লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ইকোনমিস্টে গত ২৬ মে প্রকাশিত দুটি নিবন্ধের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ । শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ প্রতিবাদ জানায়।
এতে বলা হয়, বলা হয়, ‘গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামরত ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আপনাদের বহুল প্রচারিত সাময়িকীতে প্রকাশিত নিবন্ধে বস্তুনিষ্ঠতা ও মানের ক্রমাবনতি ঘটছে দেখে আমরা ব্যথিত।’ খবর বাসসের।
প্রতিবাদে বলা হয়, দৃশ্যত, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দৃঢ় জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গুজব নির্ভর সম্পূর্ণ ভুল ও অসত্য তথ্যে পরিপূর্ণ এ দু’টি প্রতিবেদন পরিবেশিত হয়েছে। ইকোনমিস্টে প্রকাশিত এসব প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়েছে এবং জাতীয় ইস্যু সমাধানে নির্লজ্যভাবে অযাচিত বিদেশি হস্তক্ষেপের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, পত্রিকায় `পলিটিক্স ইন বাংলাদেশ: ব্যাকড অ্যাবাউট : দ্য প্রাইম মিনিস্টার সেটস দ্য কান্ট্রি অন ডেঞ্জারাস পাথ` এবং “বাংলাদেশ`স টক্সিক পলিটিক্স : হ্যালো দিলি্ল : ইট ইজ আপ টু ইন্ডিয়া টু ট্রাই টু স্টপ শেখ হাসিনা রানিং বাংলাদেশ” শীর্ষক পক্ষপাতদুষ্ট নিবন্ধ দুটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিপজ্জনক পথে নিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অথচ গত তিন বছরে বাংলাদেশের অর্জনকে সম্পূর্ণভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে।
প্রতিবাদে বলা হয়, এখানে সফলতার পুরো তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে বাংলাদেশ মনে করে, বিশেষ করে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ ধরনের নিবন্ধ প্রকাশের আগে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদককে কিছু খোঁজখবর নেওয়া ও অনুসন্ধান করা উচিত ছিল। তাদের জানা উচিত, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি গরিব মুসলমান নয়।
প্রতিবাদলিপিতে জাতিসংঘ মহাসচিব কেন বাংলাদেশকে একটি মডেল দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন সে বিষয়ে এবং বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য ইকোনমিস্ট রিপোর্টারদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
প্রতিবাদে আরও বলা হয়, এ ধরনের বক্তব্য থেকে ইকোনমিস্টের রিপোর্টাররা অলীক কাহিনী ও কল্পনার ওপর ভিত্তি করে নেতিবাচক নিবন্ধ লেখার পরিবর্তে বরং বাংলাদেশের ওপর গবেষণা করার মতো যথেষ্ট বিষয় পাবেন। কারণ জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আজ এ দেশ একটা দৃঢ় ভিত্তির ওপর দণ্ডায়মান।
প্রতিবাদে বলা হয়, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিকদের উপর হত্যাকাণ্ড ও আক্রমণের জন্য কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই সরকারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তা ইকোনমিস্ট-এর বিদ্বেষ প্রসূত এবং দুর্বল সাংবাদিকতা।
এতে বলা হয়, ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে কোন প্রমাণ ছাড়াই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ‘বিএনপি এবং তার ইসলামী মিত্রদের অপদস্থ করার’ প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সাময়িকীটির প্রতিশ্র“তির মাত্রা ! প্রকাশ পেয়েছে। এর মাধ্যমে আপনাদের প্রতিবেদক শুধু ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লাখ বাঙালীর আত্মবিসর্জনকেই অসম্মান করা হয়নি, পাশাপাশি চার দশক ধরে বিচারের প্রতীক্ষায় থাকা তাদের পরিবারের সদস্যদেরকেও অপমাণ করা হয়েছে।’
সরকার পূনর্ব্যক্ত করতে চায় যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মকাণ্ডে এবং অন্যান্য আদালতের কার্যক্রমে সরকার হস্তক্ষেপ করে না।
প্রতিবাদে শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘ এমডিজি পুরস্কার প্রদান হচ্ছে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করা এবং গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অনেক দৃষ্টান্তের একটি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ইকোনমিস্টের রিপোর্টাররা আরও জেনে থাকতে পারেন যে, বর্তমান সরকারের আমলেই আমরা সফলভাবে আমাদের সমুদ্রসীমার অধিকার পেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি মামলা করি। এটি কেবল বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে বিপুল সামুদ্রিক সম্পদ প্রাপ্তির সুযোগই করে দেয়নি, পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের দুয়ারও খুলে দিয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে বলা হয়, সরকার স্পষ্টভাবে আরও জানাতে চায়, গ্রামীণ ব্যাংক একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকার যার শেয়ারের স্বত্বাধিকারী। বাংলাদেশ সরকার গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, এটা সবচেয়ে মজার ব্যাপার যে, ইকোনমিস্ট সরকারগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে নিবেদিত, অথচ এনজিওগুলোর দায়বদ্ধতার বিরোধী।
সরকার সুশীল সমাজ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দৃঢ় সমর্থক। বাংলাদেশে এনজিওগুলোর কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে পৃথক একটি `এনজিও বিষয়ক ব্যুরো` কাজ করছে। বাংলাদেশ সরকার বিশ্বাস করে, এনজিওগুলোও উন্নয়নের অংশীদার।