‘ভবদহ এলাকার জলবদ্ধতা নিরসনে টিআরএম’র (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট-জোয়ারাধার) বিকল্প নেই’ বলে এক সময় যে কৃষকরা আন্দোলন করেছেন, তাদেরই একটি অংশ আজ এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।
যে আন্দোলন ছিল টিআরএম বাস্তবায়নের দাবিতে, আজ তা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিরোধমুখী। আন্দোলনের এই ইউটার্নের পেছনে রয়েছে নানামুখী সমীকরণ।
নেপথ্য কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ঘের মালিকদের অপতৎপরতা, সুবিধাভোগীদের ষড়যন্ত্র এবং জমির মালিক ও কৃষকদের হয়রানি। এই নেপথ্য কারণগুলোর সমষ্টি দানা বেঁধে যশোরের বিল কপালিয়ায় টিআরএম’র মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে স্থানীয়রা।
এর সূত্র ধরেই গত ২ জুন ভবদহের বিল কপালিয়ায় জোয়ারাধার (টিআরএম) প্রকল্পের সীমানা নির্ধারণ করতে এসে এলাকাবাসীর হামলার শিকার হন জাতীয় সংসদের হুইপ ও সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপি শেখ আব্দুল ওহাব, অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মালেকসহ অন্তত ৫০ জন।
এ সময় হামলাকারীরা পাউবোর তিনটি জিপ, তিনটি মোটরসাইকেল ও তিনটি নসিমন ভাংচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
টিআরএম বিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যে
যশোর-খুলনা অঞ্চলের দুঃখ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ‘ভবদহ’র জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে বছরের পর বছর ধরে আন্দোলন করেছে ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটি। এই কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ জানিয়েছেন, ভবদহ এলাকায় জোয়ারাধার (টিআরএম) প্রকল্পের কোনো বিকল্প নেই। টিআরএম না হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আবারও বিপর্যয় নেমে আসবে।
বিল কপালিয়ায় টিআরএম বিরোধী আন্দোলনের নেপথ্য কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে ইকবাল কবির জাহিদ জানান, স্থানীয় ঘের মালিকরা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কিছু গ্রামবাসীকে ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনে নামিয়েছে। আর পাউবো প্রতি অবিশ্বাস, ক্ষতিপূরণ পেতে বিলম্ব ও হয়রানি ইত্যাদি কারণ এই আন্দোলন দানা বাঁধতে সাহায্য করেছে।
বিল কপালিয়ার কৃষকদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ঠিকমত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের টাকা না দিয়ে বিলে টিআরএম চালু করতে যাচ্ছে। এ কারণে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। ইতিপূর্বে বিল খুকশিয়া ও বিল কেদারিয়ায় টিআরএম বাস্তবায়নের পর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যথাযথভাবে ক্ষতিপূরণ পাননি বলেও কৃষকদের অভিযোগ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বিল কপালিয়ায় জমির পরিমান ১ হাজার ১০০ হেক্টর। এরমধ্যে টিআরএম’র আওতায় আসবে ৭৫০ হেক্টর জমি। কিন্তু এই জমির অধিকাংশেই ঘের করে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালীরা। টিআরএম হলে সেখানে মাছ চাষ করা যাবে না। কারণ জোয়ারের পানি বিলে তোলা হবে, ভাটায় তা নামিয়ে দেওয়া হবে। ফলে ঘের আর থাকবে না।
বিল কপালিয়া এলাকা ঘুরে জানা গেছে, টিআরএম বিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যে রয়েছে ৪টি প্রধান কারণ। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিল কপালিয়ার ঘের মালিকদের বিরোধিতা।
টিআরএম বাস্তবায়ন হলে বিলে মাছের ঘের করার সুযোগ থাকবে না। দ্বিতীয়ত খাস ও অর্পিত সম্পত্তি দখল করে রাখা ব্যক্তিবর্গও টিআরএম’র বিরোধিতায় নেমেছেন। কারণ এই জমির বিপরীতে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ নেই।
এ দু’টি চক্র কৃষকদের বুঝিয়েছে, বিল খুকশিয়া ও বিল কেদারিয়ায় টিআরএমএ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতিপূরণের টাকা ঠিকমত পাননি। এখানেও পাউবো টিআরএম বাস্তবায়ন করে কৃষকদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেবে না। এ কারণে কিছু কৃষক শরিক হয়েছে টিআরএম বিরোধী আন্দোলনে। তাই অতীতের টিআরএম’র টাকা না পাওয়া এবং টাকা পেতে কৃষকের হয়রানি হওয়া উল্টো আন্দোলনের একটি কারণ।
বিল কাপালিয়ায় টিআরএম’র বিরোধিতাকারীদের মধ্যে অন্যতম বিএনপি নেতা নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুস সাদাত, কাপালিয়া গ্রামের পরিতোষ সরকার, পাঁচাকড়ি গ্রামের হরিচাঁদ মল্লিক ও বালিদাহ গ্রামের আব্দুল কাদের।
এদের মধ্যে নাজমুস সাদাতের বিলে কোনো ঘের নেই। তবে তার আত্মীয়-স্বজনের মাছের ঘের রয়েছে। এদের অনেকের জমি পড়েছে টিআরএম’র আওতায়। পরিতোষ সরকারের বিলে কোনো জমি নেই। মাছের ব্যবসা করেন তিনি। হরিচাঁদ মল্লিকের ৮ বিঘা জমি আছে। আর আব্দুল কাদেরের সামান্য জমি পড়েছে টিআরএম’র মধ্যে। মাছ চাষ ও ঘের ব্যবসা এদের বিরোধিতার কারণ।
অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, টিআরএম ছাড়া জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়ার বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। কিন্তু ভবদহ এলাকার নাজমুস সাদাতসহ স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এই বিরোধিতা করে এলাকাবাসীকে উত্তেজিত করে তুলছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নাজমুস সাদাত দাবি করেছেন, তার নিজস্ব কোনো মতামত নয়; এলাকাবাসীর দাবি, এই বিলে যেন টিআরএম না হয়। তিনি এলাকাবাসীর দাবিকে প্রাধান্য দিয়েছেন মাত্র।
এছাড়া টিআরএম’র পক্ষের লোকজনকে সংগঠিত করে প্রচারণা এবং জনমত গঠনে কাজে লাগাতেও ব্যর্থ হয়েছে পাউবো। এখানে তাদের কিছু লুকোচুরিও আছে বলে দাবি করেছেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালী।
রণজিৎ বাওয়ালী উল্লেখ করেন, এলাকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে খুব সহজেই টিআরএম বাস্তবায়ন সম্ভব। কারণ একসময় তারা এই জনগণকে বুঝিয়ে সংগঠিত করে টিআরএম’র পক্ষে আন্দোলন করেছেন।
তিনি জানান, পাউবো এই প্লাটফর্মগুলো ব্যবহার করতে চায়নি। কারণ এইসব প্রকল্প নিয়ে তাদের বিরুদ্ধেও অনেক লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। সরকার দলীয় হুইপ যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওহাব, যশোর-৫ আসনের সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতান এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা প্রকল্পটি নিয়ে লুকোচুরি করেছেন। তারা বাহুবলের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে, যা হিতে বিপরীত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কেশবপুরের বিল খুকশিয়ায় টিআরএম করার সময় কৃষকদের শস্য এবং মৎস্যের ক্ষতিপূরণ বাবদ একর প্রতি ১২ হাজার ৮২৫ টাকা দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে সব জিনিসের দাম বাড়ায় বিল কপালিয়ায় একর প্রতি কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে ৪৮ হাজার টাকা।
এই টাকা পাবেন প্রকৃত জমির মালিকরা। কিন্তু এই বিলে প্রায় ১০০ একর খাস জমি রয়েছে। অনেক কৃষক নিজস্ব জমির সঙ্গে এই খাস জমিও ভোগদখল করছেন। কাগজপত্র না থাকায় এই খাস জমির কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ নেই।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উদদেষ্টা ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, বিল কপালিয়ায় টিআরএম না হলে আবারও ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এখানে টিআরএম’র বিরোধিতার দু’টি কারণ থাকতে পারে। এর একটা কারণ বিল কপালিয়ায় প্রচুর খাস জমি রয়েছে। যা ঘের মালিকরা ব্যবহার করছে। সেখানে মাছ চাষ করছে। এছাড়া সরকার এখানে টিআরএম চালু করার আগে যারা দীর্ঘদিন ধরে ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে আন্দোলন করেছে, তাদের সঙ্গে বসেনি।
তিনি জানান, এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করেছে সরকার। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা গায়ের জোরে তা বাস্তবায়ন করতে গিয়েছে। কিন্তু এটা করার আগে স্থানীয় জনগণকে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে টিআরএম’এ উদ্বুদ্ধ করার দরকার ছিল।
তিনি অভিযোগ করেন, কেশবপুরের বিল খুকশিয়ায় টিআরএম চালু হলেও তার অনেক টাকা পায়নি কৃষকরা। সেই ভীতি কাজ করছে কৃষকদের মধ্যে। সে জন্য তারা বিশেষ মহলের কথায় বিশ্বাস করে আন্দোলন করছে।
তাছাড়া টিআরএম’র টাকা পেতে কৃষকদের হয়রানি করা হচ্ছে। দরিদ্র অনেক কৃষকের ব্যাংক একাউন্ট নেই। টিআরএম’র চেক পাওয়ার পর তা ব্যাংকে জমা দেওয়া, টাকা উঠানো এসব প্রক্রিয়া কৃষকদের কাছে জটিল মনে হয়েছে। তারা কোনো ঝামেলা ছাড়াই দ্রুত টাকা চায়।
স্থানীয়রা কেউ কেউ বলছেন, টিআরএম’র বিরোধিতাকারীরা বিভিন্ন সময় ঠিকাদারদের কাছ থেকে আর্থিক সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন। এবারও সুযোগ সুবিধা নেয়ার জন্য তারা গ্রামের মানুষদের নিয়ে আন্দোলন করছেন। কারণ এবার বিল কপালিয়ায় টিআরএম’র জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
তবে ভিন্ন মতও আছে। ভবদহ এলাকার পাঁচাকড়ি গ্রামের শওকত আলী জানান, টিআরএম হলে তাদের চাষবাস সব বন্ধ হয়ে যাবে। এ জন্য তারা এই প্রকল্প চান না বিধায় আন্দোলনে নেমেছেন।
কাপালিয়া গ্রামের রবিন সরকারের মতে, বিল খুকশিয়ায় তিন বছরের জন্য এই প্রকল্প করা হয়েছিল। ৭ বছর ধরে তা চলছে। এখানেও যে তিন বছরের বেশি চলবে না; তা তো কেউ বলতে পারছেন না।
অভয়নগরের কালিশাকুল গ্রামের দুলাল হালদার জানান, তিনি ৩২ শতক জমির বিপরীতে দু’বছরের ক্ষতিপূরণ ৩১ হাজার টাকা পেয়েছেন। তার মত আরও কয়েকজন কৃষকও এই ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রকল্পের জমির ক্ষতিপূরণ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জহুরুল হক জানিয়েছেন, জমির কাগজপত্র ঠিক থাকলে ক্ষতিপূরণ পেতে এক সপ্তাহের বেশি লাগছে না। তবে কৃষকদের আবেদনের হার খুব কম বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
যশোর পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমানের মতে, কৃষকদের দু’বছরের ক্ষতিপূরণের টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা তা পেতেও শুরু করেছেন। কিন্তু এই বিলের খাস ও অর্পিত সম্পত্তিরও ক্ষতিপূরণ চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা দেওয়া সম্ভব নয়।
সমস্যার শুরু যেভাবে
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ১৯৬২ সালে যশোর-খুলনা এলাকার ৫ উপজেলা যশোরের মণিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলার জলাভূমিতে লোনাপানির প্রবেশ ঠেকিয়ে সারা বছর ফসল ফলানোর প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
জলাভূমিকে কৃষিজমিতে পরিণত করার জন্য ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এলাকায় বহু পোল্ডার, বাঁধ ও স্লুইচগেট নির্মাণ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে যশোর ও খুলনা জেলার পাঁচটি উপজেলার সংযোগস্থল অভয়নগরের ভবদহে শ্রী নদীর ওপর নির্মিত হয় ভবদহ স্লুইচগেট।
এই শ্রী নদী দিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যশোর-খুলনা এলাকার ৫২টি বিলের পানি নিষ্কাষিত হতো। এই নদীতে স্লুইচগেট নির্মাণ করে নদীর লোনা পানি বিলগুলোতে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না। ফলে প্রথম দিকে বিলগুলোতে প্রচুর ফসল ফলতে শুরু করলো।
কিন্তু ৮০’র দশকে এসে শুরু হলো বিপত্তি। জোয়ারের পানি স্লুইচগেটে আটকা পড়ে যাওয়ায় জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি স্লুইচগেটের বাইরে জমে নদীর তলদেশ ভরাট হতে শুরু করলো।
নদীর তলদেশ উঁচু এবং বিলগুলো নিচু হয়ে যাওয়ায় বিলের পানি নদীতে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। বরং প্রবল বর্ষণে পানি নদী উপচে বিল ভাসিয়ে দিতে শুরু করলো। শুরু হলো জলাবদ্ধতার এক নতুন অধ্যায়। ১৯৮৪ সাল থেকে এই জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। পানিবন্দি হয়ে পড়ে অসংখ্য মানুষ।
পানি সরানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ভুক্তভোগী মানুষ। বছরের পর বছর এই আন্দোলন চলার একপর্যায়ে ১৯৯৪ সালে এসে আন্দোলনের মুখে তৎকালিন সরকার ২৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু করে খুলনা-যশোর নিষ্কাশন পুনর্বাসন প্রকল্প (কেজেডিআরপি) ।
২০০২ সালে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। এই প্রকল্পের আওতায় শ্রী-হরি-টেকা নদীর পলি অপসারণ, খাল খনন ও বিল কেদারিয়ায় জোয়ারাধার নির্মাণ করা হয়।
২০০৫ সালের অক্টোবরে টানা বর্ষণে পুনরায় পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এরপর ২০০৬ সালে চার দফা অতিবর্ষণে অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রাম তলিয়ে যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে চার লক্ষাধিক মানুষ।
পানি সরানোর দাবিতে ‘ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি’র নেতৃত্বে শুরু হয় অন্দোলন। তীব্র আন্দোলনের মুখে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ওই বছর শুরু হয় ৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্রী-হরি-টেকা নদী পুনর্খনন, পূর্ব বিল খুকশিয়ায় জোয়ারাধার চালু ও আমডাঙ্গা খাল সংস্কার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড আরও জানায়, জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি বিলের তলদেশে ফেলে বিল উঁচু করার পাশাপাশি নদীর নাব্যতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০০৬ সালের ২৭ এপ্রিল তিন কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কেশবপুর উপজেলার পূর্ব বিল খুকশিয়ায় ৮৪৬ হেক্টর জমিতে তিন বছর মেয়াদি জোয়ারাধার চালু করা হয়।
প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ডায়েরখালী ও গোসয়াল এলাকায় কেটে (কাটিং পয়েন্ট) বিলের সঙ্গে হরি নদীর সংযোগ দেওয়া হয়। প্রকল্প চলাকালে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেয় পাউবো।
পাউবো দাবি করেছে, বিল খুকশিয়ায় জোয়ারাধার প্রকল্প চালু হওয়ায় কৃষকরা তার সুফল ভোগ করছে। এখন সেখানে প্রচুর ফসল হচ্ছে। এ কারণেই বিল কপালিয়ায় জোয়ারাধার চালুর সিদ্ধান্ত নেয় পাউবো।