আমানত ও ঋণের ওপরে ঘোষিত সুদহারের বাইরে যাতে আরোপ করা না হয়, সে ব্যাপারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে আবারো সর্তক করে দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সাফ জানিয়ে দেয়, এর ব্যতিক্রম হলো আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে, মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধে ব্যাংকগুলোর পরিপালন অবস্থা সন্তোষজনক না হওয়াতে উদ্বেগের কথা জানিয়ে দেওয়া হয় তাদের।
বাংলাদেশের ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে অ্যাসোসিয়েশেন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এর বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন অবস্থানের কথা জানিয়ে দেয়। গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে এবিবির সভাপতি নুরুল আমিন সহ তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সূর চৌধুরি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
তবে এসময় সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল আমিন বলেন, ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে কোনো তারল্য সংকট নেই। প্রাথমিক ডিলার (পিডি) ব্যাংকগুলো সরকারের বন্ড কিনে যে সংকটে রয়েছে তার বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যাপ্ত তারল্য সহায়তা দিচ্ছে।
এসকে সূর বলেন, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে খেলাপি ঋণ, আমানত ও ঋণের সুদহার, আমানত ও ঋণ প্রবৃদ্ধির ভারসাম্য, মেয়াদোর্ত্তীণ স্বীকৃত বিলের দায় পরিশোধ, স্থিতিপত্র বহির্ভূত পরোক্ষ ঋণ সুবিধা প্রত্যক্ষ ঋণে রূপান্তর, মালি লন্ডারিং, সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং কৃষি ঋণ নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচ্য বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয় ও তার অবস্থানের কথা জানিয়ে দেয়।
এসকে সূর আরো বলেন, নিজেদের ঘোষিত হারের বাইরে আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ দেওয়ার যদি কোনো অভিযোগের প্রমাণ পায় তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে। দন্ড আরোপের বিধানও আছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় মুদ্রায় মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিলের দায় পরিশোধের ৪টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে একটি ব্যাংকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের হিসাব থেকে এর সমন্বয় করেছে। তবে এভাবে দেনা পাওয়া নিষ্পত্তি কাম্য নয়। এতে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশংকা তৈরি হয়েছে।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলো সর্তক করে জানিয়ে দেয়, সাম্প্রতিক কালে ব্যাংকগুলোর প্রত্যক্ষ ঋণগুলো পরোক্ষ ঋণে পরিণত হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব ঋণ যথাসময়ে পরিশোধিত না হওয়ায় পরিশোধের মেয়াদ আরো প্রলম্বিত করে মেয়াদি ঋণে রূপান্তর করা হচ্ছে। যার ফলে ব্যাংকগুলোতে অনাকাঙ্খিতভাবে তারল্য সংকট তৈরি হচ্ছে। এমন চর্চা ব্যাংকগুলোকে বন্ধ করতে হবে।
এব্যাপারে একটি ট্রাস্কফোর্স গঠন করার ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান এসকে সূর।
তিনি বলেন, কোনো কোনো ব্যাংক তাদের কনভেনশনাল ব্যাংকিং এর তহবিল দিয়ে ইসলামি ব্যাংকিং এ বিনিয়োগ করছে। যা ইসলামি ব্যাংকিং নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাছাড়া অনেকেই সীমা অতিক্রম করে এমন বিনিয়োগে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে সূত্র বলছে, বৈঠকে গভর্নর ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের বলেন, মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধে ব্যাংকগুলোর পরিপালন অবস্থা সন্তোষজনক নয়। যা ব্যাংকিং খাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এধরনের শৈথিল্য মানা হবে না।
এসময় গভর্নর কৃষি ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো সচেষ্ট হতে আহ্বান জানান।
নূরুল আমিন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আলোচ্য সূচির কোনো কোনো বিষয়ে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রমে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও হতাশ নয়। আমরা এখন আগের থেকে আরো শৃঙ্খল।’
তিনি বলেন, ‘যারা কনভেনশনাল ব্যাংকিং এর পাশাপাশি ইসলামি ব্যাংকিং করছে তারা অনেকেই হয়তো সীমা অতিক্রম করেছে। এব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের সর্তক করে দিয়েছে। আশা করি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো সংশোধন করে নেবে।’
বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে বৈঠক চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।