বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোটার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) সভাপতি ও অটোকন গ্রুপের কর্ণধার আবদুল হামিদ শরীফ। জন্ম সিলেটের জকিগঞ্জে ১৯৬১ সালের ১০ ডিসেম্বর। সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা। এরপর জাপানের কেয়ো ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসসি ডিগ্রি। সবশেষে ইকোনমিক ট্রান্সপোর্টেশনের উপর করেন অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা ।
কর্মজীবনের শুরুতে জাপানের ফুজিসাকি ইন্ডাস্ট্রিতে প্রকৌশলীর কাজ করেন কিছুদিন। দেশের টানে ১৯৮৭ সালে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। মাত্র দুটি কার আমদানি করে শুরু করেন ব্যবসা। এরপর সামনে এগিয়ে যাবার গল্প। দ্যা চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব লজিস্টিক অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টের এ বছর সারাবিশ্বের ৩০টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪ জন সদস্য হবার প্রাক যোগ্যতা অর্জন করেছেন। বাংলাদেশ থেকে এ বছর তিনি একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে এ যোগ্যতা অর্জন করেন।
বাংলাদেশের মানুষ মানব সম্পদে পরিণত হবে। বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে এই তার স্বপ্ন। এই তিনি নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন।
সরকারের কাছে বাজেটের আগে আপনাদের দাবি কী ?
আবদুল হামিদ শরীফ: আমরা বারবার রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিতে শুল্কবৈষম্য দূর করার আহ্বান জানিয়েছি। আমরা যা বলছি তা বাস্তবায়ন হলে সরকারের রাজস্ব আয় আরও বাড়বে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভূল সিদ্ধান্তে এ খাত ধ্বংসের মুখে। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এনবিআরকে এ ব্যপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাজেটে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসা রক্ষায় কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ওপর অস্বাভাবিক শুল্কারোপের ফলে নিম্নমানের নতুন গাড়ি কম শুল্ক দিয়ে দেশে আসছে। এতে সরকারি আয় যেমন কমেছে তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্রেতারা।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মাইক্রোবাস ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। তাই দেশের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে মাইক্রোবাস আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে।বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকুচিত মুদ্রানীতির কারণে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
তবে কোনো না কোনো ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় নতুন গাড়ির ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের কাছে কিস্তি ব্যবস্থায় গাড়ি বিক্রয় করার সুযোগ পাচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মধ্যবিত্ত ক্রেতা সাধারণ।
আপনারা ভেবে দেখুন, একটি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ক্রয়মূল্য ৫ লাখ টাকা হলে সরকারের রাজস্ব হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয় কমে গেছে।
পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের ভাড়া কমিয়ে আনতে হবে। বিগত সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে অন্যায়ভাবে বন্দর ভাড়া চারগুণ বাড়ানো হয়েছিল। যা কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়। চট্টগ্রাম বন্দরের ভাড়া সহনীয় হারে নির্ধারণ প্রয়োজন।
শুল্কায়নে বৈষম্য কমিয়ে আনতে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় এনবিআরের প্রতি আমাদের ক্ষোভ আছে। এরই মধ্যে জাপান সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বরাবরে এ ধরনের বৈষম্য নিরসনের অনুরোধ জানিয়েছেন। কয়েক দফায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দেওয়া হলেও এনবিআর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বাজেটে এসব বিষযে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
গাড়ি ব্যবসায়ীরা শুধু বাজেট ঘোষণার আগে দৌড়ঝাঁপ করে এমন অভিযোগ সম্পর্কে কি বলবেন?
আবদুল হামিদ শরীফ: আসলে ব্যপারটা তা নয়। এমনটা মনে হয় এই কারণে যে, বাজেটে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাজেটের পর সেই সিদ্ধান্ত পাল্টানো অনেক কঠিন। তাই বাজেটের আগে এসব নিয়ে কথাবার্তা বেশি হয়। তবে আমরা সারাবছরই এসব বিষয়ে কাজ করি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এর কোন কোন সিদ্ধান্ত সঠিক নয় বলে মনে করেন।
আবদুল হামিদ শরীফ: নতুন ও পুরনো গাড়ির শুল্ক বৈষম্য, একচোখা নীতি। এনবিআরের সাথে হয়তো নতুন গাড়ি আমদানিকারকদের কোন স্বার্থ আছে তাই শুধু তাদের স্বার্খে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এনবিআরের এই সেক্টরে অভিজ্ঞ লোক নেই তাই সিদ্ধান্ত এমন হচ্ছে।
কিভাবে মধ্যবিত্ত লোক কমদামে গাড়ি কিনতে পারবে। কোন প্রক্রিযার পরামর্শ দেন আপনি।
আবদুল হামিদ শরীফ: আমরা একজন মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ভালো ও টেকসই গাড়ি দেবার চেষ্টা করি। আমার পরামর্শ হলো ৩০ বছরেরও পুরনো একটি জাপানি গাড়িও ভালোভাবে চলতে পারে। একটি নিম্নমানের চায়না, কোরিয়ান বা ইন্ডিয়ান গাড়ি কিনে ভালোভাবে দশ বছরও চালানো যায় না। তাই কম দামের জন্য গাড়ি কিনে প্রতারিত হবেন না। যারা আপনাদের পরিচিতদের মধ্যে গাড়ি ব্যবহার করেন তাদের পরামর্শ নিতে পারেন। আর জাপানি গাড়ির রিসেল ভ্যালু অনেক বেশি। মধ্যবিত্তদের যে কোন প্রযোজনে এই গাড়ি সাখে সাথে বিক্রি করা যায়।
প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এনবিআরকে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হলেও কেন তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় নি বলে মনে করেন?
আবদুল হামিদ শরীফ: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আদেশ ও অর্থমন্ত্রীর নিজ হাতে সই করা নথিগলো আপনাকে দেখালাম। অর্থমন্ত্রী লিখেছেন নতুন গাড়ির শুল্ক কোনভাবেই পুরনো গাড়ির চেযে কম হতে পারে না। এ ব্যাপারে এনবিআর চেয়ারম্যান দ্রুত ব্রবস্থা নিন। তারপরেও হয়নি। আমরা এফবিসিসিআই নেতারাসহ বা অনেকবার এনবিআর চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি। ওনারা নানা প্রক্রিযার কথা বলে সময ক্ষেপণ করছেন। এনবিআর কর্মকর্তারা কোন রহস্যজনক কারণে এমনটা করছে।
রিকন্ডিশন্ড না নতুন গাড়ি কোনটার মান বেশি? ক্রেতা কেন পুরনো গাড়ি কিনবে?
আবদুল হামিদ শরীফ: অবশ্যই রিকন্ডিশন গাড়ির মান বেশি। এটি বেশি টেকসই। জাপানি রিকন্ডিশন গাড়ি আসলে পুরনো বলা যাবে না। সামান্য একটু ত্রুটি থাকলেও সেই গাড়ি তারা বাজারে ছাড়ে না।। নতুন- পুরনো নয় ব্যপারটা হলো কোনটার মান কেমন।
আপনাদের নামে অভিযোগ আছে যে, ২০০৪ সালের কোনো পুরনো গাড়ি বাংলাদেশে প্রবেশ নিষেধ। অথচ ২০০৪ এমনকি ২০০৩ সালের গাড়িও এলসির ফাঁক-ফোকরের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। অনেকেই বলেন, আপনাদের মাধ্যমে দুর্ঘটনায় কবলিত গাড়িও বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
আবদুল হামিদ শরীফ: অভিযোগ আংশিক সত্য। মাত্র কযেকজন অসৎ ব্যবসায়ীর কারণে এটি এক/ দু বার ঘটেছিল। জাপান প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী এজন্য দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিযেছি। বন্দর, এনবিআর, পুলিশ, গোয়েন্দাদের এসব ব্যপার জানিয়ে আমরাই ব্যবস্থা নেবার অনুরোধ করেছি। এখন আর এই ধরনের সুযোগ নেই।
একজন ক্রেতার সারা জীবনের স্বপ্ন থাকে একটি গাড়ি কেনা। তিলে তিলে জমানো ঘাম ঝরানো টাকা, লোন ইত্যাদি দিয়ে একটি গাড়ি কেনে। সেই গাড়িটি কিনে যদি ক্রেতা ধরা খায় তাহলে পথে বসা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় থাকে না। সেক্ষেত্রে ক্রেতা প্রতারিত না হবার কোন ধরনের পদক্ষেপ আপনারা নিয়েছেন কি?
আবদুল হামিদ শরীফ: আমরা জানি, একজন ক্রেতার সারা জীবনের স্বপ্ন থাকে একটি গাড়ি কেনা। সেই স্বপ্নটা যেন ভালো গাড়ির হয় আমরা সেই ব্যবস্থাই করি। তিলে তিলে জমানো ঘাম ঝরানো টাকা, লোন ইত্যাদি দিয়ে একটি গাড়ি কেনে। সেই গাড়িটি যদি দীর্ঘদিন সার্ভিস না দেয় তাহলে ক্রেতা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বাংলাদেশের জন্য উপযোগী ও জনপ্রিয গাড়িগুলো আমরা আমদানি করি। নতুন নিম্নমানের গাড়ি কিনে যদি ক্রেতা ধরা যায় তাহলে আমাদের কি করার আছে?
আপনারা সব ব্যবসায়ী সংগঠন যেমন এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই এ ধরনের সংগঠনগুলোর সাথে পুরনো গাড়ি আমদানি নিয়ে বা বাজেটে বিভিন্ন সমস্যা সমবেতভাবে মোকাবেলায় সিদ্ধান্ত বা আলোচনা হয়েছে কি?
আবদুল হামিদ শরীফ: এফবিসিসিআই, আমাদের বারভিডা, নতুন গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠনের নেতাদের একাধিক বৈঠক হয়েছে। নতুন গাড়ি আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে যে সংগঠন আছে তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন নিটল গ্রুপের মাতলুব আহমাদ। এফবিসিসিআই ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে দুই পক্ষের কথা শুনে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। কিন্ত নতুন গাড়ি ব্যবসায়ীরা তা মানেন নি।
গরীবের এই দেশে দিন দিন গাড়ির চাহিদা কি বাড়ছে?
আবদুল হামিদ শরীফ: দেশের জিডিপি বাড়ছে। সবদিকেই উন্নতি হচ্ছে। মানুষের আয় বাড়ছে, তাই গাড়ির চাহিদাও বাড়বে। এটা স্বাভাবিক । দেশে গরীব –ধনীর বৈষম্য আছে কিন্ত তারপরও উন্নয়ন থেমে থাকবে না। মানুষ তার নিজের প্রয়োজনেই গাড়ি কিনছে।
আপনারা ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ পেলে কত সাফল্য দেখাতে পারবেন?
আবদুল হামিদ শরীফ: নতুন গাড়ি আর রিকন্ডিশন গাড়ির জন্য সমান সুযোগ থাকলে অনেক বড় ব্যাপার ঘটবে। তখন মানুষ একই দামে জাপানি গাড়ি কিনবে । নিম্নমানের কিনবে না। কারণ কেউই টাকা দিয়ে নিম্নমানের জিনিস নিজের জন্য কিনতে চাইবে না।
কাদের স্বার্থে এনবিআর এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে আপনার মনে হয়। আপনার কাছে জানা গেল যে, আপনাদের অনেক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাজেটে কোনো প্রতিফলন ঘটে না। আপনি কি বলবেন এখানে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করছে।
আবদুল হামিদ শরীফ: নতুন গাড়ি ব্যবসায় এনবিআর কর্মকর্তাদের কারো কারো ব্যক্তিগত স্বার্থে এসব হচ্ছে। আমি বলবো হয়তো এনবিআরের অনেকেই নতুন গাড়ি ব্যবসার সাথে জড়িত। এনবিআরতো আমাদের স্বার্থ দেখছে না। তবে তাদের সব কর্মকর্তারা খারাপ না।
আমরা আশাবাদী বাজেটে প্রতিফলন আসবে। সিন্ডিকেট বলবো না । কারণ সরকারতো চাইছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় সবাই চাওয়ার পরেও এনবিআর কোন কিছুকেই পাত্তা দিচ্ছে না।
আসলে আমাদের কোনটাতে লাভ তা বুঝতে হবে, জাপান থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিতে প্রত্যক্ষভাবে যে পরিমাণ ডলার ব্যয় হয়, ডেট রিলিফের মাধ্যমে তারা তা ফিরিয়ে দেয়। ফলে এ খাতে যে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় হয়, তা আবার ফিরে আসে। এ অবস্থায় জাপান থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি বন্ধ করা হলে জাপানের সাথে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হবে, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়।
উল্লেখ্য, ডেট রিলিফ হচ্ছে জাপান সরকারকে ঋণ পরিশোধ বাবদ বাংলাদেশ সরকার বছর বছর যে পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করে তা থেকে গাড়ি আমদানির সমপরিমাণ অর্থ মওকুফ করে দেওয়া। তাই জাপান থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি করলে তাতে প্রকারান্তরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হচ্ছে না। পক্ষান্তরে ভারত থেকে আমদানিকৃত যে কোনো পণ্য সুদে আসলে পরিশোধ করতে হয়। জাপান বাংলাদেশের অন্যতম দাতা ও উন্নয়ন সহযোগী দেশ। জাপান ঋণ ও অনুদান উভয় ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে। এমনকি বাংলাদেশ আমদানি সহায়তা হিসেবে পণ্য সাহায্যও পাচ্ছে।
আপনাদের পুরনো গাড়ির একমাত্র বাজার হচ্ছে জাপান। অন্যদিকে বর্তমানে নতুন গাড়ি আমদানি হচ্ছে ভারত, কোরিয়া ও চীন থেকে। জাপানের গাড়ি কেন অন্যান্য গাড়ি থেকে মানসম্পন্ন। এ ব্যপারে আপনার যুক্তি কী?
আবদুল হামিদ শরীফ: সবদেশে পুরনো গাড়ি বিক্রি হয্। জাপানি গাড়ি সবচেয়ে মানসম্পন্ন বলে এসব গাড়ির চাহিদা বিশ্বব্যাপী। আর জাপানিরা মানের ব্যাপারে আপসহীন। জাপানিরা পন্য নিযে মিথ্যা বলে না। এটাই তাদের এথিকস। অন্যান্য দেশের গাড়ি বলতে বিএমডব্লিউ, মারসিডিঞ্জ এসবের কথা বলছি না । ইউরোপীয় দেশের গাড়ি মানসম্পন্ন। কিন্ত এই দেশের জন্য জাপানি গাড়ি সবচেয়ে উপযুক্ত।
ডিজেলচালিত গাড়ি পরিবেশের মারাত্নক ক্ষতি করে। যেমন ভারতের অ্যাম্বাসেডর গাড়ি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে দিল্লীর হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। অথচ সেই গাড়ি বাংলাদেশে আসছে। আমরা প্লাস্টিক মার্কা গাড়ির বিরুদ্ধে কথা বলছি। জাপানি গাড়ি ভালো এটার যুক্তি লাগে না।
বিশেষজ্ঞরা যানজট কমানোর লক্ষ্যে গাড়ি আমদানি নিরুত্সাহিত করতে বলেন। এ ব্যপারে আপনার অভিমত কি?
আবদুল হামিদ শরীফ: এটা সত্যি যে ছোট গাড়ির চেযে পাবলিক পরিবহন যানজট কমায়। আমরা জাপানি বাস আমদানি করতে চাই। কিন্ত অত্যধিক শুল্কর কারণে পারি না। নিম্নমানের পাবলিক পরিবহনের চেযে দীর্ঘস্থায় ও মানসম্প্ন্ন জাপানি বাস অনেক বেশিদিন ও ভালো সার্ভিস দেয়।
পরিবেশের ব্যাপারে জাপানি গাড়ি কতটা নিরাপদ? জাপান সুনামির পর তেজস্ক্রিয়তার আশঙ্কায় তারা অনেক গাড়ি ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশে তেজস্ক্রিয়তার কোন আশঙ্কা আছে কী না?
আবদুল হামিদ শরীফ: জাপান পরিবেশের ব্যপারে ১০০ ভাগ সচেতন। তারা তেজস্ক্রিয়তার ব্যপারে অনেক সচেতন। তেজস্ক্রিয়তা খাকলে জাপানি লোকরা এসব গাড়ি নিজে চালিযে এনে আমাদের কাছে দিতো না । এতে সে নিজেও আক্রান্ত হতো।
ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিসের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কয়েক বছর আগে আমদানি করা গাড়িগুলোর বর্তমান হাল নিয়ে আপনার মতামত কী? কেন এমন হলো? আর জাপানি গাড়ি কেমন? দেশের সার্বিক অর্থনীতি নিয়েই আপনার বিশ্লেষন কি?
আবদুল হামিদ শরীফ: অনেকেই বিভিন্ন সময়ে নিম্নমানের ভারতীয় ও চীনা গাড়ি আমদানি করছে। মূলত ভারতীয় গাড়ি আমদানিতে বিশাল অঙ্কের কর ফাঁকির সুযোগ থাকায় তারা এ কাজ করছে। এসব গাড়ি আর চলে না । অধিকাংশই ডাম্পিং হলে থাকায় ট্যাক্সি সংকট দেখা দেয়। কিন্ত জাপানি গাড়ি ঠিকই ভালোভাবে রাস্তায় আছে।
চীন বা ভারত থেকে আমদানিকৃত গাড়ির ক্ষেত্রে সরকার জানতে পারে না, গাড়ির প্রকৃত মূল্য কত। আমদানিকারক যে দাম উল্লেখ করেন, কর কর্মকর্তারা সে দামই জানতে পারেন। অন্যদিকে জাপানি গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে সরকার ইয়েলো বুকের মাধ্যমে গাড়ির প্রকৃত দাম জানতে পারে, ফলে জাপানি গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ থাকে কম।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ১১ হাজার ২৬০টি ট্যাক্সিক্যাবের নিবন্ধন রয়েছে। এর মধ্যে অনুপযোগী হয়ে কারখানাসহ বিভিন্ন স্থানে পড়ে আছে প্রায় ১০ হাজার ট্যাক্সিক্যাব। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আনা এ ট্যাক্সিক্যাবগুলো নিম্নমানের হওয়ায় তা কিছুদিনের মধ্যেই অচল হয়ে পড়ে।
শুধু দামের ব্যবধানের কারণে ক্রেতারা এখন ভারতসহ অন্য কয়েকটি দেশে তৈরি নতুন গাড়ির দিকে ঝুঁকছেন। এতে ক্রেতার দোষ কি?
আবদুল হামিদ শরীফ: ক্রেতা কমদামে কিনতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে মান , টেকসই, গ্যারান্টি, স্ট্যাটাস এসবও দেখতে হবে। ক্রেতা কি গাড়িতে ৫ বছর না সারাজীবন চলতে চায় তার উপর সিদ্ধান্ত নিবেন।
এই সেক্টরের সমস্যা সমাধানে আপনার পরামর্শ কি?
আবদুল হামিদ শরীফ: আমরাও দেশের ভালো চাই। শুধু নিজের স্বার্থ দেখলে হবে না। তারপরেও নানা দিক চিন্তা করে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয। আমরা বলবো সরকার বাস্তব অবস্থা দেখুক। ক্রেতাদের সাথে কথা বলুক। সরকার বিশেষজ্ঞ ও এই সেক্টরে অভিজ্ঞদের মতামত নিয়ে যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা তা মেনে নেব। আমার পরামর্শ আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযাযী, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা ডব্লিউটিএ এর নিয়ম অনুযায়ী সব চলুক। আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। এক দেশে দুই ধরনের আইন যেন না চলে।
দেশের অনলাইন মিডিয়ার এগিয়ে যাচ্ছে। অনলাইনের বর্তমান অবস্থা আপনি কতটা অবগত? আপনারা আন্তর্জাতিক ব্যবসা করছেন। আপনাদের কেন অফিসিয়াল সাইট দেখা যাচ্ছে না কেন?
আবদুল হামিদ শরীফ: অবশ্যই অনলাইন মিডিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। এখনতো অনলাইনের যুগ। সবক্ষেত্রে অনলাইনের জয়যাত্রা।
আমি জাপানে থাকতেও দেখেছি নতুন প্রজন্মের অনলাইনের প্রতি নির্ভরশীলতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। মানুষ সবকিছু সাথে সাথে জানতে চায়। অনলাইনে একই সংবাদ একাধিক ভাষায পড়তে পারছে। যা কাগজর পত্রিকায় হয়না। আমাদের বারভিডার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট আছে। তবে ডোমেইন জটিলতায় আপাতত দেখা যাচ্ছেনা। এটি আমরা সমৃদ্ধ করবো।