাইন প্রদেশের সিনেটর অং মিয়াত কিয়াও জানান, ‘প্রাদেশিক রাজধানী সিতবেতেই এখন প্রায় ২০ হাজার উদ্বাস্তু অবস্থান করছে। এদের বেশিরভাগই রাখাইনের দাঙ্গা কবলিত গ্রামগুলো থেকে পালিয়ে এসেছে। তবে দাঙ্গার ভয়াবহতা এখন কমে এসেছে।’
জানা গেছে, নিরাপত্তার স্বার্থে ইতিমধ্যেই শত শত মুসলিম রোহিঙ্গাকে সিতবে থেকে সরিয়ে নিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
কিয়াও বলেন, ‘জরুরী ভিত্তিতে তাদের খাবার দরকার। তাছাড়া প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতে এই সময়ে তাদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করাটাও জরুরী হয়ে পড়েছে।’
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় বুধবার রাতেও বেশ কিছু বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে নতুন করে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, রাখাইন প্রদেশে সপ্তাহ ব্যাপী মুসলিম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে সংঘর্ষের ফলে পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষ পর্যন্ত রাখাইন প্রদেশে কারফিউ জারি করে সরকার।
মিয়ানমারের সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তেইন লিন জানান, দাঙ্গার ফলে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, প্রায় আড়াই হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে এবং ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে।
ওয়ান লাট ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা তান মিইত থেইন জানান, সিত্তির উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে খাদ্য সংকট কাটাতে ৩ থেকে ৪ দিন লেগে যাবে। কারণ হিসেবে তিনি মিয়ানমারের দুর্বল যোগাযোগ অবকাঠামোর কথা উল্লেখ করেন।
বর্তমান সংকটের ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত সরকার কিংবা কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে কোন রকম সাহায্য এসে পৌঁছায়নি।
দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি। উল্লেখ্য, সু চি তার ইউরোপ সফর উপলক্ষে বর্তমানে জেনেভায় অবস্থান করছেন।
সেখানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ইন্টারন্যাশনাল লেবার অরগ্যানাইজেশন- আইএলও) এক সভায় দেশের পরিস্থিতির ব্যাপারে তার উদ্বেগের কথা জানান সু চি।
সংবাদ সম্মেলনে সু চি বলেন, ‘সংবেদনশীল এই পরিস্থিতি সামাল দিতে খুব সতর্কতার সাথে কাজ করতে হবে। শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য এখন আমাদের সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।’
তবে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হলে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সংঘাত চলতেই থাকবে বলে মন্তব্য করেন সু চি।
প্রসঙ্গত, ঠিক কি কারণে সাম্প্রতিক এই দাঙ্গার সূচনা সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নয় মিয়ানমার সরকার। তবে মুসলিম ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মাঝে চলমান এই পুরনো সমস্যা প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমার এলাকায় প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা শোচনীয় জীবন যাপন করছে। কিন্তু বাংলাদেশ বা মিয়ানমার সরকারের কেউই তাদেরকে নাগরিকত্বের ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কোন যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছতে পারেনি।