বাংলা জাতিসংঘের ভাষা হলে বছরে ৪৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে

বাংলা জাতিসংঘের ভাষা হলে বছরে ৪৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে

বাংলা জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে চালু হলে প্রতিবছর বাংলাদেশের ৪৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

নাছিমুল আলম চৌধুরীর এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন যে কোনো ভাষা জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা ঘোষণার সঙ্গে বিশাল আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। জাতিসংঘের যে কোনো বাংলা অনুবাদে প্রতি পৃষ্ঠায় প্রায় ২৫০০ মার্কিন ডলার ব্যয় হবে। বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করলে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫৫ মিলিয়ন ডলার বা ৪৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। অন্য কোনো রাষ্ট্র এ ব্যয়ভার বহনে অংশীদার না হতে চাইলে বাংলাদেশকে পুরো ব্যয়ভার বহন করতে হবে।’

মন্ত্রী জানান, বর্তমানে প্রচলিত ভাষার বাইরে নতুন কোনো ভাষাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে অধিষ্ঠিত করতে হলে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে দর কষাকষি করে সাধারণ পরিষদে নতুন ম্যান্ডেন্ট গ্রহণ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘২০১০ সালের ২১ এপ্রিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমি সকল সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের চিঠি দিয়ে বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে অধিষ্ঠিত করার জন্য প্রস্তাবিত রেজুলেশন সমর্থন করার অনুরোধ জানাই। কতিপয় বন্ধুপ্রতীম দেশছাড়া প্রায় সব দেশই আর্থিক দায়িত্বের বিষয়টি কে নেবে তা জানতে চায়। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে সমর্থন করলে তাদের কি লাভ হবে সে সম্পর্কেও প্রশ্ন করে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘এখন বোধ হয় সময় এসেছে বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সঙ্গে আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণ করার বিষয়ে সুদূর প্রসারী চিন্তা-ভাবনা করার। এ বিষয়ে আমি জাতীয় সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসে কর্মরতরা কোনো অভিযোগ আনলে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের দৃষ্টিতে আনা কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি, বা সমাধানের চেষ্টা হয়নি, এমন নজির বিরল। তারপরও বলতে হবে, আমাদের প্রবাসীর সংখ্যা ৮০ লাখ। তার বিপরীতে ৪৯টি দেশের ৬১টি মিশনে কর্মকর্তার সংখ্যা ১৫৯ জন। এই সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অল্প। আর্থিক সীমাবদ্ধতাও আছে।’

তিনি বলেন, ‘সৌদি সরকার ২০০২ সালে নিয়ম করে যে, তাদের দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ২০ শতাংশ শ্রমিক স্থানীয়দের মধ্যে থেকে নিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এই সিদ্ধান্ত বাস্তায়ন করতে পেরেছে তারা সবুজ শ্রেণীভূক্তি এবং যারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি তারা লাল শ্রেণীভূক্ত। সবুজ শ্রেণীভূক্ত প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশি শ্রমিকদের আকামা পরিবর্তনের কোনো সমস্যা নেই। তারা নিজেদের ইচ্ছে মতো কর্মস্থল পরিবর্তন করতে পারেন। কিন্তু লাল শ্রেণীভূক্ত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের আকামা বা কর্মস্থল পরিবর্তনের সমস্যা হচ্ছে।’

জয়নাল আবদিনের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে যাদের বৈধভাবে কাজ করার কাগজপত্র নেই বা যারা অসাধু জন্যশক্তি রফতানিকারকদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তারা প্রবাসে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হন। পররাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে প্রবাসী নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করছে। কেউ হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হলে তাকে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। তবে নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধে অবৈধ অভিভাসন বন্ধের কোনো বিকল্প নেই।’

সামশুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মিয়ানমার জানিয়েছে, সে দেশের জলবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। দেশটি তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত গ্যাস বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে।’

এদিকে শহীদউদ্দিন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘পার্বত্য এলাকায় শান্তিচুক্তি পাহাড়ীদের সংঘাত বন্ধ করেছে। সরকার শান্তিচুক্তির বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। এরই মধ্যে শান্তিচুক্তির বিভিন্ন ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। অবাস্তবায়িত ধারা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। সন্তু লারমাসহ অন্যান্য স্বাক্ষরকারীরা তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলে যে দাবি করেছেন, তা সত্য নয়।’

বাংলাদেশ