পদ্মার পানি কমতে শুরু করলেও তীব্র হয়েছে নদীর ভাঙন। সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে মাদারীপুরের শিবচরের চরাঞ্চলের ইউনিয়নগুলো। এরইমধ্যে প্লাবিত হয়েছে তিন ইউনিয়নের ৫০ গ্রাম। আক্রান্ত হয়েছে একটি মসজিদ ভবন, মাদ্রাসা, সড়ক এবং অসংখ্য ঘরবাড়ি।
ভাঙনে আক্রান্ত হয়েছে বহুতল বিশিষ্ট তিনটি স্কুল, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন এবং বাজারের বহু স্থাপনা। দ্বিতীয় দফা ভাঙনে এ পর্যন্ত একটি স্কুল ভবনসহ দুইটি স্কুল, একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, একটি বাজার এবং সাড়ে ৩০০ ঘরবাড়ি না নদীতে বিলীন হয়েছে। এর আগে প্রথম দফা ভাঙনে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সরেজমিনে জানা যায়, পদ্মায় পানি কমে উপজেলার চরাঞ্চলের বন্দরখোলা, কাঁঠালবাড়ি ও চরজানাজাতে নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বন্দরখোলার কাজীসুরায় একটি পাকা মসজিদ, কাজীরসুরা তাহফিজুল মাদ্রাসা ভাঙনের মুখে পড়ায় মালামাল সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ভাঙনের ১০০ মিটারের মধ্যে বন্দরখোলা ইউনিয়নের নূরুউদ্দিন মাদবরকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, কাজীর সূরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ তিনটি বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
দ্বিতীয় দফা ভাঙনে এ পর্যন্ত কাঁঠালবাড়ির মাগুরখণ্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুইটি ভবন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হাজরা বাজার, চরজানাজাত মালেক তালুকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও সাড়ে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। ভাঙনের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে আক্রান্তরা কোনমতে অন্যত্র সরে যাচ্ছেন। একদিকে ভাঙন অপরদিকে ঘরে পানি ঢোকায় মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে, জিও ব্যাগ ফেলে বন্দরখোলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বাঁচানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বন্যা ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের সাড়ে তিন শতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণের চাল বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত ২০০ পরিবার, চরজানাজাত ইউনয়নের ১০০ পরিবার, বন্দরখোলা ইউনিয়নের ৪৭ পরিবার ও মাদবরচর ইউনিয়নের ১৫ পরিবারের মাঝে পরিবার প্রতি ২০ কেজি করে ত্রাণের চাল বিতরণ করা হয়েছে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানসহ কর্মকর্তারা। আক্রান্ত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরীর নির্দেশে বন্যা ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত চরাঞ্চলবাসীর মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি সার্বক্ষণিক ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, পদ্মার ভাঙনের ব্যাপকতা বেড়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। নদীভাঙনে আক্রান্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।