বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদফতরে (বিআইডব্লিউটিএ) এক প্রকৌশলীর কক্ষে বৃহস্পতিবার আরেক প্রকৌশলীকে মারধর করে রক্তাক্ত করেছে এক যুবলীগ নেতা। জরিনা খানম নামের আহত ওই নারী যান্ত্রিক ও নৌপ্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।
মারধরে জড়িত থাকার দায়ে যান্ত্রিক ও নৌপ্রকৌশল বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মেরিন) মো. নেছার উদ্দীন খানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিকালের এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার পরই বিআইডব্লিউটিএ’র অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন জরুরি বৈঠক করে।
ওই বৈঠকে এ ঘটনার দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। রাত ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় মতিঝিল থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ’র সচিব মো. ওয়াকিল নেওয়াজ যুগান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর রুমে ঠিকাদাররা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে মারধর করে। এ নিয়ে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিকালে নেছার উদ্দীন খানের রুমে তার সঙ্গে যান্ত্রিক ও নৌপ্রকৌশল বিভাগের টেন্ডার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করছিলেন জরিনা খানম। একপর্যায়ে দু’জনের মধ্যে মতদ্বৈততা দেখা দেয়। হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠেন নেছার উদ্দীন খান। তিনি জরিনা খানমকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। এরপরও জরিনা খানম তার যুক্তি উপস্থাপন করতে গেলে সেখানে থাকা ঠিকাদার ও যুবলীগ নেতা রাকিব জরিনাকে কিল-ঘুষি মারতে মারতে নিচে ফেলে দেন। সে অবস্থায় আবারও কিলঘুষি মেরে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান রাকিব। এ সময় ঢাকা দক্ষিণের ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মারুফ রেজা সাগর কক্ষে ছিলেন।
জানতে চাইলে জরিনা খানম যুগান্তরকে বলেন, স্যারের সঙ্গে কথা বলছিলাম। এ সময় বারবার ইন্টারপ্রিয়েট (কথার মাঝে ঢুকে যাওয়া) করছিল যুবলীগ নেতারা। আমি তাদের বলি, আমি তো স্যারের সঙ্গে কথা বলছি, আপনাদের সঙ্গে তো না। আপনারা কথার মধ্যে ঢুকছেন কেন। একপর্যায়ে স্যারের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু হলে স্যার আমাকে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। তখন ওরা (যুবলীগ নেতা) আমাকে কিল-ঘুষি মারে। কক্ষ থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে।
কর্মকর্তারা জানান, রাকিব আরআর এন্টারপ্রাইজ নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। রাকিব, সাগর, রায়হান, মনিরসহ স্থানীয় যুবলীগের কয়েকজন নেতা বিআইডব্লিউটিএ ভবনে দীর্ঘদিন ধরে টেন্ডারবাজি করে আসছেন। তাদের সঙ্গে নৌপ্রকৌশল, সিভিল ও ড্রেজিং বিভাগের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সখ্য রয়েছে। কেউ টেন্ডারবাজিতে বাধা হয়ে দাঁড়ালেই তাদের হুমকিধমকি ও হেনস্তা করে আসছে এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এমনকি এসব যুবলীগ নেতাকর্মীর মোটরসাইকেলেও বিভিন্ন সময়ে কয়েক প্রকৌশলীকে চড়তে দেখা গেছে। চক্রটি সম্প্রতি ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত কাউন্সিলর মুমিনুল হক সাঈদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা বলছেন, এ যুবলীগ নেতারা ভবনের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। কাজ না করেই বিল তোলার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
বিআইডব্লিউটিএ’র এক কর্মকর্তা জানান, ওই ঘটনায় সিসি ক্যামেরার দুটি ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। একটিতে রুমের বাইরের ফুটেজ রয়েছে। আরেকটিতে ভেতরের। ফুটেজ দুটি পরীক্ষা করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব-উল ইসলাম স্বাক্ষরিত দফতর আদেশে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জরিনা খানমকে ঠিকাদারের মাধ্যমে লাঞ্ছিত করে কর্তৃপক্ষের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করায় চাকরি প্রবিধান অনুসারে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মেরিন) নেছার উদ্দীন খানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হল।
এসব বিষয়ে নেছার উদ্দীন খান ও রাকিবের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি। ফোন ধরেননি তারা।