ভারত থেকে ২০ কোটি ডলারের অনুদান কোন প্রকল্পে খরচ করা হবে তা এখনও জানায়নি ভারত সরকার। এমনকি এ অর্থ ব্যবহারের শর্ত সম্পর্কেও কিছুই জানানো হয়নি। এ তথ্য জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তরে মুহিবুর রহমান মানিক অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ভারত থেকে পাওয়া অনুদান কোন কোন প্রকল্পে খরচ করা হবে। তিনি আরো জানতে চান, ওই অর্থ খরচে ভারত সরকার কোনো শর্তারোপ করেছে কিনা।
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের সময় ২০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য গত ২৮ মে তারিখে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে, যার উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ পর্যায়ে ভারত থেকে পাওয়া অনুদানে কোন কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে এবং এ অর্থ ব্যবহারে কোনো শর্ত আছে কিনা তা বলা সম্ভব নয়।’
আহমেদ নাজমীন সুলতানার প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ডেসটিনি গ্রুপভূক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অবৈধ আর্থিক লেনদেনের বিষয়গুলো চিহ্নিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নিবন্ধক, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতরের নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া দুদক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আলাদভাবে তদন্ত করছে।
একেএম মাইদুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, ‘গত বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের মোট সম্পদ ১৪ হাজার ৪৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের মোট সদস্য সংখ্যা ৮৩ লাখ ৭৯ হাজার ২৭৩ জন। গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের মাথাপিছু আয়ের ব্যাপরে প্রতিষ্ঠানটি কোনো জরিপ করেনি।’
একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরো বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকে চার ধরনের ঋণ কার্যক্রম প্রচলিত রয়েছে। উৎপাদনশীল কাজের জন্য সুদের হার ফ্ল্যাট রেটে ১০ শতাংশ। ডিকলাইনিং ভিত্তিতে সুদের হার ২০ শতাংশ। গৃহ নির্মাণ খাতে সুদের হার আট শতাংশ। শিক্ষা খাতে সুদের হার শিক্ষাকালে শূন্য শতাংশ এবং সমাপনান্তে ৫ শতাংশ। ভিক্ষুকদের জন্য সুদের হার শূন্য শতাংশ।
গিয়াস উদ্দিন আহমেদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির সনদ প্রাপ্ত ৬৪৩টি প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
তিনি আরো জানান, ২০১১ সালে এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে।
নাসরিন জাহান রতনার প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পুঁজিবাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক, স্থিতিশীল ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে সিকিউরিটি ও এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন-১৯৯৩ এবং সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স-১৯৬৯ এর সংশোধনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’
শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ১৯৯০ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে শুল্ক বিভাগ প্রায় দুই হাজার ৪৪৬ কেজি স্বর্ণ আটক করেছে। যার আর্থিক মূল্য এক হাজার ১৪৭ কোটি ৭২ লাখ ২৯ হাজার টাকা (এক গ্রাম স্বর্ণ ৪ হাজার ৬৯১ টাকা হিসাবে)।
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে আবুল মাল আব্দুল মুহিত জানান, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি বাবদ এক হাজার ৬৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
জহিরুল হক ভূঞা মোহনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের মধ্যে চারজন ঋণ খেলাপি পরিচালক রয়েছেন। এরা হলেন-মাহবুবুল আলম তারা (এনসিসি ব্যাংক), এএসএম মাঈনুদ্দিন মোনেম (এনসিসি ব্যাংক), এসএম আব্দুল মান্নান (মার্কেন্টাইল ব্যাংক), মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান (প্রিমিয়ার ব্যাংক)।
এম. আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বৈদেশিক মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ করতে ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট-১৯৪৭ সংশোধন করে আরো কঠোর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
বেনজীর আহমেদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১২ সালের এপ্রিল মাসের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে দেশে কার্যরত তফসিলী ব্যাংকগুলোর মোট আট হাজার চারটি শাখা রয়েছে। এসব ব্যাংকের বর্তমান মূলধনের পরিমান ৫৪ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা।
শাহিন মনোয়ারা হকের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৭১ হাজার ৬৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়েল লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।’
নাজিম উদ্দিন আহমেদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে অনুদান বাবদ ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ঋণ বাবদ এক হাজার ৩৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কমিটমেন্ট পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে ৫৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড় পাওয়া গেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে অনুদান ও ঋণ বাবদ মোট ৮৮৯ মিলিয়ন ডলারের কমিটমেন্ট পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪০৯ মিলিয়ন ডলার ছাড় পাওয়া গেছে।’
সাধনা হালদারের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরে মে মাস পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১১ হাজার ৭৬৬ দশমিক ৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছে।
নুরুন্নবী চৌধুরীরর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমান ৯ হাজার ৬৩৭ দশমকি ৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।