আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ দফায় পাইকারী দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে। পাইকারী দাম বাড়ানোর প্রস্তাব থাকলেও অন্তর্বর্তীকালীন হিসেবে খুচরা বিদ্যুতের দামও বাড়ার সম্ভবনা খুবই বেশি বলে জানা গেছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবির (৪ জুন) দেশে ফিরলেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) প্রস্তাব জমা দেওয়া হবে বলে পিডিবি সূত্র জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিইআরসি সূত্রে জানা গেছে, পাইকারী বিদ্যুতের দাম ১০ শতাংশের বেশি বাড়লে খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হয়। পাইকারী বিদ্যুতের দাম বাড়ার পর যদি খুচরা বিদ্যুতের দাম না বাড়ে, তাহলে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।
পিডিবি সূত্রটি জানিয়েছে, তারা প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব তৈরি করেছে। চেয়ারম্যান বর্তমানে বিদেশ সফরে রয়েছেন। দেশে ফিরলেই বোর্ডে তোলা হবে এই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব। আর বোর্ডের অনুমোদন পেলেই চলে যাবে বিইআরসি।
সূত্রটি দাবি করেছে, তারা আশা করছেন জুন মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেই এই প্রস্তাব অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন দেওয়া সম্ভব হবে।
পিডিবি দাবি করেছে, বর্তমানে উৎপাদন ব্যয় গড়ে ইউনিটপ্রতি সাড়ে ছয় টাকার মতো আর বিক্রি করা হয় গড়ে ৪.০২ পয়সা। যদি ৩০ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ে, তারপরও পিডিবির এ বছরে আর্থিক ক্ষতি হবে ৪ হাজার ১’শ কোটি টাকা। তারা এই যুক্তি তুলে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্রটি দাবি করেছে, এ দফার দাম বাড়নোর প্রস্তাবে তারা সর্বোচ্চ ১ টাকা ভর্তূকি রেখে দাম বাড়াতে চায়। সে হিসেবে বর্তমান উৎপাদন খরচ ৫ দশমিক ৭০ টাকা থেকে এক টাকা কম প্রায় পৌনে ৫ টাকা নির্ধারণ করতে চায়।
দাম বাড়ানোর প্রস্তুতির বিষয়ে অন দ্য রেকর্ড কোনো কথা বলতে রাজি হননি পিডিবির কেউ। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই এর সত্যতা স্বীকার করেছেন।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২৯ মার্চ দাম বাড়ানোর ফলে বর্তমানে বিদ্যুতের পাইকারী গড় দর রয়েছে ৪ টাকা ০২ পয়সা। ওই সময়ে পিডিবি থেকে বলা হয়েছিলো, মার্চে তাদের প্রতি ইউনিটের উৎপাদন খরচ পড়েছে ৫ দশমিক ৭০ টাকা। যা বর্তমানে ৬ টাকার ওপরে বলেও একটি সূত্র দাবি করেছে।
বর্তমান সরকার এ পর্যন্ত ৫ দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। প্রথম দফায় ২০১০ সালের মার্চে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ায়। এরপর ১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খুচরা ও পাইকারি দাম বাড়ায়। এরপর একই বছরের ডিসেম্বর মাসে পাইকারি দর ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ দশমিক ২৭ টাকা করা হয়।
এছাড়া চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ দশমিক ০৯ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৭৪ টাকা করা হয় এবং সর্বশেষ মার্চে ইউনিটপ্রতি আটাশ পয়সা বাড়িয়ে ৪ দশমিক ০২ টাকা করা হয়।
এ ছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে ২০১০ সালের মার্চ মাসে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তীকালীন ৫ শতাংশ, এবং ডিসেম্বর মাসে দাম বাড়ানো হয়। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দাম বাড়ায় বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে ইউনিটপ্রতি গড় দর রয়েছে ৫ দশমিক ৩২ টাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, উৎপাদন ও বিতরণের মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। ভর্তূকি কমানো প্রয়োজন। আর ভর্তুকি কমাতে হলে দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই।