বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য মহাজোট সরকারের চতুর্থ বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করবেন তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী এবারের বাজেট বক্তৃতা, বাজেটের সংক্ষিপ্তসার, বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি, ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রার একটি হালচিত্র, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নে পথনকশা : দ্বিতীয় হালচিত্র, সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি, নারীর উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ২৫টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কার্যক্রম, সংযুক্ত তহবিল-প্রাপ্তি, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, মঞ্জুরি ও বরাদ্দের দাবিসমূহ (অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন) এবং মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ জাতীয় সংসদ থেকে সরবরাহ করা হবে।
একই সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশন প্রণীত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-২০১২-১৩ এর একটি দলিল এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রণীত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যাবলী ২০১১-১২ জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে।
বাজেটকে আরো অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইট (িি.িসড়ভ.মড়া.নফ -) এ বাজেটের সকল তথ্যাদি ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাঠ ও ডাউনলোড করতে পারবে এবং দেশ বা বিদেশ থেকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফিডব্যাক ফরম পূরণ করে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ প্রেরণ করা যাবে।
প্রাপ্ত মতামত ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে। জাতীয় সংসদ কর্তৃক বাজেট অনুমোদনের সময়ে ও পরে তা কার্যকর করা হবে।
আগামী বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের তুলনায় বাড়লেও তা ২ লাখ কোটি টাকার মধ্যে থাকবে বলে অর্থমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন।
অবকাঠামো উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি জোরদারকরণকে সামনে রেখে এবারের নতুন বাজেটে চলতি অর্থবছরের বাজেটের অসামপ্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং নতুন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়া নতুন বাজেটে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস ও প্রকৃত বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ পদক্ষেপ থাকছে। এর পাশাপাশি দক্ষতার সঙ্গে আর্থিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরাই হবে বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য।
অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যে স্বীকার করেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিসহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
চলতি অর্থবছরের (২০১১-১২) বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৭ শতাংশ। কিন্তু গত কয়েক মাস যাবৎ মূল্যস্ফীতি দুই অংকের ওপরে ছিল। গত মার্চ মাসে তা কিছুটা কমে এক অংকের ঘরে নেমে আসে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে ১০টি খাত বিশেষ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। বর্তমান সরকারের রূপকল্প-২০২১ এর আলোকে তৈরি করা পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আলোকে ওই অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিদ্যমান বাস্তবতা মাথায় রেখে এবারের বাজেটে অগ্রাধিকার তালিকায় প্রথমে রয়েছে বিদ্যুৎ খাত। বিদ্যুতের পাশাপাশি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদেও বরাদ্দ বাড়ছে বড় অঙ্কের।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে মোটা দাগে ৬টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করে ১০টি সুনির্দিষ্ট খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
এগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ, সড়ক, রেলপথ, বন্দর, অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, মানবসম্পদ, সামাজিক নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ।
অন্যান্য ভৌত অবকাঠামোর মধ্যে গুরুত্ব পাবে পদ্মা সেতু নির্মাণ। মানবসম্পদের মধ্যে গুরুত্ব পাবে শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন।
কৃষি খাত সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকলেও প্রকৃত অর্থে এ খাতে ভর্তুকি কমছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে কৃষিতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ছিল সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। তবে ভর্তুকি চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। টাকার সংস্থান না থাকায় সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ থাকছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা।
গবেষণা সংস্থা সিপিডি অর্থনীতি নিয়ে তাদের সর্বশেষ বিশ্লেষণে বলেছে, কৃষিতে ভর্তুকি কমানো হলে সরকারকে হয় কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, নতুবা কৃষি খাতে ব্যবহৃত পণ্যের (ডিজেল, সার) দাম বাড়াতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কৃষি খাতে মোট বরাদ্দ বাড়ছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অবশ্য বলেছেন, তার বিবেচনায় পুরো কৃষি বাজেটটাই ভর্তুকি। কেননা, এ খাত থেকে সরকারের কোনো আয় হয় না।
চলতি অর্থবছরে ভর্তুকির জন্য প্রাথমিক বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মোট ভর্তুকি চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা আগামী বাজেটে স্থানান্তর করবে। এ কারণে সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকি বরাদ্দ বেশ বাড়ছে।
এদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ থাকছে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে একনেকে আগামী বাজেটের এডিপি অনুমোদন করেছে।