ভারতের বিজনেস টাইকুন রতন টাটা। একদা প্রেমে পড়েছিলেন তিনিও। বিয়েটাও প্রায় হয়েই যাচ্ছিল। কিন্তু বাদ সাধল ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধ। জীবনের কাহিনিটাই একেবারে বদলে দিল এই যুদ্ধ। অকপট এই স্মৃতিচারণা করলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি তথা বিজনেস টাইকুন রতন টাটা। ‘হিউম্যানস অফ বোম্বে’ নামে একটি জনপ্রিয় ফেসবুক পেজে নিজের জীবনের এমন অনেক অজানা কাহিনিই ‘শেয়ার’ করেছেন ৮২ বছরের টাটা। প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই যা রীতিমতো ভাইরাল।
টাটা জানিয়েছেন, তাঁর বয়স যখন দশ, বাবা নাভাল ও মা সুনি টাটার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সুনি ফের বিয়ে করেন। যা নিয়ে বহুবার ব্যঙ্গ এবং কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে ও তাঁর ভাইকে। তবে তা সত্ত্বেও দাদি নাভাজবাই টাটার কাছে তাঁদের বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা সামগ্রিকভাবে বেশ ভালোই ছিল।
স্কুল পাস করার পর যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা করতে যান রতন। কিন্তু পড়াশোনাার পাশাপাশি সংগীত-চর্চার মতো নানা বিষয়ে বাবার মধ্যে তাঁর তীব্র মতবিরোধ ছিল।
টাটার দাবি, তাঁর বাবা চাইতেন ছেলে ব্রিটেনে পড়াশোনা করুক। অথচ টাটা চাইতেন আমেরিকায় পড়াশোনা করতে। আবার বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে পিয়ানো শিখুক কিন্তু তাঁর ইচ্ছা ছিল ভায়োলিন শিক্ষার। আবার বাবা চাইতেন, ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করুক। আর টাটার টান ছিল আর্কিটেকচারের দিকে। শেষ পর্যন্ত রতন টাটা আমেরিকায় পড়াশোনা করেন নিজের পছন্দের বিষয় আর্কিটেকচার নিয়েই। আর এর জন্য তিনি ধন্যবাদ দিয়েছেন তাঁর দাদিকেই। কারণ তাঁর জন্যই এসব কিছু সম্ভব হয়েছিল বলে ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন তিনি।
টাটার স্বীকারোক্তি, দাদির দেওয়া মূল্যবোধের শিক্ষা আজও তাঁর মধ্যে জীবিত রয়েছে আর তার উপর ভিত্তি করেই তিনি জীবনে এগোতে পেরেছেন।
নিউ ইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্কিটেকচারে ডিগ্রি পাওয়ার পর লস অ্যাঞ্জেলসের একটি সংস্থায় চাকরি পান টাটা। নিজের উপার্জনে গাড়িও কেনেন। দু’বছর সেই সংস্থায় চাকরি করেন। সেই সময়ই প্রেমে পড়েন এক নারীর। তাঁকে বিয়ে করতেও চেয়েছিলেন। এভাবেই বেশ কাটছিল সময়। কিন্তু হঠাৎই জীবন অন্য দিকে মোড় নেয়। অসুস্থ হয়ে পড়েন টাটার ঠাকুরমা। দেশে ফিরে আসেন টাটা। তিনি আশা করেছিলেন, তাঁর প্রেমিকাও তাঁর সঙ্গে, তাঁর টানে ভারতে চলে আসবেন। কিন্তু তা হয়নি। কারণ সালটা ছিল ১৯৬২ আর ওই বছরই শুরু হয়ে যায় ভারত-চীন যুদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে টাটা যাঁকে ভালবাসতেন এবং বিয়েও করতে চেয়েছিলেন, তাঁর বাবা-মা চাননি তাঁদের মেয়ে ভারতে আসুক। তিনি আসেনওনি। টাটা একাই ভারতে ফেরেন। আর সেই সঙ্গেই তাঁর সেই প্রেমের সম্পর্কটিও ভেঙে যায়। পরিণতি না পেয়েই।