সাফল্য, অগ্রগতি, গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং প্রবৃদ্ধির ১৩ বছর পার করলো বেসরকারি খাতের মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটি বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করেছিলো ১৯৯৯ সালের ২ জুন। এরই মধ্যে বেসরকারি খাতের বিকাশের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। আগামীতে দেশের প্রান্তিক মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবা দিতে কাজ করবে মার্কেন্টাইল ব্যাংক।
শুক্রবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাংসদ আব্দুল জলিল। ব্যাংকের ১৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ১৩ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়ার ঘোষণা দেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী এ কে এম শহীদুল হক। আগামীকাল ২ জুন অভিজাত বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃত হিসেবে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হবে।
আব্দুল জলিল বলেন, ‘দেশের প্রতিটি প্রান্তে ব্যাংকিং সেবা দিতে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। আগামী দিনে সেই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের আজকের সাফল্যের মূল শক্তি আমাদের গ্রাহকরা। আমরা আগামী দিনে আরো বেশি গ্রাহকবান্ধব হবো। ব্যাংকিং সেবা দিয়ে মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে চাই। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য, মুনাফা অর্জন নয়। আগামীতে আমরা গ্রাহকদের জন্য নতুন সেবা নিয়ে আসব। শিল্পে ও বাণিজ্যে বিনিয়োগ, গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এবং দরিদ্রদের জন্য সেবা বাড়ানো হবে। মার্কেন্টাইল ব্যাংক শুধু বড়লোকদের সেবা দিতে নয়।’
তিনি বলেন, ‘১৩ বছরের পথ চলায় সাফল্যের সঙ্গে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। সব পর্যায়ে আমরা সমর্থন পেয়েছি। আমাদের পৃষ্ঠপোষক, শেয়ার হোল্ডার, গ্রাহক, বোর্ড সবার সমর্থন ছিলো পথ চলায়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪৭টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে মূল্যায়নে মার্কেন্টাইল ব্যাংক অন্যতম। বিগত দিনে ভুল ক্রটি হয়নি তা বলব না। তবে বড় চিহ্নিত কোনো ভুল করেছি এমন কোনো সর্তকবার্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের দেয়নি।’
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কোনো উদ্যোক্তা ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত নয় বলেও জানান তিনি। তার মতে, ‘ব্যাংকের কোনো কোনো উদ্যোক্তা একা একটি শাখা চালানোর সামর্থ্য রাখেন। তবে আমরা সাধারণের অর্থ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকে ১০ জন ও ৫ জন করে হত দরিদ্র মানুষকে বিনা সুদে ও শর্তে ঋণ দেব। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এটি আমরা করতে চাই।’
চেয়ারম্যান জানান, ব্যবসার পাশাপাশি আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতাকে সব সময় গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এজন্য কার্যক্রম শুরুর দ্বিতীয় বছর থেকেই চালু করা হয়েছে ফাউন্ডেশন। এর মাধ্যমে বিভিন্ন সময় নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্নভাবে সমাজের দরিদ্রদের সহায়তা দিচ্ছি। এ বছর শিক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ১ কোটি টাকা দেওয়া হবে।
জলিল বলেন, ‘আমরা প্রতিটি জেলায় একটি করে হাসপাতাল খুলতে চাই। ইতোমধ্যে এর কার্যক্রম শুরু করেছি। তবে আদালতের একটি রায়ের কারণে তা এগিয়ে নিতে পারছি না। এছাড়া কিডনি রোগীর জন্য ডায়ালাইসিস সেন্টার করবে মার্কেন্টাইল ব্যাংক।
সংবাদ সম্মেলনে শহীদুল হক বলেন, ‘আগামী দিনে আমরা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবাকে গুরুত্ব দিবো। বর্তমান সেবার পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু করা হবে। শাখাবিহীন ব্যাংকিং সেবা হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হবে। আর বিনিয়োগে গুরুত্ব পাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত, কৃষি খাত। জামানতবিহীন ঋণে বিশেষ গুরুত্ব দেব আমরা।’
প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ৭৫টি শাখা রয়েছে। এর ২৩টি হচ্ছে পল্লী শাখা। রয়েছে ৫টি নিবেদিত এসএমই ও কৃষি শাখা। এ বছর আরো ১০টি শাখা খোলা হবে।’
এটিএম বুথের সংখ্যা ৬০ থেকে বাড়িয়ে নতুন বছরে ১০০টিতে উন্নীত করার হবে বলেও জানান তিনি।
শহীদুল হক বলেন, ‘এ বছরই আমারা ভারতের ত্রিপুরায় প্রথম বিদেশি শাখা খুলতে যাচ্ছি।’
এদিকে ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্মাননা যারা পেতে যাচ্ছেন তারা হলেন, ফজলে হাসান আবেদ (সমাজ নির্মাণ), অধ্যাপক আব্দুল মান্নান (শিক্ষা), ইব্রাহীম খালেদ (ব্যাংকিং), অধ্যাপক হারুন-উর রশিদ (চিকিৎসা), আলী যাকের (সংস্কৃতি), লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী (মুক্তিযুদ্ধে), হাসান হাফিজুর রহমান (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কগবেষণা-মরণোত্তর), অধ্যাপক মোশারফ হোসেন (অর্থনীতি), কবি বেলাল চৌধুরী (বাংলা ভাষা ও সাহিত্য), আব্দুর রউফ চৌধুরী (শিল্প ও বাণিজ্য), তোয়াব খান (সাংবাদিকতা), সাকিল আল হাসান (ক্রীড়া), হরিপদ কাপালী (কৃষি উন্নয়ন) এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের স্পিকার আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে সম্মাননা তুলে দেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যরাসহ ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।