দুবাইয়ে খালেদ ও জিসানের বৈঠকের ব্যবস্থা করেন জি কে শামীম

দুবাইয়ে খালেদ ও জিসানের বৈঠকের ব্যবস্থা করেন জি কে শামীম

রাজধানীর ক্লাবে ক্যাসিনো বা জুয়ার কারবারের সঙ্গে জড়িত যুবলীগ নেতারা প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আঁতাত করে চলতেন। ক্যাসিনোর ‘কাঁচা টাকা’র ভাগ যেত অনেকের পকেটেই। নেতারা বসেই পেতেন টাকার ভাগ। এই ভাগের সমন্বয় করতেন জুয়ার নিয়ন্ত্রকরা। এই নিয়ন্ত্রকরা চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন একই পন্থায়।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক পরিচয়ে চলা গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীম শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে মিলে মতিঝিলসহ আশপাশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁকে কবজায় নিয়ে ‘সুবিধা’ পকেটে পোরেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এই নিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে উত্তেজনা দেখা দিলে শামীমের মধ্যস্থতায় দুবাইয়ে জিসান ও খালেদের সমঝোতার চেষ্টা চলে। তবে ওই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। পুলিশের রিমান্ডে এসব তথ্য জানিয়েছেন খালেদ, জি কে শামীম ও কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ। তাঁরা পুলিশ ও সাংবাদিকসহ সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের চাঁদা দেওয়ার দাবি করছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া ‘বিব্রতকর তথ্য’ যাচাইয়ে সময় পার করছেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তারা। পুলিশের অভিযুক্তদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন সিনিয়র কর্মকর্তারা। গতকাল বুধবার ডিবির অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।

ডিএমপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর পুলিশকে জড়িয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশে ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। দু-একজন সদস্যের কারণে ডিএমপি ও পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে দেওয়া যাবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলামসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে ক্যাসিনো থেকে কোউ সুবিধা নিতেন কি না। গতকাল পর্যন্ত কামরুল নামে এক পরিদর্শক ও নাসিম নামে এক সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) বিরুদ্ধে ক্যাসিনো, বারসহ জুয়ার আসর থেকে টাকা সংগ্রহ করে কিছু কর্মকর্তাকে দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এমন তথ্য পেয়ে গতকালই তাঁদের ডিবি থেকে ডিএমপি সদর দপ্তরে বদলি করা হয়েছে। এই দুই কর্মকর্তা কয়েক বছর ধরেই ডিবিতে চাকরি করে অবৈধভাবে টাকা সংগ্রহ করছিলেন বলে অভিযোগ পান সিনিয়র অফিসাররা।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, জি কে শামীম চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ছিলেন ঢাকা মহানগর যুবদলের সহসম্পাদক। বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ ক্যাডার। সরকার বদল হলে তিনি যুবলীগে ঢুকে পড়েন। এ সময় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের পক্ষে টেন্ডারবাজি করতেন শামীম। আড়াই বছর আগে জি কে শামীমকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের কয়েক প্রভাবশালী নেতা। তখন থেকে জি কে শামীম দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ জিসানকে বাদ দিয়ে যুবলীগ নেতাদের পক্ষে ঠিকাদারি-টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি শুরু করেন। এ নিয়ে জিসানের সঙ্গে চরম দ্বন্দ্ব শুরু হয় খালেদের। জিসানের বিরুদ্ধে মতিঝিল, পল্টন ও রমনা থানা এলাকায় দুই বছর আগে পোস্টারিং হয়। এ দায়িত্ব পালন করেন জি কে শামীম। এসব কারণে বিদেশে থাকা জিসান খালেদ ও শামীমের ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে শামীম ওই বিরোধ নিরসনের উদ্যোগ নেন। দুই মাস আগে দুবাইয়ে খালেদ ও জিসানের বৈঠকের ব্যবস্থা করেন শামীম। সেখানে টেন্ডারবাজির বিষয় নিয়ে তিনজনের কথা হলেও সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি তাঁরা।

সূত্র জানায়, পরবর্তী সময়ে খালেদকে ভয় দেখাতে শুরুতে রানা মোল্লা নামে এক যুবলীগকর্মীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন জিসান। তাঁর অনুসারীদের মাধ্যমে তিনি ঢাকায় একে-২২ রাইফেল পাঠান। গত ৩০ জুন রাজধানী সুপারমার্কেটের সামনে থেকে একটি একে-২২ রাইফেলসহ কামাল হোসেন ও সাইদুল ইসলাম মজুমদার নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের আর্মস এনফোর্সমেন্ট টিম। এ অস্ত্র চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় আসে বলে তখন জানায় পুলিশ। পরবর্তী সময়ে জানা গেছে, এই অস্ত্রটি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পাঠান জিসান।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর