বিএনপি-জামায়াত কে কার ঘাড়ে

বিএনপি-জামায়াত কে কার ঘাড়ে

ক্যডারভিত্তিক রাজনৈতিকদল জামায়াতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে বিএনপি। আবার অনেকে মনে করছেন বিএনপির ঘাড়ে চেপে বসেছে জামায়াত। এ দলটি শুধু বিরোধী দলে থাকতেই নয়- ক্ষমতার ভাগাভাগিতেও প্রধান্য দেওয়া হয়েছে জামায়াতকে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতকে ভালাবাসার প্রতিদান দিয়েছে বিএনপি। ওই ক্যাবিনেটে জামায়াতের শীর্ষ দুই নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদীকে মন্ত্রী করা হয়। এ নিয়ে আজ এ প্রশ্ন অনেকের।

জামায়াতের সব আপদে-বিপদে পাশে থাকে বিএনপি। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত জামায়াত নেতাদের পক্ষে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশে বিবৃতি-বক্তব্য দিয়ে সাফাই গাইছেন।

এ কারণেই শাসক দলের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করছেন- বিএনপি যুদ্ধাপরাধের বিচার চাইছে না বলেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল নিয়ে নানা কথা বলছেন। জোট সরকারের মন্ত্রীরা এ অভিযোগ প্রকাশেই সভা সমাবেশে করছেন। জামায়াত নেতাদের মুক্তি চাওয়ায় তারা খালেদা জিয়ারও সমালোচনা করছেন ।

কেউ কেউ মনে করছেন- কবির কবিতাও হার মানছে জামায়াত ও বিএনপি সম্পর্ক দেখে। কবি ভাষায়- প্রেম শুধু কাছেই টানে না- দূরেও ঠেলে দেয়। কিন্তু একথা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বিএনপি জামায়াতের সম্পর্ক দেখে। মনে হচ্ছে- বড় প্রেম কাছেও টানে।

২০১০ সালে জামায়াতের আমীরসহ সিনিয়র নেতারা গ্রেপ্তার হলে বিএনপি বিভিন্ন কৌশলে তাদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান এবং মুক্তির দাবিও করেন। দেখা যাচ্ছে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার বা মামলা হলেই বিএনপি তাদের পাশে এসে দাড়ায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সম্প্রতি এক সমাবেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল বাতিল দাবি করেছেন। এ নিয়ে সরকারের মধ্য থেকে কঠোর প্রতিবাদ আসে।

অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে পক্ষপাত দুষ্টের অভিযোগ এনে কারারুদ্ধ দেলোয়ার হোসেন সাঈদী এ ট্রাইব্যুনাল বাতিলের আবেদন করেন। তার আবেদনের শুনানিতে অংশ নেন বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীরা। অবশ্য আবেদনটি খারিজ করে দেয় আদালত। এ মামলায় বিপুল সংখ্যক অ্যাডভোকেট অংশ নেয়ায় প্রমাণিত হয় বিএনপি জামায়াত নেতাদের বিচার চায় না।

গত ১১ ডিসেম্বর জামায়াতের ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদসহ ৭ নেতাকে আদালত থেকে আটক করে জেল হাজতে পাঠালে এদিন সন্ধ্যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মুক্তি দাবি করেন।

এদিন সন্ধ্যায় বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে খালেদা জিয়া প্রশ্ন তুলেছেন। ঐ সাক্ষাৎকারে তিনি বিচারককে বির্তকিত বলেও মন্তব্য করেছেন।

জামায়াতের পক্ষে প্রকাশ্য বিএনপির সাফাইয়ের কারণে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্টরাই শুধু নয়, ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষও। তাদের বিএনপি কি শেষ পর্যন্ত জামায়াতের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। যে কারণে দলে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে অনেক মুক্তিযোদ্ধা নেতা।

অবশ্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর (অব:) হাফিজউদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। এ দলটি শহীদ রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের দল। দলটি এখন অনেক বড় বিধায় কারও উপর নির্ভরশীল হয়ে রাজনীতি করার প্রয়োজন পড়ে না। তবে সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার করার জন্যই জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠন করছে বিএনপি।

তিনি বলেন, বিএনপি যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে আপোষহীন। তবে বিরোধী দলকে হয়রানী করার জন্য কোন গোষ্টীর স্বার্থে বিচার হোক এটা বিএনপি চায় না।
মেজর হাফিজ আওয়ামী লীগে যেসব যুদ্ধাপরাধী আছে তাদেরও গ্রেপ্তার দাবি জানান।

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বুধবার দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি জামায়াতের ওপর নির্ভরশীল এটা ঠিক নয়। তিনি বলেন, জামায়াত একটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল, এ দলটির সঙ্গে ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জোট বেধেঁছিল। বিএনপি কিন্তু ৯১ সালে জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠন ছাড়াই নির্বাচন করেছে। তবে ২০০১ সালে আমরা রাজনৈতিক জোট গঠন করি। ঐ জোটে চারটি দলের একটি জামায়াত।

রাজনীতি