১১ খাতের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের ১১ টিম

১১ খাতের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের ১১ টিম

সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত এগারো সেক্টরে দুর্নীতি অনুসন্ধানে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এগারটি বিশেষ টিম। দুদকের একজন উপপরিচালকে প্রধান করে প্রতিটি অনুসন্ধান টিম এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারিও শুরু করেছে।

এসব সেক্টরের দুর্নীতি অনুসন্ধান, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও অভিযোগ অনুযায়ী বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়াই দুদকের এই বিশেষ উদ্যোগের উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এ ব্যাপারে দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান রোববার রাতে বলেন, ‘এগারো প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধান ও দুর্নীতি তদন্তে বিশেষভাবে কাজ করছে দুদকের এগারোটি টিম। এসব অনুসন্ধান টিমের দলনেতা রাখা হয়েছে কমিশনের উপপরিচালকদের।’

বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি রোধ করতে দুদকের এ টিম জোরালোভাবে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিরোধে প্রথম অনুসন্ধান টিম গঠন করেন তৎকালীন দুদক চেয়ারম্যান হাসান মশহুদ চৌধুরী।

দুদক তখন সড়ক ও জনপদ (সওজ), ঢাকা সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দুর্নীতি অনুসন্ধান শুরু করে।

এসব খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তাসহ বহু অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়।  তখন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও অনুসন্ধানের জন্য দুদকের এই বিশেষ কমিটিকে সহযোগিতা করেন।

কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে এ নিয়ে সর্বশেষ বৈঠক হলেও পরে দুদক কমিটিকে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করতে থাকে তারা। এর ফলে দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে দুদকের কর্মকর্তারা সমস্যায় পড়তে থাকেন। একপর্যায়ে দুদকের অনুসন্ধান কমিটির কার্যক্রম শ্লথ হয়ে পড়ে।

চলতি বছরের শুরুতে দুদকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করে দুদক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের অনুসন্ধান টিমের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের সময় সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা যেভাবে দুদককে সহযোগিতা করেছেন এখন সেরকম সহযোগিতা পাওয়া যায় না। ফলে অনুসন্ধানে সমস্যা হচ্ছে।’

তবে এখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন, সংগ্রহ-ক্রয়-সরবরাহ ও টেন্ডারে অনিয়মসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে আটটি প্রতিষ্ঠানে অনুসন্ধান চলমান থাকলেও চলতি বছর আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে। কমিশন পৃথক পৃথক দল গঠন করে এ সেক্টরে কাজ করছে।’

প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি অনুসন্ধান জোরদার করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

সে অনুযায়ী ৮ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও এর অধীন প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও এর অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি অনুসন্ধানে পৃথক দুটি বিশেষ অনুসন্ধানী দল গঠন করা হয়। এ ছাড়া রাজউকের দুর্নীতি অনুসন্ধানে ১৩ মার্চ গঠন করা হয় আরেকটি দল।

এর আগে সরকারি আবাসন অধিদফতর ও সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের দুর্নীতি অনুসন্ধানে ২৭ জুন এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর পৃথক দল গঠন করা হয়।

দলগুলো দুর্নীতি ও অনিয়মের খাতগুলো চিহ্নিত করেছে এবং চিহ্নিত ক্ষেত্র বন্ধ করতে সুপারিশ তৈরি করেছে। ঘটে যাওয়া দুর্নীতির ক্ষেত্রে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ জানিয়ে কমিশনে প্রাথমিক প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে।

১১ দল নেতার নেতৃত্বে বিশেষ টিম
দুদকের কাছে যেসব সেক্টরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসছে সেসব সেক্টরকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিশেষ টিম গঠন করছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান পরিচালনা করার জন্য কমিশন পৃথক পৃথক দলে একজন উপপরিচালককে অনুসন্ধান টিমের দলনেতা করেছেন।

রাজউকে অনুসন্ধান টিমের দলনেতা রয়েছেন দুদকের উপপরিচালক সাঈদ উর রহমান। এ উপ-পরিচালকের অধীনে রয়েছেন ৩ জন কর্মকর্তা- যারা রাজউকের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখছেন।

আবদুল্লাহ আল জাহীদের নেতৃত্বে ৩ জন কর্মকর্তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দুর্নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন।

নুরুল হকের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দিক অনুসন্ধান করছেন ৩ কর্মকর্তা।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে (উত্তর ও দক্ষিণ) অনুসন্ধান টিমের দলনেতা রয়েছেন দুদকের উপপরিচালক হারুনুর রশীদ। এ উপ পরিচালকের অধীনে রয়েছেন ৪ জন কর্মকর্তা- যারা সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন দুর্নীতি খতিয়ে দেখছেন।

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরে মো: জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে রয়েছে ৩ জন।
২ জন কর্মকর্তা নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)এর দুর্নীতি অনুসন্ধানে রয়েছেন আব্দুল আজিজ ভুইয়া।

সরকারি আবাসন পরিদপ্তরে মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বে রয়েছেন ২ জন কর্মকর্তা।
মো: মনিরুজ্জামান খান সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড অনুসন্ধান করছেন। তার সঙ্গে আরও ২ জন কর্মকর্তা কাজ করেছেন।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে দুর্নীতি বিষয়ক বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন বেলাল হোসেনসহ আরও ২ জন কর্মকর্তা। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে বেনজির আহমেদের নেতৃত্বে ২ জন কাজ করছেন।

এরইমধ্যে এসব টিম কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি ও মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ