গার্মেন্ট শিল্পে গুটি চালানোর চেষ্টা চলছে: ড. মিজানুর

গার্মেন্ট শিল্পে গুটি চালানোর চেষ্টা চলছে: ড. মিজানুর

শ্রমিকনেতা আমিনুল হত্যাকে কেন্দ্র করে গার্মেন্ট শিল্পে গুটি চালানোর চেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, “প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূত যে মন্তব্য করেছেন, তাতে মনে হচ্ছে গার্মেন্টস শিল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। শ্রমিকনেতা আমিনুল হত্যাকে কেন্দ্র করে গার্মেন্ট শিল্পে গুটি চালানোর চেষ্টা চলছে। সব বন্ধ হবে, যদি সরকার হত্যাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারে।”

গার্মেন্ট শিল্প নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা আর শুনতে চাই না, তদন্ত চলছে। এখনই হত্যাকারীদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।”

বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে কর্মজীবী নারী আয়োজিত ‘শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন: পর্যালোচনা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পোশাক নিলো কি নিলো না, তা বড় কথা নয়। এই শিল্প ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। এই শিল্প ধ্বংস হলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শ্রমিকরা।”

মালিকরা ব্যবসা পরিবর্তন করে অন্যখাতে বিনিয়োগ করতে পারবে। তাদের সহায়তার জন্য বিশ্বিব্যাংকও এগিয়ে আসবে। এ জন্য শ্রমিকদেরকে সজাগ থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মিজানুর রহমান বলেন, “জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কোনো দয়া বা অনুকম্পা নয়। কল্যাণভিত্তিক রাষ্ট্র থেকে অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্রে যেতে হবে।”

শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বোর্ডে শ্রমিকের ৫ মালিকের ৫ এবং সরকারের ১০ জন প্রতিনিধি রাখার বিষয়ে বলেন, “এর মাধ্যমে বিষয়টিকে আমলানির্ভর করে ফেলা হয়েছে। এছাড়া শ্রমিকের ৫ প্রতিনিধি সরকার মনোনীত করবে সেটিও ঠিক হয়নি।”

তিনি বলেন, “ঘুরে ফিরে সবই রাষ্ট্র এবং আমলা নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে।” তিনি এই বাজেটেই বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার জন্য দাবি জানান। এ জন্য রাষ্ট্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য শ্রমিকদের ঐক্য জরুরি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি শিরীন আখতার বলেন,
“আইনটির অনেক ভালো দিক রয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন সন্তোষজনক নয়।”

শিরীন আখতার বলেন, “৬ বছর পার হয়ে গেছে। ৬টি বাজেটে এই আইনটি কোনো গুরুত্ব পায়নি। সবাইকে একযোগে দাবি তুলতে হবে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য। যে টাকা এসেছে, পুরটাই শ্রমিকের টাকা।

সরকার এবং মালিকের টাকা আনার জন্য সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে আইনটিতে জটিলতা রয়েছে। সে গুলোকে সংশোধন করতে হবে। মাতৃত্বকল্যাণ ভাতার বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে। না হলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে শ্রমিকদেরে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে।”

আব্দুল মতিন মাস্টার বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে বললে বলেন, আমিতো যুগ্ম সচিবকে দিয়েছি। কিন্তু একজন কাজ শুরু করলেই তিনি বদলি হয়ে যান। আমাদের অবস্থা হয়েছে ভিক্টোরিয়া ক্লাবের মতো। এখানে এসে ট্রেনিং নিয়ে সব খেলোয়াড় চলে যায় আবাহনী মোহামেডানে। মন্ত্রণালয়ে বসে চা খেতে আশুলিয়ার সমস্যা সমাধান করতে চাইলে পারবে না।”

কর্মজীবী নারীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ড. প্রতিমা পাল মজুমদারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ফয়জুর রহমান, সদস্য আব্দুল মতিন মাস্টার, শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাড. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আইনটি ভালো। সদিচ্ছা থাকলে শ্রমিকের কল্যাণ করা সম্ভব। এই আইনের দুর্বল দিক হচ্ছে আইনটি বাস্তবায়ন নির্ভর করছে সরকার ও মালিকের ওপর। এছাড়া শ্রমিকরা এ আইন সম্পর্কে সচেতন নয়।”

প্রবন্ধে তিনি আরো বলেন, আইনটি প্রণয়ন হয়েছে ২০০৬ সালে। আর বিধিমালা তৈরি হয়েছে ২০১০ সালে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে এগুতে পারেনি ফাউন্ডেশন। বেশ কয়েকটি  বাজেট পার হলেও কোন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। অথচ কথা ছিলো সরকার যে পরিমাণ বরাদ্দ দেবে সেই পরিমাণ অর্থ মালিক পক্ষ এই তহবিলে জমা দিবেন।

অর্থ বাণিজ্য