গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় ৪র্থ শ্রেনী পড়–য়া ছাত্রীর ধর্ষণ ও বাল্যবিবাহের শিকার হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ষণের দায় এড়াতে অবশেষে বাল্য বিয়ের আয়োজন। কিন্তু দুই মাসের মাথায় তালাক নামায় স্বাক্ষর নিয়ে ৯ বছর বয়সী ও ছাত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে পাষন্ড স্বামী।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নের বালাবাবুনিয়া গ্রামে। এ ঘটনায় গোটা উপজেলায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার সচেতন মহল ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ও জরুরি প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
বিভিন্ন দফতরে দাখিলকৃত অভিযোগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ২ এপ্রিল রাতে বালাবাবুনিয়া গ্রামের জয়নাল মিয়ার কন্যা বালাবামুনিয়া রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর নিয়মিত ছাত্রী সাবিনা খাতুন (৯) প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে যায়। এ সময় আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা একই গ্রামের মোঃ গনি শেখের পুত্র জিল্লুর রহমান (২৪) সাবিনাকে পাশের একটি দোকান ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষিতার আত্মচিৎকারে পাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে এসে ধর্ষককে হাতে নাতে আটক করে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে গ্রাম্য টাউট-দালালদের একাধিক দেন-দরবার ও সালিসী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। হতদরিদ্র সাবিনার অসহায় পিতা জয়নাল ধর্ষক পক্ষের দালালদের পরিকল্পিত কালক্ষেপণের চক্রে পড়ে আইনের সহযোগিতা নিতে ব্যর্থ হন। ঘটনার ২ দিন পর স্থানীয় লোকজনসহ পবনাপুর ইউপির ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আঃ রউফ ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোছাঃ আছমা খাতুনের উপস্থিতিতে ধর্ষক জিল্লুরের সঙ্গে ওই ধর্ষিতা বালিকার বিবাহ সম্পন্ন হয়।
পবনাপুর ইউনিয়নের কথিত সাব কাজী বলে পরিচিত এবং বালাবাবুনিয়া রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ খালিদ খন্দকারের মধ্যস্থতায় যৌতুক বাবদ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে নগদ ১০ হাজার টাকা এবং ৭০হাজার টাকা দেন মোহরানার শর্তে বিবাহের রেজিস্ট্রি সম্পাদন করা হয়। কিন্তু বিয়ের ২ মাস না যেতেই গত ৬ জুন রাতে সুপরিকল্পিত ভাবে পাষন্ড স্বামী জিল্লুর রহমান স্থানীয় টাউট-বাটপারের সহায়তায় এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোছাঃ আছমা খাতুনের উপস্থিতিতে ইউপি সদস্য কাজী শহিদুলের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে সাবিনার কাছ থেকে জোর পূর্বক তালাক নামায় স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। পরে পাষন্ড স্বামী সাবিনাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় ।
সাবিনার পিতা জয়নাল মিয়া জানায়, ‘ঘটনার দিন ধর্ষককে আমি হাতে নাতে ধরার পর ধর্ষক জিল্লুর পক্ষের প্রভাবশালী লোকজন আমাকে আইনের সহযোগিতা নিতে নিষেধ করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই জোর করে আমার শিশু সন্তান সাবিনার বিয়ে সম্পন্ন করে। আবার জোরপূর্বক তালাক নামায় স্বাক্ষর নেয়। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে দুই-চার টাকা করে সহায়তা নিয়ে দশ হাজার টাকা মিলিয়ে মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দিয়েছিলাম। এখন আমার হাতে কোনো অর্থ নেই। অপরদিকে তাদের অমানবিক নির্যাতনে মেয়েটি ক্রমান্বয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন কি দিয়ে মেয়ের চিকিৎসা ব্যয় মেটাবো ? আর কি দিয়েই বিচার চাইবো ?’
এদিকে ইউপি সদস্য আঃ রউফ, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আছমা খাতুন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘বিষয়টি এমন হবে বুঝে উঠতে পারিনি। শিশু মেয়েটির সংসার এবং স্বামী সর্ম্পকে স্বাভাবিক কোনো ধারণা না থাকায় স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির উপস্থিতিতে তালাকনামায় স্বাক্ষরের বিষয়টি সম্পন্ন করা হয়।’ আঃ রউফ বলেন, ‘আমরা ছেলে-মেয়ে উভয়কে ৬ মাস বোঝার জন্য সময় দিতে বলেছিলাম, কিন্তু সালিশী বৈঠকের লোকজন তা মেনে না নেয়ায় আমি বৈঠক থেকে চলে যাই। পরে এসে শুনি তালাক হয়ে গেছে। আমি সে সময় উপস্থিত ছিলাম না।’ পবনাপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোছাঃ শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে কিছুই জানিনা। তবে তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইউনিয়ন কাজী মোঃ শহিদুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে জিল্লুর (২৪) ও সাবিনার (৯) বাল্য বিয়ে এবং তালাকের বিষয়টি স্বীকার করলেও তিনি দাবি করেন তার সাব-কাজীর নিকট উক্ত বিয়ে রেজিঃ হয়নি।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাল্য বিয়ের শিকার শিশু সাবিনার পরিবার যথাযথ বিচারের আশায় এলাকার সমাজপতিদের দ্বারে-দ্বারে ঘুরছে।