সংসদ অধিবেশন কক্ষকে ‘ডিজিটাল প্লেনারি চেম্বার’ হিসেবে তৈরির জন্য কোরিয়ান দাতা সংস্থা কোইকা অনুদান দিচ্ছে না। শুরুতে এ প্রকল্পে অনুদান দেওয়ার জন্য আগ্রহ দেখালেও এখন পিছিয়ে এসেছে এ সংস্থা। তবে পিছিয়ে আসার কারণ ব্যাখ্যা করেনি তারা।
আগামী অর্থবছরের প্রকল্পের তালিকায় এ প্রকল্পটি রাখেনি তারা। ফলে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ আরো একদফা পিছিয়ে গেলো।
সংসদ সচিবালয় এ বিষয়ে জানার জন্য কোইকাকে চিঠিও পাঠিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ-কোরিয়া সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের মাধ্যমেও এ বিষয়ে তদবির শুরু করেছে সংসদ সচিবালয়।
উল্লেখ্য, চলতি বাজেট অধিবেশনের আগেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চেয়েছিলো সংসদ সচিবালয়।
সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইপিএ) প্রণব চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, “কোইকা তাদের প্রকল্প তালিকায় এ প্রকল্প রাখেনি। যদিও শুরুতে এ বিষয়ে তারাই আগ্রহ প্রকাশ করে।”
তিনি বলেন, “কোইকার সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এরইমধ্যে আমরা একদফা চিঠি পাঠিয়েছি। সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে।”
শেষ পর্যন্ত কোইকা টাকা না দিলে নিজস্ব ফান্ড থেকে এ প্রকল্পের কাজ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, সংসদকে ই-পার্লামেন্টে রূপান্তরের লক্ষ্যেই পৌনে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিলো। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রথমবার প্রকল্প প্রস্তাব করার সময় এর বাজেট রাখা হয় ২৭ কোটি টাকা। বিধি অনুযায়ী, ২৫ কোটি টাকার ওপরে গেলেই প্রকল্প পাসের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাঠাতে হয়। তবে প্রকল্প খুব শিগগিরই কার্যকর করার জন্য একেনেকে পাঠানোর যেন প্রয়োজন না হয় সে কারণে প্রকল্প বাজেট দুই বার সংশোধন করা হয়েছে।
গত মার্চ মাসে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। কোইকা কবে নাগাদ অনুদান দেবে তা জানতে চেয়ে সংসদ সচিবালয়কে চিঠি দিয়েছিলো পরিকল্পনা কমিশন।
সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় অর্থ ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। বাকিটা কোইকা অনুদান হিসাবে দেবে বলে জানিয়েছিলো। এ প্রকল্পের আওতায় সংসদ সচিবালয়ের প্রশাসনিক ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মকর্তারা শিক্ষা সফরে কোরিয়া যেতে পারবেন। আর কোরিয়ান বিশেষজ্ঞরা প্রকল্পের কারিগরী দিক বাস্তবায়নে পরামর্শ দেওয়ার জন্য নিযুক্ত হতে পারবেন।
জানা গেছে, অধিবেশন কক্ষকে পুরোপুরি ডিজিটাল করার প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক সংসদ সদস্যদের আসনে ল্যাপটপ বসানো হবে। চালু করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং ও ই-বিল পদ্ধতি। সব সংসদীয় বির্তক ডাটা-বেজে সংরক্ষণ এবং প্রশ্নোত্তর, নোটিশসহ দিনের কার্যসূচি সব কিছুই থাকবে ল্যাপটপে। জনসংযোগসহ একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রত্যেক সংসদ সদস্যদের জন্য সংসদ ওয়েবসাইটে আলাদা ব্লগ তৈরি করা হবে।
সূত্র জানায়, সংরক্ষিত নারী আসনের ৫০জন সহ মোট ৩৫০জন সংসদ সদস্যের টেবিলেই বসানো হবে ল্যাপটপ। এর জন্য টেবিলের কাঠামোয় পরিবর্তন আনা হবে। টেবিলে ল্যাপটপটি এমনভাবে স্থাপন করা হবে যাতে অন্যসময় তা টেবিলের ভেতরে একটি ছক কাটা বাক্সে থাকতে পারে। সংসদ সদস্যরা সুইচ টেপা মাত্র ল্যাপটপটি উপরে উঠে আসবে। কক্ষে ওয়াই-ফাই সংযোগ থাকবে। ফলে সংসদ সদস্যরা অধিবেশন চলাকালীন পুরো সময়টায় ইন্টারনেটে থাকতে পারবেন।
এদিকে, প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিট্যাল কক্ষ বা ডিজিট্যাল প্লেনারি চেম্বার করার জন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং ও ই-বিল পদ্ধতি চালু করা হবে। সংসদের বিগত দিনের সমস্ত বির্তক একটি শক্তিশালী ডাটা-বেজে সংরক্ষণ করা হবে। যাতে কোনো সংসদ সদস্য যে কোনো সময় অধিবেশন কক্ষে বসেই পুরানো বিতর্কগুলো দেখে নিতে পারেন।