যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন ২০০৯ সালে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে অতিমাত্রায় শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তালেবানের হাতে পরমাণু বোমা থাকতে পারে এমন আশঙ্কায় অস্থির হয়ে ওঠে ওবামার নয়া প্রশাসন। পরে অবশ্য তথ্যগত দুর্বলতা প্রমাণিত হওয়ায় এ ভীতি কেটে যায়।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি বইয়ে এমন তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। ‘কনফ্রন্ট অ্যান্ড কনসিল’ নামে এ বইটি লিখেছেন মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের প্রধান ওয়াশিংটন প্রতিনিধি ডেভিড স্যাংগার।
স্যাংগার তার বইয়ে বলেছেন, ২০০৯ সালের গ্রীষ্মের প্র্রথম দিকে প্রেসিডেন্ট ওবামা ওভাল অফিসে হঠাৎ করে এক বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট কিছু ‘দ্ব্যর্থবোধক’ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তালেবান পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হওয়ার আশঙ্কার কথা বলেন।
বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তানের তেহরকি-ই-তালেবানের সদস্যদের মধ্যকার আলোচনায় গোয়েন্দারা আড়িপেতে বুঝতে পেরেছেন তাদের কাছে পরমাণু বোমা থাকতে পারে। আর এই ‘অনির্ভরযোগ্য’ গালগল্প বিশ্বাস করে তালেবান যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোতে হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কায় তৎপর হয়ে ওঠে সিআইএ।
স্যাংগার জানাচ্ছেন, এ ধরনের হুমকির ব্যাপারে গোয়েন্দাদের মধ্যে এমন কেউ ছিলেন না যে এমন হুমকির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন।
তবে কিছু বিশ্লেষক বিশ্বাস করেছিলেন- সরাসরি পরমাণু বোমা না হলেও তেজষ্ক্রিয় বা ডার্টি বোমার মতো কোনো পরমাণু হুমকি থাকাটা অসম্ভব নয়।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগলো মনে করে, ওই গোয়েন্দা তথ্যের ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তবে এ ধরনের ভীতি উপেক্ষা করতে চায়নি কেউ কারণ সে সময় পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমাগত বাড়ছিল।
অবশ্য কয়েকদিন পরেই আতঙ্ক কেটে যায়। পাকিস্তান সরকার তাদের অস্ত্রাগার নতুন করে জরিপ করে এবং জানায় তাদের অস্ত্রাগার থেকে কোনো পারমাণবিক উপাদান খোয়া যায়নি।
বিশ্লেষকদের আরেক গ্রুপ মনে করে, তালেবান সদস্যরা আসলে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এছাড়া তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে পরমাণু বোমা পাওয়া বা বানানো তালেবানের পক্ষে একেবারে অসম্ভব বলেই মনে করেন তারা।
কিছু কর্মকর্তার বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা তালেবান সদস্যদের আলোচনা আড়িপেতে যা শুনেছে তাতে তারা ভুল বুঝেছে। আর ভুল অনুমানের ভিত্তিতেই এতো ভীতি ছড়িয়েছে।
স্যাংগার তার বইয়ে এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই এমন পরমাণু সঙ্কটের মধ্যে পড়ায় ঘটনাটি সবার মধ্যে গভীরভাবে দাগ কেটেছে।
আর এ ঘটনার পর থেকেই মার্কিন কর্মকর্তারা পাকিস্তানের পরমাণু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে লন্ডন বা দুবাইয়ের মতো নিরপেক্ষ স্থানে নিয়মিত বৈঠক করে আসছেন- লিখেছেন স্যাংগার।