যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতিসহ একাধিক অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে দেশটির সংসদীয় কমিটি রায় দিয়েছে। এর ফলে তাকে অভিশংসনের প্রক্রিয়া আরও একধাপ এগিয়ে গেল।
ট্রাম্প যখন লন্ডনে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে দেশের বাইরে রয়েছেন, তখনই মার্কিন সংসদের নিম্নকক্ষের ইনটেলিজেন্স কমিটি অভিশংসন প্রতিবেদন প্রকাশ করলো। তবে আগে থেকেই এ ধরনের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল।
মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রায় ৩০০ পাতার সেই প্রতিবেদনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গুরুতর কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে। যেমন পুনর্নিবাচনের সম্ভাবনা বাড়াতে ট্রাম্প বিদেশি হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। ইউক্রেনের সরকারের ওপর অনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে তিনি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছিলেন।
জাতীয় নিরাপত্তার তোয়াক্কা করেননি ট্রাম্প। সংসদের কার্যকলাপে বাধা দিতে অভূতপূর্ব অভিযান চালিয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনে সরাসরি অভিশংসনের পক্ষে সুপারিশ করা হয়নি। শুধু তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরে কংগ্রেসের হাতে এ বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
আসন্ন বড়দিন উৎসব উপলক্ষ্যে ছুটির আগেই সংসদের নিম্নকক্ষে এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভোটাভুটি হতে পারে। বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিশংসন প্রক্রিয়ার পক্ষে প্রস্তাব অনুমোদন করতে পারে। তবে উচ্চ কক্ষে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দল সেই প্রচেষ্টায় বাধা সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রিপাবলিকান দল ইতোমধ্যে এক পাল্টা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। পুরো প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে তুলে ধরছে প্রেসিডেন্টের দল।
অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাট দল ট্রাম্পের আচরণের সুদূরপ্রসারী প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে। তাদের মতে, সংসদের কাজকর্মে প্রেসিডেন্টের বাধা সৃষ্টি করার ক্ষমতা খর্ব না করলে ভবিষ্যতেও সম্ভবত এমন অঘটন এড়ানো যাবে না। ভবিষ্যতে যে কোনো প্রেসিডেন্ট তাদের ভুলত্রুটি বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্তে বাধা সৃষ্টি করার ক্ষমতা ভোগ করবেন।
ট্রাম্প যেভাবে নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে রেখে সবরকম জবাবদিহিতা এড়িয়ে চলেছেন, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক এক প্রবণতা হয়ে উঠতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদনে ট্রাম্প ছাড়াও কয়েকজন মন্ত্রী ও কর্মকর্তার আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর লন্ডন থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন। হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র এই প্রক্রিয়াকে একতরফা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে তুলে ধরে প্রমাণের অভাবের কথা উল্লেখ করেছেন।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের পর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জনমত কতটা জোরালো হয়ে উঠবে, তার ওপর অভিশংসন প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করবে। চাপ বাড়লে রিপাবলিকান শিবিরে ফাটল ধরলে তবেই প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
সূত্র: ডিডব্লিউ