মিয়ানমারের চলমান গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে সহায়তা করে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছেন দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি। একই সঙ্গে তার দেশে শ্রমিকের অধিকার লঙ্ঘিত হয় এমন কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সর্তকতা উচ্চারণ করেন তিনি। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) এক সভায় ভাষণ দেওয়ার সময় এ সব কথা বলেন সু চি।
এক ঐতিহাসিক সফরে বর্তমানে ইউরোপের জেনেভা নগরীতে অবস্থান করছেন মিয়ানমারের এই গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী। ১৯৮৮ সালের পর সু চির এটাই প্রথম ইউরোপ সফর।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কর্তৃক বিগত ২৪ বছরের মধ্যে অধিকাংশ সময়ই গৃহবন্দি থাকার পর অবশেষে ২০১০ সালে মুক্ত হন তিনি। মুক্তির পর থেকেই নিজ দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সুচি। এরই ধারাবাহিকতায় দুই মাস আগে মিয়ানমারের পার্লামেন্টের এক উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন তিনি।
১৪ জুন আইএলওতে দেওয়া নিজের বক্তব্যে মিয়ানমারের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক উত্তরণের পথে সহায়তা করে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা করেন সু চি। তিনি বলেন,‘মিয়ানমারের এখন প্রয়োজন গণতন্ত্র-বান্ধব উন্নয়ন।’ একই সঙ্গে তিনি এসব উন্নয়নের সঙ্গে মিয়ানমারের সাধারণ নাগরিকদেরও সম্পৃক্ত করার আহবান জানান।
ইউরোপ সফরের শুরুতেই সু চি আইএলও’র অনুষ্ঠানে অংশ নেন, কারণ মিয়ানমারে বাধ্যতামূলক শ্রমের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালিয়ে আসছে সংস্থাটি।
সু চির দু’ সপ্তাহের এই ইউরোপ সফরকে মিয়ানমারের গনতান্ত্রিক উত্তরণের পথে একটি ইতিবাচক মাইলফলক হিসেবে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সামরিক জান্তার দীর্ঘশাসনাধীনে থাকার সময় মিয়ানমার বাকি পৃথিবীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিলো।
জেনেভা দিয়ে সফর শুরু করে সু চি পর্যায় ক্রমে যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স ও নরওয়ে যাবেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। নরওয়েতে তিনি তার নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান তিনি। তবে সামরিক জান্তার অসহযোগিতায় নিজ হাতে পুরষ্কার গ্রহণ করতে পারেননি তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে এটি হলো সু চির দ্বিতীয় বিদেশ যাত্রা। গত মে মাসে অনুষ্ঠিত প্রথম সফরে প্রতিবেশী থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেন সু চি।
সু চি ব্রিটিশদের অধীনতা থেকে বার্মার স্বাধীনতার জনক অং সানের কন্যা। ১৯৪৭ সালে নিহত হন অং সান।
বহুবছর প্রবাসে থাকার পর ১৯৮৮ সালে অসুস্থ মাকে দেখতে দেশে ফিরে আসেন সুচি। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে বাধ্য হন। এরপর আর মিয়ানমার ত্যাগ করতে পারেননি তিনি। একবার মিয়ানমার ত্যাগ করলে সামরিক জান্তা তাকে আর দেশে ফেরত আসার অনুমতি নাও দিতে পারে, এই আশঙ্কাতেই মূলত দেশ ত্যাগ করেননি সু চি।