আফ্রিকা মহাদেশে চাষাবাদ শুরু করেছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে তাঞ্জানিয়া, উগান্ডা, নাইজেরিয়া, জাম্বিয়া ও গাম্বিয়ায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা চাষ যোগ্য জমি কিনে ফসল উৎপাদন শুরু করেছেন।
আগামী এক বছরের মধ্যে ব্যবসায়ীরা উৎপন্ন শস্য বাজারজাত করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফ্রিকা উইংয়ের মহাপরিচালক আল্লামা সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান নিটল নিলয় গ্রুপ, ভাটি বাংলা এগ্রোটেক এবং আইপিএসএসএল কোম্পানি জমি কেনার বিষয়ে এগিয়ে রয়েছে।
সূত্র জানায়, জমি কেনার পরই সে দেশগুলোতে বিনিয়োগ করতে যাবতীয় সহযোগিতা চেয়ে গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছেন ব্যবসায়ীরা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ভাটি বাংলা এগ্রোটেকের চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান জাম্বিয়ায় ২০ হাজার হেক্টর এবং তাঞ্জানিয়ায় ১০ হাজার হেক্টর আবাদী জমি কিনেছেন। তিনি ও মিজানুর রহমান আজাদ নামে একজন ব্যবসায়ী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন এ বিষয়ে।
তিনি জানান, ইতিমধ্যে আফ্রিকায় জমি কেনার জন্য আরো প্রায় ৫০ জন ব্যবসায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছেন। তবে তিনটি কোম্পানি এগিয়ে রয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ওই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে ওই দেশগুলোতে জমি কেনার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করতে যাওয়া নিয়ে আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, উল্লেখিত দু’জন ব্যবসায়ীর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আফ্রিকায় জমি লিজ নিতে ও চাষ করতে কি করণীয়, তা জানতে চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ চাওয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে সুপারিশ তৈরি করেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক আহ্বান, ফ্রেম ওয়ার্ক ও গাইড লাইন তৈরি করা, টার্ম ও কন্ডিশন তৈরি, আগ্রহীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক, ব্যাংক, এনবিআর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে খুব দ্রæত সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক চুক্তি ও প্রধানমন্ত্রীর সফরের পরিকল্পনা করা এবং বিদেশে বিনিয়োগে আইন করা।
ওই কর্মকর্তা জানান, আফ্রিকার জমি খুবই উর্বর। সেখানে ধান,গম, কোকো, তুলা ও কফি ছাড়াও মাছ চাষ এবং গবাদি পশু লালন-পালনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে আফ্রিকার এ দেশগুলোতে কনসাল জেনারেল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ২০১০ সালের ২৪ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন অফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের দেশ ঘানা, লাইবেরিয়া, সেনেগাল, আইভরিকোস্ট ও কেনিয়া সফর করে। এ দলটিরই ২০১১ সালে নামিবিয়া, বতসোয়ানা, অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক ও সোয়াজিল্যান্ডে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লিবিয়ায় সংকট দেখা দেওয়ায় তা বাতিল করা হয়।
সূত্র জানায়, আফ্রিকা মহাদেশে রয়েছে, অনেক চাষযোগ্য পতিত জমি। ওই দেশগুলোতে বিঘা প্রতি মাত্র ২১ সেন্ট (১৪ টাকা) দিয়ে এসব জমি লিজ নেওয়া যায়। আফ্রিকার এ সকল দেশে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংসহ বিনিয়োগের যে সম্ভাবনা রয়েছে, তা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বিদেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট আইনের অভাব। এজন্য আইন সংশোধন করার প্রয়োজন হবে বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উইংয়ের ওই কর্মকর্তা।
তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ বিদেশ থেকে কেবল অর্থ গ্রহণ করে, পাঠায় না। আফ্রিকায় চাষাবাদ করতে হলে বাংলাদেশ থেকে অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। বর্তমানে তা আইনসিদ্ধ নয়।