আ.লীগের কার্যনির্বাহী সভা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে

আ.লীগের কার্যনির্বাহী সভা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে

৮ জুন শুক্রবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা। সন্ধ্যা ৬টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।দলীয় সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন। ক্ষমতাসীন দলের কার্যনির্বাহী কমিটির এ সভায় আগামী নির্বাচন, রাজনৈতিক দলের সংলাপ, নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পদ্ধতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধী দল বিএনপির লাগাতার আন্দোলন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা, দলের নির্বাচন প্রস্তুতি, সহযোগী সংগঠনের কাউন্সিলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

দীর্ঘদিন পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের এ সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গত ৬ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ সভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আদালতের রায়ে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়ে যাওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচণ অনুষ্ঠানের বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে।

বর্তমান মহাজোট সরকার নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে কাজ করবে বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের কোনো কোনো নেতার বক্তব্যে অনেকটাই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার দাবি নাকচ করে দিয়েছে। তবে নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা কেমন হবে তা এখনই নির্ধারণের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে ১৪ দলের শরিকরা।

গত ২৬ মে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময় ৫ হাজার ১৭৫টি নির্বাচন হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়েছে।’

এই সরকারের অধীনে সব নির্বাচনই যখন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে, তখন আগামী জাতীয় নির্বাচনও অবশ্যই সুষ্ঠু হবে।

সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করতে পারে এটা প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে।

এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের বিষয়েও এখনই আগ্রহী নয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের এখনো দেড় বছর সময় হাতে রয়েছে। সংলাপের প্রক্রিয়া শুরুর জন্য আরো কিছু সময় নিতে চায় দলটি।

তবে ২৭ মে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সভায় জোটের শরিকরা অন্তর্বর্তী সরকারের পদ্ধতি বা রূপরেখা কি হবে তা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে এখনই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ শুরু করারও দাবি জানিয়েছে তারা। এ বিষয়গুলো নিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছেন।

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির শুক্রবারের সভায় ১৪ দলের শরিকদের বক্তব্য অবহিত করা হবে। সভায় এসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসহ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৪ দলের শরিকদের বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনরত প্রধান বিরোধী দল বিএনপির আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পথে। আগামী ১১ জুন ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি।

বিরোধী দলের আগামী দিনের আন্দোলন এবং তা মোকাবেলায় ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কৌশল নিয়েও এ সভায় আলোচনা হতে পারে।

এদিকে জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকলেও আওয়ামী লীগ আগাম প্রস্তুতির কথা চিন্তা ভাবনা করেছে। এরই মধ্যে প্রস্তুতির কাজও শুরু হয়েছে।

বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে গঠিত আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গত ১ এপ্রিল থেকে দলীয় নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এছাড়া বৈঠকে দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করারও সম্ভাবনা রয়েছে।

ছাত্র লীগ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রতিটি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দীর্ঘ দিন আগেই পেরিয়ে গেছে। বছরের পর বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে এসব সংগঠন।

প্রত্যেক সংগঠনের গঠনতন্ত্রে প্রতি তিন বছর পর পর জাতীয় সম্মেলন করার বিধান থাকলেও কোনো সংগঠনই নির্ধারিত সময়ের পর সম্মেলন করতে পারেনি।

দলের ৭ সহযোগী সংগঠন হলো যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগ ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ।

তিন ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাগ্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ।

২০০০ সালের ১১ মার্চ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, ২০০৩ সালের ২৫ জানুয়ারি যুবলীগ, ওই বছরই ১২ জুলাই মহিলা আওয়ামী লীগ, ২৭ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ২৯ জুলাই কৃষক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

পরের বছর ২০০৪ সালের ১৫ মার্চ যুব মহিলা লীগ, জুনে জাতীয় শ্রমিক লীগ, ৮ আগস্ট তাঁতী লীগ, ৫ সেপ্টেম্বর স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।

এর মধ্যে শুধু গত বছর ১০ জুলাই ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়েছিলো ২০০৬ সালের ৪ এপ্রিল।

এ অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই এসব সংগঠনের জাতীয় কাউন্সিল দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে।

রাজনীতি