উপকূলের বিস্তৃত সামুদ্রিক এলাকা জুড়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেরিন রিজার্ভ পার্ক তৈরির ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দ্বীপ মহাদেশ রাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়াকে ঘিরে রাখা সাগরের বিস্তৃত এলাকা নিয়ে গঠিত এই মেরিন রিজার্ভের আয়তন প্রায় ভারতের সমান বলে জানা গেছে। অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ মন্ত্রী টনি বার্ক বৃহস্পতিবার এই মেরিন রিজার্ভ পার্ক গঠনের পরিকল্পনার কথা জানান।
জীববৈচিত্র এবং জলজ সম্পদ রক্ষায় এই মেরিন রিজার্ভ এলাকায় যে কোনো ধরণের বাণিজ্যিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হবে। ফলে এখানে কোনো ধরণের তেল- গ্যাস অন্বেষণ এবং বাণিজ্যিকভাবে মৎস শিকার করা যাবে না বলে কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় সামুদ্রিক এলাকায় মেরিন রিজার্ভ স্পটের সংখ্যা ২৭টি থেকে ৬০টিতে উন্নীত করা হবে। এর ফলে অস্ট্রেলিয়ার চারপাশের সামুদ্রিক সীমানার প্রায় ৩০ লাখ বর্গ কিলোমিটার এলাকা এই মেরিন রিজার্ভের আওতায় আসবে। বিস্তৃত এই এলাকা দেশটির মোট সামুদ্রিক এলাকার এক-তৃতীয়াংশ বলে জানা গেছে।
মেরিন রিজার্ভ বিস্তৃত করার অস্ট্রেলিয়া সরকারের এই ঘোষণা এমন এক সময় দেওয়া হলো যখন ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরে বিশ্বের ১৩০টি দেশের সরকার প্রধানরা জাতিসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাসের জন্য করণীয় সম্পর্কে বৈশ্বিক উদ্যোগ সংক্রান্ত একটি সম্মেলনে অংশ নিতে মিলিত হবেন।
প্রস্তাবিত এই মেরিন রিজার্ভ অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ পশ্চিম উপকূল থেকে শুরু করে উত্তর পূর্ব এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ এলাকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় কোরাল সাগর অঞ্চল। এই সাগরই মূলত সামুদ্রিক জীব বৈচিত্রের জন্য বিখ্যাত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে ঘিরে রেখেছে।
অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্তে বাণিজ্যিক মৎস আরোহণ খাতে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই দেশটির কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং মৎসজীবি সংগঠন সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে।
অস্ট্রেলিয়ান মেরিন অ্যালায়েন্সের প্রধান নির্বাহী ডিন লোগান অস্ট্রেলিয়ান টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেন, ‘এই পরিকল্পনা বিপর্যয়কর এবং প্রথম ক্ষতির সম্মুখীন হবে উপকূলীয় জনগোষ্ঠী।’
অপর দিকে অস্ট্রেলিয়ার বিরোধী রক্ষণশীল দলীয় নেতা টনি অ্যাবোট দাবি করেছেন, সরকারের এই পরিকল্পনা উপকূলীয় এলাকায় বাণিজ্যিক মৎসজীবি এবং পর্যটন ব্যবসায়ীদের অধিকারকে ক্ষুন্ন করবে।
তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে মৎসজীবি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ মন্ত্রী বার্ক। এদিকে এই মেরিন রিজার্ভের সীমানা নির্ধারণে সরকার ছল চাতুরির আশ্রয় নিয়েছে বলে দাবি করছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। মেরিন রিজার্ভের সীমানা ঠিক করার সময় সরকার তেল-গ্যাস কোম্পানির লবি গ্রুপের কাছে নতি স্বীকার করেছে বলে পরিবেশবাদী সংগঠনের পাশাপাশি কয়েকটি রাজনৈতিক দলও অভিযোগ করেছে।
এ ব্যাপারে গ্রিন পার্টির পরিবেশ বিষয়ক মুখপাত্র র্যাচেল সিয়ার্ট বলেন, তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোর শক্তিশালী লবি গ্রুপের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ মানচিত্র নির্ধারন করা হয়েছে। উপকূলের বিপন্ন এলাকার মধ্যে যেখানে তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কৌশলে সেগুলোকে মানচিত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে ঝুঁকির সম্মুখীন বলে উল্লেখ করা হয়। অধিক বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কারণে ব্যারিয়ার রিফের পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয় এই প্রতিবেদনে।
তবে অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি কুইন্সল্যান্ড প্রদেশে ৯৭০ কোটি ডলারের একটি কয়লা উত্তোলন প্রকল্পের পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদান ঝুলিয়ে রাখে। ভারতের জিভিকে পাওয়ার অ্যান্ড ইনফ্রাস্টাকচার কোম্পানির বিনিয়োগকৃত এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ এলাকা দিয়ে জাহাজ চলাচল বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছে পরিবেশবাদীরা।