বাংলাদেশের মানুষের কাছে রিচার্ড পাইবাস অনেকটা পুরনো হয়ে গেছেন। যেদিন থেকে জাতীয় দলের প্রধান কোচের সম্ভাব্য তালিকায় ঢুকে পড়েছেন তারপর থেকে নিয়মিত খবরে ছিলেন। এখনও নতুন করে তার সম্পর্কে বেশি কিছু লেখার নেই। তবে রোববার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে যে সব বক্তব্য দিয়েছেন পাইবাস তার প্রায় সব কিছু নতুন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) যে সংবাদ সম্মেলন হলো সেখানে কোচ তার দর্শন এবং লক্ষ্য সম্পর্কে বলেছেন, ‘একদল তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করা চ্যালেঞ্জিং। তাদের উন্নতিতে সাহায্য করা এবং ভিন্ন ভিন্ন ফর্মেটের ক্রিকেটে দল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মূল বিষয়গুলো খুঁজে বের করতে হবে। বিশ্বের অন্য দেশের মতো এখানেও একদল ভালো ক্রিকেটার লাগবে। লড়াই করার জন্য অন্তত ৬-৮ জন পেস বোলার দরকার। কন্ডিশনের কারণে বাংলাদেশে মেধাবী তরুণ স্পিনারের অভাব নেই। তাদের মধ্য থেকে বিশ্বমানের স্পিনার খুঁজে নিতে হবে।’
আগের কোচদের মতো পাইবাসের কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছিলো দুই বছরে বাংলাদেশ দলকে কোথায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। জানালেন র্যাংঙ্কিংয়ে ওপরের দিকে এগিয়ে নেওয়া হবে তার লক্ষ্য, ‘ধারাবাহিক ভাবে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন ফর্মেটে উন্নতির সিড়ি তৈরি করতে হবে। খেলোয়াড়রা যাতে সব ধরণের ক্রিকেটে যথেষ্ঠ চ্যালেঞ্জ নিতে পারে তার জন্য দীর্ঘমেয়াদে কৌশলগত পরিকল্পনা নিতে হবে। অতএব লক্ষ্য হবে র্যাঙ্কিংয়ের তালিকায় মাঝামাঝি অবস্থানে পৌঁছানো।’
অনেক ফর্মেটে এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়। কিন্তু জাতীয় দলের নতুন কোচের কাছে টেস্ট হলো আসল ক্রিকেট। তার মতে, ‘সব ফর্মেটের মধ্যে টেস্ট হলো গাছের মতো যা ক্রিকেটারদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। আমার কাছে টেস্ট ক্রিকেট মুকুটের জুয়েলের মতো। বাংলাদেশকে শক্তিশালী টেস্টে দলে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। এটাই হলো বোটম লাইন। সূচি অনুযায়ী কাজ করতে পারলে নিশ্চিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো।’
দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেটের জন্য দল প্রস্তুত করতে হচ্ছে পাইবাসকে। খেলোয়াড়দের জেনে নেওয়ার জন্য কোচের জন্য এটা ভালো সুযোগও। নতুন কোচের অধীনে ১২ জুন জাতীয় দল জিম্বাবুয়ে সফরে যাবে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার জন্য। প্রতিযোগিতায় জিম্বাবুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে হবে তাদের কন্ডিশনে। এরপর মধ্য জুলাইয়ে যাবে আয়ারল্যান্ড এবং হল্যান্ড সফরে। সেখানেও পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল। আগস্ট সেপ্টেম্বরে ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোতে হবে চারজাতি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য দুনিয়া ঘুরে ঘুরে এত এত ২০ ওভারের ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল। এই সফরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নতুন কোচ, ‘হোমে খেলার চেয়ে ক্রিকেটারদের বিদেশে নিয়ে যাওয়া অনেক ভালো। আমাদের সামনে অনেক ক্রিকেট। অতএব যত বেশি খেলবো তত ভালো করার সুযোগ থাকবে। ক্রিকেটারদের জন্যও পারফরমেন্স উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার দারুণ একটা সুযোগ।’
দায়িত্ব লিনেও আপাতত জাতীয় দলে কোনো পরিবর্তন বা পরিমার্জন করবেন না পাইবাস। তিনি বলেন, ‘ভালো ভাবে না দেখা পর্যন্ত আমি কোনো কিছুতে পরিবর্তন করবো না।’
পাকিস্তানের সাবেক কোচ মনে করেন দক্ষিণ আফ্রিকায় বহুজাতিক সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় থাকায় বাংলাদেশে কাজের সুবিধা হবে। তার মতে, ‘পাকিস্তানে কাজ করে আমি খুব আনন্দ পেয়েছি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা বহুজাতিক সংস্কৃতি, বহুবর্ণের এবং ধর্মের মানুষ থাকে। আফ্রিকার অভিজ্ঞতা এখানে বেশি কাজে দেবে।’