পতাকা বৈঠকের জন্য নয়, বাংলাদেশি সীমান্তের ভেতরে মাছ ধরতে এসে আটক হওয়া জেলেকে ছিনিয়ে নিতেই নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রবেশ করেছিলেন বিএসএফ সদস্যরা। তাদের অতর্কিত গুলির জবাবে আত্মরক্ষার্থেই গুলি চালিয়েছিলেন বিজিবি সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে বিএসএফের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন ১ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ।
এর আগে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গোলাগুলিতে এক বিএসএফ সদস্য নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ করে ভারতীয় বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম। বিএসএফ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমস জানায়, পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে ওই গোলাগুলির ঘটনায় অপর এক বিএসএফ সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম বিজয় বাহান সিং। তিনি উত্তর প্রদেশের ফিরোজাবাদের বাসিন্দা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মুর্শিদাবাদ সীমান্তে গোলাগুলিতে নিহত বিএসএফ সদস্য বাহিনীটির কনস্টেবল ছিলেন। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির গুলিতেই ওই বিএসএফ সদস্য নিহত ও অপরজন আহত হন বলে বিএসএফের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।
দেশটির বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ভারতীয় বিএসএফ সদস্যরা বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠক করে ফেরার সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। তবে এমন তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানান বিজিবির ১ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি বলেন, পতাকা বৈঠকের কোনো প্রশ্নই আসে না। পতাকা বৈঠক করতে গেলে একটা আনুষ্ঠানিকতার বিষয় আছে। এ বিষয়টা তারাও (বিএসএফ) আমাকে বলেননি। আমি এখানেই প্রথম শুনলাম। ওখানে কোনো পতাকা বৈঠক হয়নি। পতাকা বৈঠক একটাই হয়েছে, বিকেলে আমার এবং তাদের কমান্ডেন্টের মধ্যে।
তিনি বলেন, পতাকা বৈঠক হলে এতকিছু হওয়ার সুযোগ ছিল না। কারণ, পতাকা বৈঠক স্বাধীনতার পর থেকে হয়ে আসছে। আর এই বিজিবি আড়াইশ বছরের পুরাতন বাহিনী। এই ধরনের ঘটনা ঘটার কোনো সুযোগ নাই যে, তারা পতাকা বৈঠকে আসবে আর তাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করা হবে।
লেফটেনেন্ট কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ, ‘বিএসএফ কমান্ডেন্ট পতাকা বৈঠকের কথা বলেননি কিন্তু আমাকে বলার চেষ্টা করেছিলেন যে, আমরা তাদের কল করেছিলাম বলে তারা এসেছিল। তখন আমি উনাদের বলেছি যে, আমাদের লোকজন কেউ ড্রাংক না। জাতিগতভাবে আমরা ড্রাংক হই না। বিজিবি মানসিকভাবেও সম্পূর্ণ সুস্থ বাহিনী। এমন নয় যে, তাদের ডেকে কাছে এনে গুলি করে মেরে ফেলবো। একটা বাহিনীর সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটানোর মতো কোনো ঘটনাও ঘটেনি। তারপরেও তাদের কথা আমরা নোট করেছি এবং সেটা তদন্ত করে দেখবো।
তিনি বলেন, যেহেতু তারা নিয়ম বহির্ভূতভাবে এখানে চলে আসে এবং তাদের বলা হয়েছিল যে, পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হস্তান্তর করবো। আপনারা একটু অপেক্ষা করেন। সেটা শুনেই হয়তো তারা আতঙ্কিত হয়ে তাদের জেলেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। প্রথমে তাকে (জেলেকে) মারধর করে আমাদের সদস্যদের সামনে। আমরা তখন বাধা দেয়ার চেষ্টা করি যে, আমরা কখনো ভারতীয় নাগরিকদের নির্যাতন করি না। ওরা যদি মারধর করে তখন অভিযোগ উঠবে যে, আমরা করেছি। তারা সেখানে অপ্রস্তুত অবস্থায় এসেছিল। তাদের ইউনিফর্মও পুরোপুরি ঠিক ছিল না। তাদের যখন বলা হয়, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে, তারা আসছেন। তখন তারা (বিএসএফ সদস্যরা) গুলিবর্ষণ শুরু করে। সেখানে আমাদের অসামরিক লোকজনও ছিল। তারা ভয় পেয়ে যান। তখন আমাদের সদস্যরা পজিশন নিয়ে আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়।
বিজিবি জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে চারঘাট থানার শাহরিয়ার খাল নামক স্থানে মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পদ্মা নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মাছ ধরার সময় তিনজন জেলেকে আটকের চেষ্টা করা হয়। এদের মধ্যে দুজন জেলে পালিয়ে যায়। একজনকে জালসহ আটক করে নদীর বাংলাদেশের পাড়ে নিয়ে আসা হয়। পরে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, তারা ভারতীয় নাগরিক।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বালুঘাট এলাকায় পদ্মা ও বড়াল নদীর মোহনায় অবৈধভাবে ঢুকে পড়া ভারতীয় জেলেকে ছিনিয়ে নিতে প্রথমে গুলি চালায় বিএসএফ। প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানালেন, শুরু থেকেই আগ্রাসী আচরণ করেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা।
পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আটক জেলেকে হস্তান্তরের প্রস্তাব দেয়ার পরই বিচলিত হয়ে পড়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া বিএসএফ সদস্যদের দলটি। এরপরই গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে ফিরে যায় তারা। এসময় আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায় বিজিবি।
অনাকাঙ্ক্ষিত এই বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে বানোয়াট তথ্য প্রচার করা হচ্ছে বলে জানান রাজশাহী বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ।