রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়ন ও নৃশংস গণহত্যার জন্য দেশটির বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর জোট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)। আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে ওআইসির পক্ষে এই মামলা করবে গাম্বিয়া।
গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল আবুবাক্কার এম তামবাদু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ বছরই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটির সরকার। ‘রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের রূপরেখা’ ইস্যুতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন আয়োজিত একটি পার্শ্ব বৈঠকে তিনি এমন কথা বলেন।
স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় আয়োজিত ওই বৈঠকে আবুবাক্কার এম তামবাদু তার বাংলাদেশ সফরের কথা তুলে ধরেন। বিশেষ করে কক্সবাজার গিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মুখে তিনি শোনেন মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের ওপর কী অমানবিক নিপীড়ন চালিয়েছে। নৃশংস হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো নির্যাতনের বর্ণনা করে গাম্বিয়ার মন্ত্রী বলেন, মানবতার বিরুদ্ধে এসব অপরাধের বিচার হতে হবে। আমাদের দেশ ছোট হতে পারে। কিন্তু মানবতার শক্তি অনেক বড়।
ধর্মীয় ও জাতিগত কারণে মিয়ানমারে এসব হত্যাকাণ্ড চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, এই পরিস্থিতি আর চলতে দেওয়া যায় না। আমার দেশ দুই মাসের মধ্যে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজে’তে মামলা করব। যদি দুই মাসের মধ্যে করা সম্ভব না হয়, তাহলে অবশ্যই চলতি বছরের মধ্যেই দেশটিকে বিচারের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ মিশনের ‘বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে’ আয়োজিত এই বৈঠকে মূল বক্তব্য দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশের সরকারের ওপরই আস্থা রাখতে পারছে না। আর সে কারণেই একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদেরকে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, শুধু মিয়ানমার নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।
তাদেরকে বিষয়টি নিয়ে আরো সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্বেচ্ছায় তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে পুরো বিষয়টিকে টেকসই করতে তাদের নাগরিকত্বসহ সকল অধিকার, ভূমি ফিরিয়ে দেওয়া এবং জীবিকার বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্যে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি মানবিক সাহায্য দিয়ে আসছে। দেশটির জেনারেলদের ওপর তারা নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। এসবই প্রশংসার দাবি রাখে। অথচ মিয়ানমারের জিএসপি সুবিধা বহাল রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট এর নির্বাহী এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. সাইমন এডামসের সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন গ্লোবার জাস্টিস সেন্টারের পরিচালক আকিলা রাধাকৃষনান। এছাড়া বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।