ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন আগামীকাল। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছে কমিশন। আমরা আশা করি, এ নির্বাচন দেশের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
গতকাল রাতে শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচার। এখন শুধু অপেক্ষা ভোটের। নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল রাত থেকে রাজধানীতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ হয়েছে। আজ রাত ১২টার পর থেকে বন্ধ হবে সব ধরনের যান চলাচল।
এ নির্বাচনে ২২ প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ১৩ জন দেশি পর্যবেক্ষক দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের মধ্যে উত্তরে ৫০৩ জন, দক্ষিণে ৪৫৭ জন এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ৫৩ জন পর্যবেক্ষণ করবেন। বিদেশি সংস্থার পর্যবেক্ষক থাকবেন ৭৪ জন। তাদের মধ্যে ৪৬ বিদেশি এবং ২৮ বাংলাদেশি নাগরিক।
দুজন রিটার্নিং অফিসার ৪৩ সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা করবেন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অর্ধলক্ষাধিক কর্মকর্তা।
জানা গেছে, প্রতি ভোটকেন্দ্রে ১ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, প্রতি ভোটকক্ষে ১ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ২ জন পোলিং অফিসার দায়িত্বে থাকবেন। দুই সিটিতে সব মিলিয়ে ২ হাজার ৪৬৮ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ১৪ হাজার ৪৩৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ২৮ হাজার ৮৬৮ জন পোলিং কর্মকর্তা থাকবেন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবস্থাপনায় সশস্ত্র বাহিনীর ৫ হাজার ২৮০ জন সদস্য থাকবেন। তারা শুধু ইভিএম পরিচালনার দায়িত্বে পালন করবেন।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই সিটির ভোটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অর্ধলক্ষ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুলিশ ও আনসার-ভিডিপির সদস্য থাকবেন ৪১ হাজার ৯৫৬ জন। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৬ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে সদস্য মোতায়েন থাকবেন। পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত ১২৯টি মোবাইল ফোর্সে থাকবেন ১ হাজার ২৯০ জন, ৪৩টি স্ট্রাইকিং ফোর্সে থাকবেন ৪৩০ জন, রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্সে থাকবেন ৫২০ জন। দুই সিটিতে র্যাবের টিম থাকবে ১৩০টি। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে টিম দায়িত্ব পালন করবে। এসব টিমে গড়ে ১১ জন করে মোট ১ হাজার ৪৩০ জন র্যাব সদস্য থাকবেন। দুই সিটিতে র্যাবের ১০টি রিজার্ভ টিম থাকবে, তাতে ১১০ জন সদস্য থাকবেন। রিজার্ভসহ দুই সিটিতে ৭৫ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। প্রতি প্লাটুনে গড়ে ৩০ জন করে মোট ২ হাজার ২৫০ জন বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবেন।
৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী অপরাধ দমন ও সংক্ষিপ্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুই সিটিতে থাকবেন ১৭২ জন নির্বাহী এবং ৬৪ জন বিচারিক হাকিম।
ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ৪৭০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৩৩৪ জন। বাকি ১৩৬ জনের অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। যাচাইকালে অনেকের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। বর্তমানে মেয়র পদে ৬ জন, ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের বিপরীতে ২৫১ জন কাউন্সিলর ও ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭৭ জন নারী কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন।
অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ৪১৬ জন। এ সিটিতে ৭ জন মেয়র পদে মনোনয়পত্র দাখিল করেছেন। তারা সবাই চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তবে কমেছে সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সংখ্যা। এ সিটিতে ৭৫টি ওয়ার্ডে ৪৬০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৩২৭ জন ও সংরক্ষিত ২৫টি ওয়ার্ডে ১০২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও ভোটের মাঠে রয়েছেন ৮২ জন।
ঢাকা দুই সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, দুই সিটিতে মোট ভোটার ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮ জন ও নারী ভোটার ২৬ লাখ ২০ হাজার ৪৫৯ জন। ঢাকা উত্তর সিটিতে মোট ভোটার ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ জন ও নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬জন। ঢাকা দক্ষিণে ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ জন ও নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন।
ঢাকার দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্র ও ১৪ হাজার ৪৪৫টি ভোটকক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ১ হাজার ৩১৮টি ভোটকেন্দ্র ও ৭ হাজার ৮৫৭টি ভোটকক্ষ রয়েছে। দক্ষিণ সিটিতে ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্র ও ৬ হাজার ৫৮৮টি ভোটকক্ষ রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ৬৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং দক্ষিণে ৬৪৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব ভোটকেন্দ্র অবস্থিত।