ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সহ সভাপতি এনামুল হক আরমানকে এক কক্ষে রেখে জিজ্ঞাসবাদ করছে র্যাব।
মাদক মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে থাকা সম্রাট ও আরমানকে গত বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় থেকে র্যাব-১ কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
অস্ত্র আইনের মামলাতেও সম্রাটকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত।
রমনা থানার এই দুটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব প্রথম ছিল গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। গোয়েন্দা পুলিশের আবেদনেই গত ১৫ অক্টোবর ঢাকার মহানগর হাকিম আদালত দুই যুবলীগ নেতার রিমান্ড মঞ্জুর করে।
সে অনুযায়ী ওই দিনই তাদের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে ডিবি।
এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব র্যাবকে দেয়। গত বৃহস্পতিবার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সেদিন বিকালে দুই আসামির দায়িত্ব বুঝে নেয় র্যাব।
গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডের দুই দিনে তারা কোনো তথ্য দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউ মুখ খুলতে চাননি।
তবে র্যাবের হেফাজতে এক দিনের জিজ্ঞাসাবাদে দুজনের কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন র্যাব -১ অধিনায়ক সারোয়ার বিন কাশেম।
শুক্রবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এসব তথ্যের মধ্যে কতটুকু সত্যতা আছে সে ব্যাপারে যাচাই না করে বলা যাবে না।”
এক প্রশ্নের জবাবে এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, “তাদের র্যাব কার্যালয়ে এক সাথে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের অবৈধ ক্যাসিনো অভিযান শুরু হলে যুবলীগ নেতা সম্রাটের নাম আসে। গত ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
আরমানকে ‘মাতাল অবস্থায়’ পাওয়ায় কুমিল্লাতেই ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাকে ছয় মাসের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তার কাছে ১৪০টি ইয়াবা পাওয়া গেছে জানিয়ে চৌদ্দগ্রাম থানায় মাদক আইনে একটি মামলাও করে র্যাব।
আর সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে ওইদিনই ঢাকার কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।
সেখান থেকে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পাশপাশি ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে মাদক আইনের মামলায় সম্রাট ও আরমান দুজনকেই এবং অস্ত্র মামলায় শুধু সম্রাটকে আসামি করা হয়।
র্যাবরে অভিযানের সময় মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রের ভেতরে সম্রাটের বিশাল ছবি দেখা যায়।
ওই ক্লাবের ক্যাসিনো তিনিই চালাতেন এবং মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় অন্য ক্যাসিনোগুলো থেকেও প্রতিদিন নির্দিষ্ট হারে চাঁদা তার কাছে যেত বলে খবর এসেছে গণমাধ্যমে।
সম্রাটের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা আরমানও দীর্ঘদিন ধরে ক্যাসিনোর কারবারে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তিনি ঢাকাই সিনেমাতেও টাকা খাটাচ্ছিলেন।
আরমানের প্রোডাকশন হাউস ‘দেশ বাংলা মাল্টিমিডিয়া’র ব্যানারে প্রথম সিনেমাটি মুক্তি পায় গত কোরবানির ঈদে। ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ নামের ওই সিনেমায় অভিনয় করেছেন শাকিব খান ও বুবলী।