ব্রিটেন জুড়ে যখন চলছে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসন আরোহনের হীরক জয়ন্তী পূর্তি উৎসব, তখন সৌদি আরবের কারাগারে বসে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন শ্রীলংকার গৃহকর্মী রিজানা নাফিক। খুন না করেও খুনের দায় মাথায় নিতে হয়েছে দরিদ্র এই তরুণীকে। তবে তাকে বাঁচাতে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের পক্ষ থেকে খোদ ব্রিটেনের রানীর কাছে চিঠি লেখা হয়েছে।
রানীকে লেখা চিঠিতে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের ডিরেক্টর অব প্রোগাম অ্যান্ড পলিসি বাসিল ফার্নান্দো জানান, মাত্র ১৭ বছর বয়সে অত্যন্ত দরিদ্র ঘরের মেয়ে রিজানা নাফিক শ্রীলংকা থেকে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব যান। রিজানা যে বাসায় কাজ করতেন কিছুদিন পর ওই বাসায় চার মাস বয়সী একটি শিশু সন্তান মারা যায়। গৃহকর্তা এ ঘটনার জন্য রিজানাকে দায়ী করে। তবে কোনরকম পোষ্টমর্টেম ছাড়াই ওই শিশুটির লাশ দাফন করা হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে গৃহকর্তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিস রিজানাকে গ্রেফতার করে। পুলিস এ সময় তার কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে বলে অভিযোগ উঠেছে। রিজানা তার নিজের মাতৃভাষা তামিল ছাড়া এক বিন্দুও আরবি বোঝেন না। এছাড়া বিচার চলাকালে তাকে সহায়তার জন্য কোন অনুবাদকও দেয়া হয়নি। ২০০৭ সালের জুনে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে সৌদি আদালত ফাঁসির আদেশ দেয়। আদালত তাকে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ প্রদান করে। পরবর্তীতে বিষয়টি বিবিসির সিংহলি সার্ভিসে প্রচারিত হলে এটি এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের নজরে আসে। পরে কমিশনের পক্ষ থেকে রিজানাকে বাঁচাতে আইনি লড়াই চালানো হয়। তবে রিজানার কাছ থেকে কৌশলে শিশুটিকে হত্যার স্বীকারাক্তি আদায়ের কারণে আদালত কমিশনের আপিল আবেদন খারিজ করে দেয়।
এদিকে রিজানাকে ক্ষমা করতে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট স্বয়ং সৌদি বাদশাহকে অনুরোধ জানালেও এতে কোন কাজ হয়নি। তাই রিজানাকে বাঁচাতে কমিশনের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাপী ক্যাম্পেইন করা হয়। এতে সাড়া দেন প্রিন্স চার্লস, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ক্যাথরিন অ্যাস্টনসহ অনেকেই । প্রায় পাঁচ বছর কারাগারে আটক থাকা এই তরুণীকে বাঁচাতে এবার তাই রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন।