স্কুল-কলেজসহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত, কারাগার, খেলার মাঠ, জনসমাগম স্থানে বসানো মোবাইল ফোন কম্পানির টাওয়ার চার মাসের মধ্যে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এসব স্থানে নতুন করে টাওয়ার বসানো কার্যক্রম স্থগিত রাখতে হবে।
বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রায়ে এ নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত মোট ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব নির্দেশনা চারমাসের মধ্যে কার্যকর করতে বলা হয়েছে।
পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া রায়ে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্ট গত ২৫ এপ্রিল এ বিষয়ে রায় দেন। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশের তথ্য নিশ্চিত করেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, রিপন বাড়ৈ ও সঞ্জয় মণ্ডল। বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার খোন্দকার রেজা-ই-রাকিব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী জিনাত হক।
রায়ে মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণ মাত্র নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ১/১০ ভাগ করা; বিকিরণ মাত্রা যেন বেশি না হয় তার ব্যাপারে অতিরিক্ত নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ; টাওয়ার বসাতে জমি অধিগ্রহণে কোনো বাধা আছে কিনা বা বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ; টাওয়ারের বিকিরণ মাত্র বিটিআরসি এবং লাইসেন্সি দুইজনকেই স্বাধীনভাবে আইটিইউ এবং আইইসি এর মান অনুসারে পরিমাপ করা; কোনো টাওয়ারের বিকিরণ মাত্রা বেশি হলে তা অপসারণ করে নতুন টাওয়ার বসানো; টাওয়ার ভেরিফিকেশন মনিটর পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিটিআরসি এর দায়-দায়িত্ব হবে বাধ্যতামূলক; বিটিআরসি স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং সেল গঠন; বিটিআরসিকে অন্যদেরকে নিয়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি গঠন, প্রতি ৬ মাসে লাইসেন্সি কর্তৃক অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা; মোবাইল সেটে দৃশ্যমানভাবে এসএআর মান লিখতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সি প্রতিটি রিপোর্ট/রেকর্ড ৫ বছর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এইচআরপিবির এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে হাইকোর্টের নির্দেশের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে তিনদফা সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব টাওয়ারের মধ্যে মাত্র একটি টাওয়ারে মাত্রাতিরিক্ত রেডিয়েশন পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের দেওয়া নির্দেশনার আলোকে বিটিআরসি নীতিমালা করে। পরবর্তীতে আদালতের দেওয়া আদেশের আলোকে আরো কয়েকদফা এই নীতিমালা সংশোধন করে আদালতে দাখিল করে বিটিআরসি। এরপর শুনানি শেষে রায় দেন আদালত।