বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামাল বলেছেন, বড় ত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি, সেই দেশটিকে আজকে আবার দেখছি ভয়ঙ্করভাবে একটা দুর্বৃত্তায়নের চক্রের হাতে চলে যাচ্ছে। প্রাণ-প্রকৃতি ও দেশ বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
শুক্রবার রাজধানীর তোপখানাস্থ বিএমএ মিলনায়তনে জাতীয় কনভেনশনে সুলতানা কামাল এ কথা বলেন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রাণ প্রকৃতি বিনাশী সকল প্রকল্প বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবিতে আয়োজিত কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।
কনভেনশনে সুলতানা কামাল বলেন, শুধু একটা ভূখণ্ড দখলের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে কতগুলো নির্দিষ্ট নৈতিক নির্দেশনা ছিল। আমরা ভেবেছিলাম এই দেশটা সব মানুষের দেশ হবে। সেখানে প্রাণ, প্রকৃতি, মানুষের মর্যাদা, ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছরে দাঁড়িয়েও আমাদের উপলব্ধি করতে হচ্ছে সেসবের সুরাহা আমরা করতে পারিনি। সেই জায়গায় পৌঁছাবার অনেক বাধা। এখন সেই বাঁধা অপসারণ করাই নৈতিক দায়িত্ব। যারা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে নৈকট্যবোধ ও আনুগত্যবোধ করে এই বাধা অপসারণে তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। এই বিপদ মোকাবেলার জন্য উপকূল হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই উপকূল অঞ্চলে জলবায়ু মোকাবেলার পদক্ষেপ নেই। তিনি বলেন, সরকার বিশ্ব দরবারে গিয়ে বলছে জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কথা, আর দেশের মধ্যে নদী, বন, মানুষ বিনাশী সকল প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশেকে জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে আরও ভয়ঙ্কর বিপদের মধ্যে নিক্ষেপ করছে। পুরো উপকূলজুড়ে কক্সবাজার থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত প্রায় ২২টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আয়োজন করা হচ্ছে। এটা বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশে উন্নয়নের একটা বিশাল জোয়ার চলছে। এই উন্নয়নের জোয়ার একটা ভয়ঙ্করের জোয়ারে পরিণত হয়েছে। বিষাক্ত জোয়ারে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নের নামে বাংলাদেশে সরকার একটা উল্টো যাত্রা করছে। তিনি বলেন, সরকার ক’দিন পর পর গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য আবার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। এই যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো- এর ফলাফল আমরা সবাই জানি।
তিনি আরো বলেন, এই সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নয়, বিদ্যুতের নামে দেশি-বিদেশি, চীন, ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানকে ব্যবসা দেওয়া। আর তাদের আধিপত্যের বিনিময়ে নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা। জনগণকে এটা প্রতিহত করতে হবে।
নতুন কর্মসূচি
কনভেনশন থেকে জাতীয় কমিটির মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নতুন আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশব্যাপী মানববন্ধন, জেলা-উপজেলায় সমাবেশ এবং স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচারণা চালানো হবে। মার্চ মাসে ফুলবাড়ী থেকে দিনাজপুর পদযাত্রা এবং বিভাগীয় ও উপকূলীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ৩ এপ্রিল ঢাকামুখী জাগরণযাত্রা ও ঢাকায় সমাবেশ এবং সেপ্টেম্বরে কক্সবাজার থেকে সুন্দরবন লং-মার্চের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।