আজ শুক্রবার ষষ্ঠীপূজা। ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে মর্তে আগমন ঘটবে মা দুর্গার। ঢাক-ঢোলের বাজনা, কাঁসা, শঙ্খের আওয়াজ এবং ভক্তদের উলুধ্বনিতে এখন মুখরিত প্রতিটি মন্দির ও পূজামণ্ডপ। দেবীর আগমন-গমন (বিদায়) দুটিই ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে এবার। মা দুর্গাকে বরণ করতে মন্দিরে মন্দিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। গোধূলি লগ্নে মন্দিরে মন্দিরে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে সূচনা ঘটে উৎসবের। আগামীকাল শনিবার হবে মহাসপ্তমী পূজা। রবিবার মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা। সোমবার মহানবমী আর মঙ্গলবার বিজয়া দশমী। দশমীর দিনে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
দুর্গোৎসব উপলক্ষে পূজার্চনা, পুষ্পাঞ্জলি, আরতি, প্রসাদ বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ নানা আয়োজন থাকছে মণ্ডপগুলোতে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ষষ্ঠীপূজার দিন আজ বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন মণ্ডল। তিনি বলেন, পূজা সামনে রেখে এবার কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ১১টি জেলায় প্রতিমা ভাঙচুরের ১৩টি ঘটনা ঘটেছে। আগামী দিনে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে, দেশের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা সামনে রেখে মন্দিরের পাশাপাশি সারা দেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শনে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, পূজার সময়ে কোনো ধরনের হামলা বা সহিংসতার আশঙ্কা নেই। তার পরও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য পুলিশের কন্ট্রোল রুমসহ সব জায়গায় আলাদা ফোর্স থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সারা দেশে মণ্ডপগুলোতে ৫ অক্টোবর থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে তিন লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। নারী স্বেচ্ছাসেবক দল, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশও উপস্থিত থাকবে। এ ছাড়া মণ্ডপে সিসিটিভি, আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর থাকবে। পূজামণ্ডপে বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকবেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
পূজার দিনগুলোতে জরুরি সেবা নিশ্চিত করতে সব প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। গতকাল ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পূজার সময় রাজধানীর কোথাও জলাবদ্ধতা হলেই ঢাকা দক্ষিণ সিটির ইমার্জেন্সি রেসপনস টিম দ্রুত মাঠে নামবে।
রাজধানীর মন্দিরগুলোতে পূজার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে মহানগর সর্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটি। গতকাল ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য মহানগর এলাকার মন্দিরগুলোর প্রতি কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পূজামণ্ডপে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা পথ, প্রতিটি মণ্ডপে অন্তত ১০ জন নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকের ২৪ ঘণ্টা তদারকি ও পাহারার ব্যবস্থা, আতশবাজি ও পটকা না ফোটানো, ৮ অক্টোবর রাত ১০টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন, পূজার মন্দির ও সমগ্র এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।