সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাইলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নির্যাতনে দুঃখ প্রকাশ

সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাইলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নির্যাতনে দুঃখ প্রকাশ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি সাম্প্রতিককালে পুলিশের হাতে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি কাজের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) ‘মিট দ্যা রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,  নির্যাতনের ঘটনায় আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। এসব ঘটনায় দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে আরো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড ও বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব ঘটনায় তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা যাবে না।

‘সাগর-রুনির খুনিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হবে’ এ কথা তিনি বলেননি দাবি করে সাহারা খাতুন বলেন, ‘আমি শুধু পুলিশকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলাম। এটা পুলিশকে চাপ দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু আমি কখনোই বলিনি যে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করা হবে।’

পুলিশ থেকে দূরে থেকে সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের প্রতি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পরামর্শ প্রদান প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তার কাছে বলেছেন, তিনি এ ধরনের কথা বলেননি। তার বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সেদিনের বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপিংস দেখিয়ে এটি পরীক্ষা করতে বলেছেন বলেও জানান সাহারা খাতুন।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রকাশ করার অভিযোগ করে সাহারা খাতুন আশঙ্কা করেন, ‘হতে পারে, প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে এমন বক্তব্য প্রকাশ সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র।’

তবে তিনি এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকেই এ বিষয়ে সরাসরি প্রশ্ন করতেও আহ্বান জানান।

বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, সন্ত্রাসীদের ধরতে গেলে যদি সন্ত্রাসীরা পুলিশ- ৠাবের দিকে গুলি ছোড়ে, তাহলে তারা কি করবে?

তিনি বলেন, ‘আপনারা কি চান, আমরা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করি?’

সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে পুলিশ নিজেদের জীবন বাঁচাতে সন্ত্রাসীদের ওপর গুলি চালায় বলে দাবি করে সাহারা খাতুন আরো বলেন, ‘দেশের সন্ত্রাসীরা সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে হত্যা করছে। দস্যুরা নিরীহ জেলেদের আটকে রেখে চাঁদা দাবি করছে, হত্যা করছে। আর তাদের গ্রেফতার করতে গিয়ে পুলিশ ও কোস্টগার্ডের হাতে তাদের মৃত্যু হচ্ছে। এগুলো তো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের জীবন বাঁচাতে করছে।’

তবে কাউকে যদি আগে থেকেই ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়ে থাকে, সেসব পরিবারের সদস্যদের সরাসরি তার সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ জানান স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী।

সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ আমরা দীর্ঘদিন ক্ষমতার মধ্যে ছিলাম না। তাই অতীতে যতো সাংবাদিক হত্যা, গুম ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, সাংবাদিকদের সহযোগিতা নিয়ে সেগুলোরও বিচার করা হবে।’

সাংবাদিক নির্যাতনে বা সরকারের সঙ্গে সাংবাদিকদের দূরত্ব সৃষ্টিতে পুলিশের প্রতি কোনো সরকারি নির্দেশনা নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো কোনো অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্য সরকারকে বিব্রত করার জন্য এসব ঘটনা স্বপ্রণোদিতভাবে ঘটাতে পারেন। তবে একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব ঘটনার পেছনে সরকারের সঙ্গে সাংবাদিকদের ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির লক্ষ্যে বাইরের কারো  কারসাজি বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেড় লাখ পুলিশ সদস্যের মধ্যে কেউ কেউ খারাপ থাকতেই পারেন। কিন্তু যারা খারাপ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্ত্রী তার সূচনা বক্তব্যে অতীতের চেয়ে বর্তমান পরিস্থিতি অনেক ভালো উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের ভুল হতে পারে। কাজ করতে গেলে ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। আপনারা আমাদের বাইরে নন। আমরা-আপনারা একই সমাজের অংশ। আমাদের ভুল শুধরিয়ে দিন। পরামর্শ দিন। সেটি হবে আমাদের পথচলার পাথেয়।’

রাষ্ট্র পরিচালনা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন আরো বলেন, যখন বিরোধী দলে ছিলাম, তখনও বিভিন্ন সরকারের আমলে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে নিগৃহীত হতাম। তখন আপনারাই সেসব ঘটনা সমাজের কাছে তুলে ধরতেন। তখনকার আপনাদের কার্যক্রমের কারণেই আজ আমি এ জায়গায় এসেছি।’

তিনি বিরোধী দলে থাকতে যেভাবে সহযোগিতা করছেন, সরকারে থাকতেও সেভাবেই সহযোগিতা করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রের উন্নয়নে সুষ্ঠু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যে দায়িত্ব  দিয়েছেন, তা অত্যন্ত কঠিন। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের চেষ্টা করেছি।’

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদেশি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা গত ১০ বছরের চেয়ে ভালো, এটা তারই প্রমাণ। এ প্রসঙ্গে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ নির্মূল, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার মামলা ও বিডিআর (বিজিবি) হত্যাকাণ্ডের বিচার, শিল্প পুলিশ প্রতিষ্ঠা, গাড়ি চোর প্রতিরোধ, টেলিফোনে হুমকি ও সাইবার ক্রাইম বিরোধী আইন প্রণয়ন ও কার্যক্রম, নারী-শিশু পাচার রোধসহ গত সাড়ে ৩ বছরে নেওয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং অর্জিত সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।

ডিআরইউ’র সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ