১৪ ডিসেম্বর। পৃথিবী অভিযাত্রার ইতিহাসে একটি অনন্য দিন। আজ থেকে একশ বছর আগে ১৯১১ সালের এই দিনে দুর্গম ও অগম্য স্থান দক্ষিণ মেরু (সাউথ পোল) হিসেবে পরিচিত পৃথিবীর সর্বদক্ষিণের প্রান্তবিন্দুতে প্রথম পা রাখে মানুষ।
নরওয়ের দুঃসাহসী অভিযাত্রী রোয়াল্ড অ্যামুন্ডসেন এবং তার দল ১৯১১ সালের এই দিনে দক্ষিণ মেরুতে প্রথম মানুষ হিসেবে পা রাখেন।
ঐতিহাসিক এই দিনটিকে স্মরণ করার জন্য সাউথ পোলে আয়োজিত একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিশ্বের অনেক বিজ্ঞানী এবং অভিযাত্রী।
অনুষ্ঠানে অ্যামুন্ডসেন এবং তার দলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, অ্যামুন্ডসেনের সাউথ পোলে পা রাখার ঘটনা মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি অনন্য অর্জন।
সাউথ পোলে অনুষ্ঠিত বুধবারের এই অনুষ্ঠানে আরও অনেক অভিযাত্রীরই অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও, খারাপ আবহাওয়ার কারণে তাদের অনেকেই অনুষ্ঠানস্থলে সময়মত পৌছাঁতে পারেননি।
একই অনুষ্ঠানে আরেক বিখ্যাত ব্রিটিশ অভিযাত্রী রবার্ট স্কটকেও শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করা হয়। রবার্ট স্কট এবং অ্যামুন্ডসেন প্রায় একই সময় সাউথ পোল অভিযানে বের হন । কিন্তু অ্যামুন্ডসেন রর্বাট স্কটের আগেই সাউথ পোলে পৌছাঁন। অ্যামুন্ডসেনের সাউথ পোলে পৌছাঁর অল্প কিছু দিন পর ১৯১২ সালের ১৭ জানুয়ারিতে তিনি এবং তার দল সাউথ পোলে পৌছাঁন। স্কট ও তার দলও অনুরুপ কৃতিত্ব এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শনের দাবিদার বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দূর্ভাগ্যজনকভাবে দক্ষিণ মেরু থেকে ফেরার অভিযানে স্কট তার চার সহযোগীসহ ভয়াবহ মেরুঝড়ে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
দক্ষিণ মেরুর সাউথপোলে যুক্তরাষ্ট্রের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ক্যাম্প ‘অ্যামুন্ডসেন-স্কট’ এ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী অ্যামুন্ডসেনের একটি বরফে নির্মিত প্রতিকৃতিও উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে অ্যামুন্ডসেনের কৃতিত্বকে স্মরণ করে তিনি বলেন, দক্ষিণ মেরুতে অ্যামুন্ডসেনের অভিযানই জাতি হিসেবে নরওয়েবাসীকে একটি নতুন জাতীয়তাবোধ নির্মাণে উদ্বুব্ধ করে।
১৯১১ সালে অ্যামুন্ডসেনের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখার মাত্র ছয় বছর আগে নরওয়ে সুইডেনের কাছ থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। সুইডেন এবং নরওয়ে এর আগে দীর্ঘদিন একই ইউনিয়নের অধীনে ছিল।
দক্ষিণ মেরু অভিযাত্রায় অ্যামুন্ডসেনের সহযোগী ছিলেন তার স্বদেশী অপর চার অভিযাত্রী ওলাভ জাল্যান্ড, হেলমার হ্যানসেন, সভেরে হ্যাসেল এবং অস্কার উইসটিং। অ্যামুন্ডসেনের মতোই তাদের একই ধরনের গুণাবলীর অধিকারী হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি নতুন জাতিকে পরিচিত হতে হলে সেই জাতির এই রকম গুণাবলীর মানুষের প্রয়োজন হয়।