হরতালের মামলায় বাদীও পড়তে পারে শাস্তির খাঁড়ায়

হরতালের মামলায় বাদীও পড়তে পারে শাস্তির খাঁড়ায়

হরতালের গাড়ি পোড়ানোর মামলায় কেবল বিবাদী নয়, সাজার খাঁড়ায় পড়তে হতে পারে বাদি পক্ষকেও। দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা এ মামলায় অভিযোগ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে ১৮ দলীয় জোট নেতাদের। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণ না হলে উল্টো সমপরিমাণ সাজা পেতে পারে বাদী পক্ষই।

এক্ষেত্রে এ মামলার বাদী পুলিশ কর্মকর্তা পড়তে পারেন শাস্তির খাঁড়ায়। এমনকি কেউ তাকে এ মামলা দায়েরে প্ররোচিত করে থাকলে শাস্তি হতে পারে তারও।

আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২ বিশ্লেষণ করে ও আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এ ধারণা পাওয়া গেছে।

ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, অভিযোগ প্রমাণ হলে অপরাধীর সাজা তো হবেই। কিন্তু কেউ মিথ্যা মামলা করলে বা করালে সমপরিমাণ সাজা সেও পাবে। তবে এরই মধ্যে আদালত এ মামলায় চার্জশিট গ্রহণ করায় অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলেও বাদীর কোন সমস্যা নাও হতে পারে বলেও মনে করছেন কোন কোন আইন বিশেষজ্ঞ।

গত ২৯ এপ্রিল হরতাল শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের ৩৪ জন নেতার বিরুদ্ধে এ মামলা হয়।

আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন-২০০২ (সংশোধনী-২০১০) এ মামলাটি করেন তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইসলামাইল মজুমদার।

এ আইনের সংজ্ঞায় (২-আ ধারায়) অপরাধের ধরন হিসেবে বলা হয়েছে, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে কোন যানবাহনের ক্ষতিসাধন করা।’

(উ) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন স্থানে, বাড়ী-ঘরে, দোকান-পাটে, হাটে-বাজারে, রাস্তা-ঘাটে, যানবাহনে বা প্রতিষ্ঠানে পরিকল্পিতভাবে বা আকস্মিকভাবে একক বা দলবদ্ধভাবে শক্তির মহড়া বা দাপট প্রদর্শন করিয়া ভয়ভীতি বা ত্রাস সৃষ্টি করা বা বিশৃংখলা বা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা।’

অপরাধের শাস্তি হিসেবে এ আইনের ৪ ধারার (১) বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি কোন আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ করিলে তিনি অন্যুন দুই বছর এবং অনধিক পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।’

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন ‘দণ্ডপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনকালে সরকার কিংবা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কোন প্রতিষ্ঠান বা কোন ব্যক্তির আর্থিক ক্ষতিসাধন করিলে তদজন্য আদালত তদ্বিবেচনায় উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ক্ষতিগ্রস্ত সরকার বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির অনুকূলে প্রদান করিবার জন্য উক্ত দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আদেশ দিতে পারিবে এবং এই ক্ষতিপূরণের অর্থ সরকারী দাবী হিসাবে আদায়যোগ্য হইবে।’

৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ সংঘটনে সহায়তাকারীও একই দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’

তবে এ আইনের ৬ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ সংঘটনের কোন ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নাই জানিয়াও তাহার বিরুদ্ধে কোন মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহা হইলে প্রথমোক্ত ব্যক্তি অন্যুন দুই বত্সর এবং অনধিক পাঁচ বত্সর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।’

এ ব্যাপারে ফোজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আইনজীবী আনিসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আইনে যা আছে তাই হবে।’

মামলা মিথ্যা হলে অভিযোগকারীর সাজা কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আইন অনুযায়ী মিথ্যা মামলার বাদী, অভিযোগকারীদেরও সমপরিমাণ সাজা হবে।’

এ মামলা সত্য প্রমাণিত না হলে আইন অনুযায়ী বাদীর সাজা হবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আদালত যদি মনে করেন তারা মিথ্যা তদন্ত করেন তাহলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন আদালত।’

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হলে তো সবোর্চ্চ ৫ বছর কারাদাণ্ড হবে।’

যদি কেউ কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন তাহলে তার বিষয়ে কি হবে- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই সমপরিমাণ দণ্ড হবে।’

১৮ দলীয় জোট নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে কাদের শাস্তি হবে জানতে চাইলে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘যারা মামলা করেছেন তাদের দণ্ড হবে। অর্থ্যাৎ পুলিশের।’

‘তবে এ মামলায় যেহেতু চার্জশিট আদালত গ্রহণ করেছেন। সেহেতু মামলাটি সাক্ষী-সাবুদের অভাবে প্রমাণ করতে না পারলেও বাদীর কোন সমস্যা হবে না’ বলেও মনে করেন বিএনপি সমর্থক এ আইনজীবী।

এদিকে এ মামলায় এরই মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

মামলাটিতে ১৮ দলীয় জোটের চার সংসদ সদস্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ গত সোমবার কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। মঙ্গলবার মুক্তি পান বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।

এর বাইরে জামায়াত-শিবিরের জনা তিনেক পলাতক নেতার বাইরে জেলে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ব্রিগেডিয়ার (অব.) আসম হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস-চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবীর রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনসহ অন্যরা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা হচ্ছেন- তেজগাঁও থানারই উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি (উত্তর) পরিদর্শক মো নূরুল আমীন।

মামলার আলামত হিসেবে রয়েছে একটি পুরাতন বাস (ঢাকা মেট্রো-জ-১১-২১০৯)। বাসটির বিভিন্ন অংশ আগুনে পোড়া। সব সিটের কাঠ ও কাপড় পোড়া। আরো আছে দুই টুকরো সিটের পোড়া কাঠ ও গাড়ির ভাঙা জানালার পাঁচ টুকরো গ্লাস।

সাক্ষীর তালিকায় রয়েছেন, ডিএমপির কয়েকজন এসআইসহ ১৮ জন।

রাজনীতি