আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়াকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, `রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করবেন না, এতে ফল ভালো হবে না। গণতন্ত্র ও জনগণের প্রতি যদি আস্থা-বিশ্বাস থাকে, তাহলে ওই ভুল পথ পরিহার করুন।’
বুধবার রাতে ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিরোধী দলের নেত্রী সংসদে বাজেট উত্থাপনের আগেই বাজেট ভাবনা দিয়েছেন। এক সময় তত্ত্ববধায়ক সরকারকে তিনি অসাংবিধানিক সরকার বলেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নাম উচ্চারণ না করে তিনি বলেন, দুই বছর অসাংবিধানিক সরকার ছিল। একদিকে অসাংবিধানিক সরকার বলছেন, আরেকদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন।“
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা দেশের উন্নয়ন করছি। গরিব মানুষের উন্নয়ন হচ্ছে। এটাই ওনার ভালো লাগছে না। তাই ওনার মনে এত যাতনা। ক্ষমতায় থাকলে আরো লুটপাট করতে পারতেন, আরো টাকা বানাতে পারতেন, তাই বাজেট ভাবনার নামে তিনি মনের যাতনা প্রকাশ করেছেন।“
বিরোধী দলের নেতার বাজেট ভাবনার কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “সংসদে বাজেট উপস্থাপনের আগেই বিরোধী দলের নেতা দেখলাম বাজেট ভাবনা জানিয়েছেন।”
এ সময় প্রধানমন্ত্রী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সুরে (রবীন্দ্র সংগীতের একটি লাইন) “সখি ভাবনা কাহাকে বলে, সখি যাতনা কাহাকে বলে’ তুলে ধরে বলেন, বাজেট ভাবনার মাধ্যমে উনি (খালেদা) মনের যাতনা প্রকাশ করেছেন। কেন এই যাতনা।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সংসদে না গিয়ে বিরোধী দলের নেত্রী বাজেট ভাবনা জানালেন। তিনি সংসদে আসেন না। শুধু মেয়াদ শেষে পদ রক্ষার জন্য আসেন। এর আগে তিনি সংসদে গিয়ে টানা ১ ঘণ্টা ৫৭ মিনিট বক্তব্য দিলেন। তারপর বললেন সংসদে আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না। কত সত্যবাদী তিনি। সংসদে না এসে বাজেট উপস্থাপন না করার আগেই উনি বাজেটের সমালোচনা করলেন। কত টাকার বাজেট আসছে, কি আসছে সে তথ্য উনি আগেই জেনে গেছেন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তিনি বাজেটকে উচ্চাবিলাসী বলেছেন। আমরা তো উচ্চ বিলাসীই। আমরা মানুষকে উন্নত জীবন দিতে চাই, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ করে দিতে চাই, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাই। কিন্তু এতে উনার যাতনা কেন, উনি এতো জ্বলছেন কেন। তিনি অর্থ পাচারের কথা বলেছেন। ক্ষমতায় থেকে তিনিই তো বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। তার ছেলেরা পাচার করেছেন। তার দলের লোকেরা পাচার করেছেন। এফবিআই এসে সাক্ষি দিয়ে গেছে।”
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “বিরোধী দলের নেতা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সমালোচনা করেছেন। জনগণের উন্নয়নের জন্য যে কর্মসূচি সেটাই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় রাস্তা-ঘাট উন্নয়ন হবে, এই উন্নয়নের সুবিধা পাবে কে, দেশের মানুষ। দেশের উন্নয়ন দেশের মানুষের উন্নয়ন উনার জন্য যাতনা। উনার যাতনা ক্ষমতায় থাকলে আরো কত টাকা বানাতে পারতেন, সেটা পারবেন না এটাই উনার যাতনা।”
তিনি বলেন, “বিশ্ব মন্দার মধ্যেও আমরা ধাক্কা সামাল দিচ্ছি, কৃষককে ভর্তুকি দিচ্ছি, শিক্ষার মান উন্নত করেছি, এটার উনার পছন্দ হচ্ছে না। কৃষকের ভর্তুকি উনার পছন্দ না। কারণ কৃষক সার চাইতে গেলে উনি গুলি করে ১৮ জন কৃষক মেরেছেন। বিরোধী দলের নেতা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন। অথচ তিনি ক্ষমতায় থেকে কালো টাকা বানিয়েছেন। জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছেন। নিজে দুর্নীতি করেছেন, পুত্ররা দুর্নীতি করেছেন। প্রতি দিন বস্তা বস্তা টাকা যেত হাওয়া ভবনে। আমরা তার খেসারত দিচ্ছি, তার ধকল আমাদের পোহাতে হচ্ছে।”
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আরো উল্লেখ করেন, “আমরা বেতন বৃদ্ধি করেছি, মানুষের আয় বাড়িয়েছি, চালের দাম কমিয়েছি। ওএমএস-এর মাধ্যমে ২৪ টাকায় চাল বিক্রি হচ্ছে। আমরা যে চাল প্রতি কেজি ১০টাকায় রেখে গিয়েছিলাম। সেই চালের দাম উনি ৪০ টাকা করে গিয়েছিলেন। আমরা যা দিচ্ছি, মানুষের জন্য দিচ্ছি। কিন্তু উনার যাতনাটা কোথায় সেটা দেশবাসীর কাছে জবাব দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “বাজেট ভাবনায় উনি অভিন্ন নদীর পানির কথা বলেছেন। বাজেট ভাবনায় উনার পানির কথা মনে পড়লো অথচ ক্ষমতায় থাকাকালে দিল্লি গিয়ে তিনি গঙ্গার পানির হিস্যার কথা ভুলেই গিয়েছিলেন। আমরা গঙ্গার পানি এনেছি। টিপাইমুখে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা না করে কিছু হবে না। আমরা বলেছি বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করে করতে হবে। এতে ভারত রাজি হয়েছে। বাংলাদেশের দুইজন প্রতিনিধি দেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশের স্বার্থ এতোটুকু ক্ষুন্ন হবে না।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, “তারা বলেছিলেন আওয়ামী লীগ ৪০ বছরে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তারা এটা বলেছিলেন বলেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগের উপর জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা আছে। আওয়ামী লীগ জনগণকে দিতে আসে আর উনার আসেন নিতে।”
শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “জনগণের আওয়ামী লীগের প্রতি এই বিশ্বাস ও আস্থা রক্ষা করতে হবে।”
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, মতিয়া চৌধুরী, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, মাহবুব-উল-আলম হানিফ প্রমুখ।