শেয়ারবাজারের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গড়ার প্রস্তাব

শেয়ারবাজারের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গড়ার প্রস্তাব

শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের প্রস্তাব করেছে দৈনিক পত্রিকা ভোরের কাগজ।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ভোরের কাগজ আয়োজিত ‘বাজেট ২০১২ : কর প্রস্তাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে ৫ দফা এবং সামগ্রিক অর্থনীতি ও কর আদায় বিষয়ে আরো ৬ দফা প্রস্তাব করা হয়।

বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন আয়কর আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

প্রস্তাবনায় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আসছে বাজেটে শেয়ারবাজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। স্বচ্ছ পদ্ধতি গ্রহণ করা গেলে পাবলিক-প্রাইভেট অংশিদারিত্বের মাধ্যমে অতি সহজে এ রকম তহবিল গঠন করা সম্ভব।

এ তহবিল প্রতিটি ১০০ টাকা মূল্যমানের শেয়ারে বিভক্ত হবে এবং কোনো প্রিমিয়াম ছাড়াই বাজারে আসবে। সরকার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, শিল্প ও বাণিজ্যিক উদ্যোক্তা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকে সমান সংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে এ তহবিল পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হবে। সর্বক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে সকল সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে ও তহবিলটি পরিচালিত হবে।

এ তহবিলের অর্থ যোগাযোগ, পরিবহন ও অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ব্যবহার করার ব্যবস্থা থাকবে। তহবিলটির নাম হবে ‘গ্যারান্টিযুক্ত শেয়ার যোগাযোগ পরিবহন ও অবকাঠামো উন্নয়ন ফান্ড’। একটি বিশেষ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এ তহবিল গঠন ও পরিচালনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দক্ষতার সঙ্গে এ কাজটি করতে সক্ষম হলে শেয়ারবাজার ভষ্যিতে আর কোনো দিন অস্থিতিশীল হওয়ার সম্ভবনা থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীর আলম।

পুঁজিবাজারে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীকে অন্তত দুই বছর পর্যন্ত একই শেয়ারে বিনিয়োজিত থাকার নিশ্চয়তা দিতে হবে বলেও প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়।

কমপক্ষে ৩০-৪০ কোটি টাকা পরিশোধিত মুলধন না হলে পাবলিক ইস্যুতে আসা যাবে না এ জাতীয় শর্ত না রেখে লাভজনক এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে হিসাব সংরক্ষণ করে এমন কোম্পানির পরিশোধিত মুলধন কম থাকলেও পুঁজিবাজারে যাতে আসতে পারে সে ব্যবস্থা করা উচিত বলেও মন্তব্য করা হয় প্রস্তাবে।

শেয়ারবাজার বিষয়ক প্রস্তাবনার পাশাপাশি কর কার্যক্রমের বিষয়ে ৬ দফা প্রস্তাব করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে, কর আদায়ের প্রশাসনিক ও পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনা, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে অধিক রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করা, বাজেটে রাজস্ব আয় ও প্রাক্কলিত ব্যয় সংক্রান্ত ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, যানজট নিরসনে ব্যক্তি খাত ও আয়কর, আয়কর বিভাগে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন পদ্ধতির সূচনাকরণ ও দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

প্রশাসনিক ও পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত ও অধিক রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করা বিষয়ে বলা হয়েছে, আমাদের সার্বিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় প্রশাসনিক জটিলতা, পদ্ধতিগত জটিলতা স্বচ্ছতাহীনতা ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ততা অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়।

এসব সমস্যার সমাধানে যে সকল প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, রিটার্ণ দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকারপত্র প্রদান নিশ্চিতকারণ, সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যতীত আয়কর রিটার্ন অডিট ও পুন:করন নির্ধারণ না করার বিধান প্রবর্তন, পূর্বানুমোদন প্রথা বাতিলকরণ, সাক্ষ্য আইনের প্রয়োগ, আপিল কর্মকর্তা ও ট্রাইব্যুনালের সদস্য নিয়োগ বিধির পরিবর্তন, বেকারত্ম দূরীকরণ ও সঠিক রাজস্ব আয়ের জন্য হিসাব নিরীক্ষা ও পক্ষ সমর্থন পৃথকীকরণ, সৎ করদাতাদের মূল্যায়ন ও ওয়েবসাইটে টিআইএন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে ভুয়া টিন সৃষ্টি রোধ করা।

বাজেটে রাজস্ব আয় ও প্রাক্কলিত ব্যয় সংক্রান্ত ব্যবস্থার বিষয়ে বলা হয়, যে সকল খাত থেকে রাজস্ব আহরণের সুযোগ রয়েছে সে সকল খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ। তবে এর প্রধান শর্ত হবে রাজস্ব আহরণে অবশ্যই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়, সুনীতির প্রয়োগ ও অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া না হয়।

এ অংশে আরো বলা হয়, পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে প্রত্যক্ষ করের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি, টিআইএনধারী করদাতাদের রিটার্ন দাখিল নিশ্চিতকরণ, আপিলের মতো অধিকার নিশ্চিতকরণ, করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধিকরণ, বিনিয়োগ কর রেয়াত, ন্যায্য রাজস্ব আয়ের জন্য সর্বজনীন স্বনির্ধারনী পদ্ধতিতে কয়েকটি শর্ত আরোপ, জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রেতার ওপর আয়কর আরোপ, রাজধানী থেকে জনসংখ্যার চাপ কমাতে ঢাকায় পাকা দালানে সপরিবারে বা এককভাবে ফ্ল্যাট বা বাসায় বসবাস করলে কর দিতে হবে এমন ব্যবস্থা প্রবর্তন, উন্নয়ন বরাদ্দের ও রাজস্ব ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং আপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও অপচয় হ্রাস বা বাতিলকরণ।

বিদ্যুৎ সমস্যার বিষয়ে বলা হয়, ‘বিদ্যুৎ সমস্যা আমাদের উন্নয়নের প্রধান প্রতিবন্ধক। তাই এবারের বাজেটে বিদ্যুৎকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ। এ সমস্যার সমাধানে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিলাসবহুল বিদ্যুৎ ব্যবহারে অধিক কর আরোপের প্রস্তাব করা হয় ভোরের কাগজের প্রস্তাবনায়।

ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তৃতা করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান, এনবিআর’র সদস্য এম এ কাদের সরকার, সংসদ সদস্য শাহ জিকরুল আহমেদ, ইংরেজি দৈনিক ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন ও আমাদের সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান প্রমুখ।

অর্থ বাণিজ্য