বাংলাদেশে বসবাসকারী বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা সংগঠনকে জামায়াতে ইসলামি সশস্ত্র মদদ যোগাচ্ছে। মিয়ানমারে চলমান জাতিগত সংঘাতেও উস্কানি দিচ্ছে তারা। ইয়াঙ্গুনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে এ অভিযোগ করেছে মিয়ানমার সরকার।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।
বিবৃতিতে দীপু মনি বলেন, “ মিয়ানমার সরকারের করা এ অভিযোগকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছি। এ নিয়ে তদন্তও চলছে।“
দীপু মনি আরো জানান, “রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে সীমান্ত খুলে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ এটা করতে বাধ্য নয়।“
দীপু মনি বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার সেখানে আমাদের দূতাবাসকে জানিয়েছে, বাংলাদেশের কয়েকটি রোহিঙ্গা সংগঠনকে জামায়াতে ইসলামী মিয়ানমারের ভেতরে সশস্ত্র কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে ইন্ধন দিচ্ছে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হওয়া জাতিগত সহিংসতাতেও মদদ দিচ্ছে তারা। আমরা বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখছি।“
তিনি বলেন, ‘আমাদের এক ইঞ্চি ভূমিও প্রতিবেশীদের ওপর হস্তক্ষেপের কাজে ব্যবহার করতে দেবো না।’
এর আগে তিনি বলেন, “কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা, এনজিও বা বন্ধুরাষ্ট্র চায় আমরা যেন সীমান্ত খুলে দিই। তারা এও বলছে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে পারে সে ব্যবস্থাও যেন আমরা করি।“
তিনি বলেন, “আমার অনুরোধ, তারা (আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো) যে সহায়তা বাংলাদেশের ভেতরে দিতে চাচ্ছে, সেটা যেন মিয়ানমারের ভেতরে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। কারণ আট-দশ বছর আগের চেয়ে মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। পাশ্চাত্যের অনেক নেতাই সেখানে সফরে যাচ্ছেন। তাদের বন্ধুরাষ্ট্র হয়েছে মিয়ানমার। দেশটির ওপর এখন কোনো অবরোধও নেই।“
তিনি বেলন, “দেশটির ভেতরে সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা যদি মিয়ানমার সরকারকে অনুরোধ করতেন, তাহলে সেটাই বেশি সঙ্গত হতো।“
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের এক কোটি শরণার্থীর ভারতে আশ্রয় নেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, “১৯৭১ এর বাংলাদেশের পরিস্থিতি আর বর্তমানে মিয়ানমারের পরিস্থিতি এক নয়। `৭১ সালে বাংলাদেশের ওপর একটি যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। আর মিয়ানমারে বর্তমানে যা চলছে, তা জাতিগত সংঘাত। এটি কোনো যুদ্ধাবস্থা নয়। এমন নয় যে সে দেশের সরকার রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করছে। আমরা মনে করি, এটি সমাধানের জন্য সে দেশের সরকার কাজ করছে।“
দীপু মনি বলেন, “১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন বা এ সংক্রান্ত ৬৭ সালের প্রটোকলে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেনি। ফলে সীমান্ত খুলে শরণার্থীদের ঠাঁই দিতে আমরা বাধ্য নই। তারপরও মানবিক কারণে এবং ১৯৭১ আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এতদিন তাদের ঠাঁই দিয়েছি।“
“১৯৭৯ এবং `৯১ ও `৯২ সালে ব্যাপকহারে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে প্রবেশ করে“–এ তথ্য জানিয়ে দীপু মনি বলেন, “এর সংখ্যা ছিলো প্রায় আড়াই লাখ। ২০০৫ দুই দেশের মধ্যে আলোচনা করে কিছু রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর পর ২৮ হাজার রোহিঙ্গাকে নথিভুক্ত করা হয়। এরপর অবৈধভাবে কত অনুপ্রবেশ করেছে তা জানা নেই। বলা হয়ে থাকে, সংখ্যাটি তিন থেকে পাঁচ লাখ।“
তিনি বলেন, “বিগত (বিএনপি-জামায়াত) সরকারের সময় অনেক রোহিঙ্গাই বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গেছে। সেখানে তাদের বিভিন্ন রকম অপরাধের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও শ্রমবাজার নষ্ট হচ্ছে।“
“বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি“ বলে একাধিকবার উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, “আমরা মনে করি, এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের হস্তক্ষেপ করা সঙ্গত হবে না বা সংবিধান সম্মত হবে না।“
তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা না থাকা সত্ত্বেও মানবিক কারণে আমরা তাদের এদেশে থাকতে দিচ্ছি। কিন্তু সীমান্ত খুলে দিতে তো আমরা বাধ্য নই।“
দীপু মনি বলেন, “বাংলাদেশ কখনো, কোনোভাবে অমানবিক আচরণ করেনি এবং করবে না। জলপথে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে, তাদের খাবার, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় জ্বালানি বিজিবি সরবরাহ করছে। আবহাওয়া খারাপ থাকার জন্য কিছু রোহিঙ্গা সেন্ট মার্টিনে অবস্থান করছে। তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়নি। সেখানে একজন রোহিঙ্গা নারী সন্তানও প্রসব করেছেন।“
“সমস্যা উত্তরণে মায়নমার সফল হবে“– এ আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “কিছুতেই আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দেবো না।“