পাকিস্তানে সামাজিক মাধ্যমে পশ্চিমা-ধাঁচের পোশাক পরা ছবি পোস্ট করে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তারকা হয়ে উঠেছিলেন কান্দিল বালোচ, কিন্তু এতে তার ওপর ক্ষিপ্ত হন তার ভাই মোহাম্মদ ওয়াসিম এবং তিনি তার নিজের বোনকে গলা টিপে হত্যা করেন।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত ওই খুনের দায়ে পাকিস্তানের আদালত মোহাম্মদ ওয়াসিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।
এ হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তানে পরিবারের সম্মান রক্ষায় হত্যা বা ‘অনার কিলিং’ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও আলোচনার সৃষ্টি হয়।
সোশাল মিডিয়ায় নিজের খোলামেলা ও যৌন উত্তেজক ছবি, ভিডিও, স্ট্যাটাস ও মন্তব্য পোস্ট করে পাকিস্তানের মতো রক্ষণশীল সমাজে আলোড়ন ও বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলেন সোশাল মিডিয়া সেলেব্রিটি কান্দিল বালোচ।
তার বয়স ছিলো ২৬ বছর, আসল নাম ফৌজিয়া আজিম। এক সময় তার নাম দেয়া হয়েছিল ‘পাকিস্তানের কিম কার্দাশিয়ান।’
মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ এক মুসলিম নেতার সাথে তার নিজের একটি ছবি পোস্ট করে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। ওই ছবিটি বহু মানুষ শেয়ার করেছে। ফেসবুকে তার ছিলো সাত লাখ ফলোয়ার।
তার ২৫ বছর বয়সী ভাই মোহাম্মদ ওয়াসিম এই হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং তাকে পুলিশ আটক করে।
মোহাম্মদ ওয়াসিমকে উদ্ধৃত করে ডন পত্রিকা জানায়, তিনি কান্দিল বালোচকে প্রথমে চেতনানাশক দিয়ে পরে তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন ।
তিনি বলেছিলেন, মুসলিম নেতার সাথে ছবি প্রকাশের পরেই তিনি তার বোনকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।
অবশ্য পরে মামলা শুরু হলে তিনি তার স্বীকারোক্তি পরিবর্তন করেন।
কান্দিল বালোচ খুন হবার দুদিন আগে ১৪ই জুলাই ফেসবুকে লিখেছিলেন, “আমি আধুনিক যুগের একজন নারীবাদী। আমি সাম্যে বিশ্বাস করি। নারী হিসেবে আমি কেমন হবো সেটা আমাকেই ঠিক করতে হবে।”
তিনি আরো লেখেন – “আমার মনে হয় না শুধু সমাজের জন্যে নারীদের চলতে হবে। আমি মুক্তচিন্তা ও মুক্তমনের একজন নারী। আমি এই আমাকে ভালোবাসি।”
মামলার সময় বলা হয়েছিল যে কান্দিলের অন্য ভাইরা খুন করার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছে।
তবে মামলার রায়ে কান্দিলের দুই ভাইসহ মোট ৬ জনকে খালাস দেয়া হয়।
কান্দিল বালোচ খুন হওয়ার পর ওই পরিবারের পিতা বলেছিলেন, তার মেয়ে তাদেরকে বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতেন।
“সে আমাদের সবাইকে সাহায্য করতো, এমনকি আমার ছেলেকেও – যে তাকে হত্যা করেছে,” পাকিস্তানের সুপরিচিত ডন পত্রিকাকে একথা বলেন কান্দিল বালোচের পিতা মোহাম্মদ আজিম।
পুলিশ বলছে, তিনি পরিবারের সম্মান নষ্ট করেছেন একারণে তার ভাই তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
মোহাম্মদ আজিম বলেন, “আমার মেয়েটি যা কিছু অর্জন করেছে তা দেখে আমার ছেলে খুব একটা খুশি ছিলো না।”
কান্দিল বালোচকে মুলতানে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়।
মুলতান থেকে ১৩০ কিমি দূরে ডেরাগাজী খানে কান্দিজ বালোচের জানাজা হয়, যাতে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয় বলে খবরে বলা হয়েছিল।
পরে তার পিতামাতাই এ হত্যাকাণ্ডের জন্যে ছেলেকে অভিযুক্ত করে পুলিশের কাছে মামলা করেন।
কান্দিল বালোচ ছিলেন একজন মডেল ও অভিনেত্রী। সোশাল মিডিয়ায় খোলামেলা ছবি দেয়ার কারণে তাকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় – পাকিস্তানের মতো একটি দেশে একজন নারী সোশাল মিডিয়ায় কতোটুকু কী করতে পারেন সে বিষয়ে।
ধর্মীয় নেতার সাথে সেলফি
মুফতি আব্দুল কাভি নামে এক নেতার সঙ্গে কান্দিল বালোচ একটি সেলফি তুলে পোষ্ট করার পর মি. কাভিকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে পদচ্যুত করা হয়েছিলো।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মি. কাভিকে তলব করেছিল তদন্তকারী সংস্থা। কান্দিল বালোচ নিহত হবার খবর শুনে মি. কাভি মন্তব্য করেছিলেন, পাকিস্তানে ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে মজা করবেন এমন সবার জন্যই এ ঘটনাটি একটি শিক্ষা হবে।
তবে তিনি কান্দিলকে ‘মাফ’ করে দিয়েছেন বলেও জানিয়েছিলেন। কান্দিল বালোচের হত্যায় নিজের কোন সম্পৃক্ততা ছিল না বলে দাবি করেন মি. কাভি। বিবিসি