“IT is deeply unfortunate that the trials of alleged war criminals in Bangladesh, 30 years after the war of liberation, have been mired in controversy. There are two levels at which this has occurred.“
আঁতকে ওঠার মতো ব্যাপার। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ নাকি হয়েছিল আজ থেকে ৩০ বছর আগে! হ্যাঁ, একথা লিখেছে পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডন’। ডন-এর মতো দেশটির সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিকটি আজ বুধবার ১৪ ডিসেম্বর এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছে ওপিনিয়ন কলামে ‘দ্য সেকেন্ড পার্টিশন’ নামের একটি লেখা প্রকাশ করে।
উপরের উদ্ধৃতিটি সেই অভিমতের সূচনা অনুচ্ছেদ। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার কলংকময় কালো দিনটিতে ‘৩০ বছর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ’ হওয়ার তথ্য ছাপিয়ে ‘ডন’ যা করেছে তাকে হাস্যকর না বলে বলা উচিত বালখিল্যতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪০ বছরপূর্তি পাকিস্তানিদের জন্য মোটেই সুখকর নয় ‘ডন’ পত্রিকার এই কাণ্ডই তা প্রমাণ করে। অথচ একাত্তর (১৯৭১) সালকে ভুলে গিয়ে কলমের এক খোঁচায় তাকে একাশি(১৯৮১) বানিয়ে ‘ডন‘ পত্রিকা সেই বাংলা প্রবাদটিকেই মনে করিয়ে দিল: ‘গরু হারালে গো মা এমনই হয়’!
পূর্ব পাকিস্তান নামের ডিমপাড়া রাজহংসটিকে হারিয়ে পাকিস্তানি এলিটদের মনে যে চোট লেগেছিল তা এখনও পূর্ণিমা-অমাবশ্যায় তাদের কাতর করে তা ‘ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীত’ গাওয়াতেই স্পষ্ট।
এখানেই শেষ নয়। Mahir Ali নামের এই কলাম লেখক ‘‘The second partition’’ নামের অভিমতটি কেন লিখেছেন সে উদ্দেশ্য বুঝতে রকেট বিজ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই।
তিনি বলতে চাচ্ছেন, বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা বিতর্কবিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে তিনি রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগও তুলেছেন: On the one hand, there is the charge that the court proceedings are motivated by partisan political considerations, with those in the dock being members or allies of the opposition Bangladesh Nationalist Party and its allies.
লেখাটির অন্যত্র তিনি বলেছেন, ৭১ সালে বাঙালিরা উর্দুভাষী বিহারিদের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছিল যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেয়নি। তার ভাষায়: On the other, it is claimed that the Bengali nationalists who participated in reprisals against non-Bengalis — mainly Biharis — in 1971 have not been called to account.
ইতিহাসের দোহাই দিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে তিনি আরও বলতে চেয়েছেন, ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে দেখা গেছে বিদেশি দখলদার বাহিনীর যারা দালালি করে পরিবর্তিত রাজনৈতিক অবস্থায় এসে তারা সুবিচার পায় না। তার ভাষায়: In the second context, it could of course be pointed out that, historically, in countries under foreign military occupation, perceived collaborators have often fared poorly at the hands of single-minded resistance movements.
ইতিহাসের খরবালুতে মুখ লুকিয়ে তিনি ইতিহাসের যে ছবি তিনি দেখতে ও দেখাতে চাইছেন সে-ও এক বালখিল্যতা।
আবার আরেক জায়গায় তিনি লিখেছেন:উর্দুভাষীদের নাকি ঢালাওভাবে দালাল হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে বাংলাদেশে। কিন্তু উর্দুভাষী বিহারিরা বাংলাদেশে কী করেছিল সে ব্যাপারে তিনি হিন্দুকুশ পর্বতের চেয়েও নীরব। যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আল বদর আল শামস আর উর্দুভাষী বিহারিদের জন্য তার দরদ উথলে উঠেছে। কিন্তু তার দেশ পাকিস্তান কিন্তু সে বিহারিদের ফিরিয়ে নেবার বেলায় একদমই চুপ। আশির দশকে রাবেতা নামের সংগঠনটি এক্ষেত্রে অনেক দৌড়ঝাঁপ করেও ইসলামাবাদেও মন গলাতে পারেনি। সে অন্য প্রশ্ন।
তিনি অপাত্রে তার আলগা দরদ দেখাতে গিয়ে আটকে পড়েছেন স্ববিরোধিতার জালে। লেখাটির ছত্রে ছত্রে তার চিহ্ন ছড়ানো।
পাকিস্তানি জাতির পরাজয়ের তিক্ত স্মৃতি ‘দ্য ডন’ এর মতো পত্রিকাকেও কত হাস্যকর করে তুলতে পারে তা এই ভাড়াটে কলামিস্ট নিয়োগের মধ্যেই স্পষ্ট। এখানে এত বড় ভুলটিও সম্পাদনা পর্যদের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। কিন্তু ইতিহাসের তেতো কুইনিনটিতে চিনির প্রলেপ দিয়ে ছেলের হাতের মোয়া বানিয়ে যেমন ইচ্ছে জনে জনে বিলানোর সুযোগ যে নেই। একাত্তরের পর থেকে পাকিস্তান আমেরিকার দেওয়া যে পরমাণ চিনির-প্রলেপ-দেওয়া বড়ি গিলেছে তা এক করে আরব সাগরে ছুড়ে ফেললে সাগরের স্রোতও রুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু পাকিস্তানের মতো দেশ এরই মধ্যে অকার্যকর রাষ্ট্র হওয়ার জন্য যেভাবে কাছাখোলা দৌড় শুরু করেছে তাতে করে তাকে কোরামিন ট্যাবলেট গেলালেও কাজ হবে কিনা সন্দেহ আছে। অতএব পাকি এলিট ও ‘ডন’ পত্রিকার তথাকথিত মহারথীদের জন্য বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের মাসে একটি নিখরচায় পরামর্শ: আয়নার সামনে দাঁড়ান।
কিন্তু নিজেদের আসল চেহারাটি দেখতে পাচ্ছেন? মাহির আলী সেটা দেখে আসার জন্য রাওয়ালপিণ্ডি ঘুরে আসতে পারেন। আশা করি ভ্রমণটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হবে।
লেখাটি শেষ করা যাক এক বিদেশি সাংবাদিকের পাকিস্তান সম্বন্ধে একটি কৌতূহলোদ্দীপক মন্তব্য উদ্ধৃত করে। তিনি পাকিস্তানি সেনাতন্ত্রের শোষনের যাঁতাকলে রাজধানী ইসলামাবাদের পাশের শহর রাওয়ালপিন্ডির হতদরিদ্র নোংরা মলিন চেহারা দেখে এসে মন্তব্য করেছিলেন: ইসলামাবাদ থেকে পাকিস্তানের দূরত্ব মাত্র চল্লিশ কিলোমিটার!