জারি করার দীর্ঘ ৩১ বছর পর অবশেষে মিসর থেকে তুলে নেওয়া হলো জরুরি অবস্থা। রাষ্ট্রীয়ভাবে জারি করা এই জরুরি অবস্থার ছায়াতলে এতদিন মিসরের নিরাপত্তা বাহিনী আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে বিশেষ ক্ষমতা ভোগ করতো। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইন ব্যবহার করা হতো দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী ও ভিন্নমত দমনে।
জরুরি অবস্থার কারণে প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে মিসরের নিরাপত্তা বাহিনী সন্দেহমূলক ভাবে যে কাউকে আটক করে বিশেষ আদালতে বিচারের সম্মুখীন করার অধিকার ভোগ করতো।
১৯৮১ সালে মিসরের সাবেক স্বৈরশাসক আনোয়ার সাদাতের হত্যাকাণ্ডের পরপরই এই আইনটি জারি করা হয় যা বিরতিহীনভাবে এতদিন দেশটিতে বলবৎ ছিলো।
গত বছর মোবারক বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিলো জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার। হোসনি মোবারক তার শাসনামলে বিভিন্ন সময় জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে তার ক্ষমতাচ্যুতির পর জনগণের দাবির মুখে নতি স্বীকার করে মোবারক পরবর্তী মিসরের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত অন্তবর্তীকালীন সামরিক পরিষদ ঘোষণা দেয়, তারা এই জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়াতে আর ইচ্ছুক নন।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে মিসরের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে জরুরি অবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে অকার্যকর হয়ে যায়। এদিকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের প্রেক্ষিতে মিসরের বর্তমান ক্ষমতাসীন সুপ্রিম কাউন্সিল অব দি আর্মড ফোর্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছে দেশের ক্ষমতা হস্তান্তর সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের প্রতি কর্তব্য পালনের অংশ হিসেবে তারা দায়িত্বপালন অব্যাহত রাখবে।
জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের পর দেশটির বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী হোসাম বাগাত বলেন,‘ এটি একটি বিশাল অগ্রগতি। জরুরি অবস্থার প্রত্যাহার আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি একটি সর্তক সংকেত। মিসরের নিরাপত্তা বাহিনী এমন একটি সংস্কৃতির অধীনে পরিচালিত হয় যে তারা মনে করে তাদের অবস্থান সব আইনী বাধ্যবাধকতার ওপর। কিন্তু এখন থেকে তাদের প্রচলিত সাধারণ আইনের অধীনে কাজ করতে হবে। আইনের জবাবদিহিতার বাইরে কোনো অতিরিক্ত ক্ষমতা তারা আর ভোগ করতে পারবে না।’
এদিকে মিসর থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মার্ক টোনার বলেন.‘ এই জরুরি অবস্থা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে এটিই প্রতীয়মান যে মিসর গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে চলেছে।’
ধারণা করা হয় প্রায় দশ হাজার লোককে এই আইনের অধীনে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। যাদের মধ্যে অনেকেই পরে কারাগার থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। এখনও ১৮৮ জন ব্যক্তি এই আইনের অধীনে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউমান রাইটস ওয়াচ।