আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াকে যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগিতা না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার চেষ্টা করবেন না। লাখো শহীদের রক্তর সঙ্গে বেঈমানি করবেন না। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা করলে আপনার বিচারের দাবিতে দেশের সচেতন জনগণ সোচ্চার হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বুধবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিকেলে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি বিরোধী দলের নেত্রীর উদ্দেশ্যে বলবো, বাংলাদেশের লাখো শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করবেন না। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করবেন না। তাদের সহযোগিতা করবেন না।’
‘যারা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা করবে, সহযোগিতা করবে একদিন বাংলার মাটিতে তাদেরও বিচার হবে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেওয়া, সহযোগিতা করার জন্য দেশের সচেতন জনগণ একদিন আপনার বিচারের দাবিতে সোচ্চার হবে। বেঈমানি করে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার চেষ্টা করলে যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগিতার জন্য জনগণ আপনার বিচার চাইবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে পারবেন না। আমরা মুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই, হবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এ বিচার করে যাবে।’
শেখ হাসিনা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটনা চক্রে সেক্টর কমান্ডার হয়েছিলেন বলে মন্তব্য করে বলেন, ‘তিনি মুজিব নগর সরকারের বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলেন। যুদ্ধের সময় জিয়াকে কয়েক বার চাকরিচ্যুত করা হয়েছিলো। কারণ, তার ভুল সিদ্ধান্তে অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন দিতে হয়েছে। তিনি একেবারেও সম্মুখ যুদ্ধে ছিলেন না। সবসময় ৩ মাইল দুরে থাকতেন। তাই সবাই তাকে ডাকতো মেজর ‘রিট্টিট’।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৬ মার্চ রাতে চট্টগ্রামে স্বাধীনতাকামী মানুষ যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গাড়ি ঠেকানোর জন্য ব্যারিকেড দিয়েছিলো। সেই ব্যারিকেড ভাঙার জন্য মানুষের উপর সেনাবাহিনী গুলি চালায়। জিয়া তাদের একজন ছিলেন। সেদিন জিয়া চট্টগ্রামে বহু আন্দোলনকামী, মুক্তিকামী মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। পরে জিয়া ঘটনা চক্রে সেক্টর কমান্ডার হয়েছিলেন।’
জনগনের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেন নি খালেদা জিয়ার এ ধরণের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। স্কুল জীবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম আমরা। শেখ মনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। শেখ কামাল ও শেখ জামাল মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।’
‘আমাদের পরিবারের কে যুদ্ধ করেছেন, কে যুদ্ধ করেন নি সে সাক্ষী ইতিহাস দেবে। খালেদা জিয়ার কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিতে হবে না। খালেদা জিয়া তো ঢাকা ক্যান্টমেন্টে থেকে জানজুয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ৭৫’এর পর জিয়া রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে যুদ্ধাপরাধী, মানবতা বিরোধী যাদের রাজনীতি ও ভোটের অধিকার নিষিদ্ধ ছিলো সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তাদের রাজনীতি ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বিচারাধীন ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে মুক্ত করে দিয়েছিলো। তার স্ত্রী খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে মাঠে নামবেন এটাই স্বাভাবিক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করেছিলো। কারণ, তারা হুকুমের গোলাম ছিলো। তারা চাকরি করতো, উপর থেকে যে নির্দেশ এসেছে তারা তাই পালন করেছে। কিন্তু যারা বাংলাদেশের নাগরিক, এদেশের সন্তান। তারা কিভাবে হানাদার বাহিনীর হয়ে এদেশের মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে?
যারা হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে কাজ করেছে তারাই আসল যুদ্ধাপরাধী, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী। তাদের বিচার হবেই।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের জনগণ ভালো থাকলে খালেদা জিয়া শান্তিতে থাকেন না। কারণ, তখণ তারা লুটেপুটে খেতে পারেন না। খালেদার এক ছেলে মানি লন্ডারিংয়ে অনার্স, অন্যজন দুর্নীতিতে মাস্টার্স। খালেদা জিয়া এতিমদের টাকা মেরে খেয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে মানি লন্ডারিং করেছেন, এর চেয়ে বড় লজ্জা কি আছে।’
‘আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এসে খালেদার পুত্রদের দুর্নীতির সাক্ষী দিয়ে গেছেন। তারপরও তাদের লজ্জা নাই। আসলে চোরের মার বড় গলা।’