ওয়ালটনকে বাংলাদেশে শিল্পায়নের মডেল বলে আখ্যায়িত করেছেন তাইওয়ানের শিল্পপতিরা। তারা বলেছেন, তাইওয়ানও একসময় উন্নয়নশীল দেশ ছিলো। তাদের সমৃদ্ধি এনেছে শিল্পায়ন।
বাংলাদেশের দারিদ্র এবং বেকার সমস্যা সমাধানে ব্যাপক শিল্পায়নের বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তারা। শিল্পায়নের জন্য সবার আগে সরকারের পলিসি সাপোর্ট প্রয়োজন উল্লেখ করে ওয়ালটনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেন তারা।
মঙ্গলবার গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন কারখানা পরিদর্শন করেন তাইওয়ানের শিল্প উদ্যোক্তাদের একটি প্রতিনিধি দল। ১৭ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলটি ওয়ালটনের ফ্রিজ, মোটরসাইকেল ও এয়ারকন্ডিশনার উৎপাদনের বিভিন্ন প্ল্যান্ট ঘুরে দেখেন। এসময় তারা এসব পণ্য উৎপাদনে ওয়ালটনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ওয়ালটনের মতো অন্যরাও ব্যাপক বিনিয়োগে এগিয়ে আসলে বাংলাদেশ খুব শিগগিরই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবে।
প্রতিনিধি দলের নেতা তাইওয়ান ট্রেড সেন্টারের পরিচালক ওডি ওয়াং বলেন, শিল্পায়নের সুফল পেতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সরকারের সহযোগিতা, অনুকূল শিল্পনীতি।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, তাইওয়ানের সফলতার পেছনে কাজ করেছে যুগোপযোগী এবং বাস্তবমুখী শিল্পনীতি। যা করতে পারলে বাংলাদেশও সফল হবে। ওয়ালটন হতে পারে শিল্পায়নের মডেল।
তিনি বলেন, দক্ষ জনবল এবং বিশাল মার্কেট রয়েছে বাংলাদেশের। এদিক থেকে তাইওয়ানের চেয়েও ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।
তাইওয়ানের ডোইয়েন কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হেলেন লিন বলেন, সবার আগে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে শিল্পবান্ধব নীতি নিয়ে। তাইওয়ান যেভাবে ঘরে ঘরে শিল্প গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ সেটা অনুসরণ করতে পারে। ওয়ালটনের মোটরসাইকেলের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এটা হতে পারে এদেশের মানুষের জন্য আদর্শ বাহন।
এর আগে প্রতিনিধি দলকে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ কমপ্লেক্সে স্বাগত জানান, আরবি গ্রুপের চেয়ারম্যান এসএম নুরুল আলম রেজভী, অতিরিক্ত পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) এম এ কাদের, ম্যানেজমেন্ট উপদেষ্টা এসএম জাহিদ হাসান, সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর উদয় হাকিম, আলমগীর আলম, ডেপুটি ডিরেক্টর ইউসুফ আলী, মিডিয়া উপদেষ্টা এনায়েত ফেরদৌস প্রমূখ।
তাইওয়ানের শিল্পোদ্যোক্তারা ওয়ালটনের উন্নয়ণ ও গবেষণা, মান নিয়ন্ত্রণ, মেশিনারিজ ম্যান্যুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট, মোটরসাইকেল ও এয়ারকন্ডিশনার প্রোডাকশন প্রক্রিয়া ইত্যাদি পর্যবক্ষেন করেন। পরে প্রতিনিধি দলের নেতারা সাংবাদিকদের বলেন, ওয়ালটন বাংলাদেশের গর্ব করার মতো একটি প্রতিষ্ঠান।
তারা বলেন, ওয়ালটন কারখানা পরিদর্শন করে বাংলাদেশ সম্পর্কে উচ্চ ধারণা নিয়েই আমরা দেশে ফিরব। ওয়ালটন পণ্যের মানের প্রশংসা করে তারা আরো বলেন, উচ্চমানের পণ্য তৈরি করছে বলেই ওয়ালটন ১৬টি দেশে রপ্তানি করতে পারছে। তাদের প্রত্যাশা- এই প্রতিষ্ঠানটি একদিন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিতে পরিণত হবে। ওয়ালটন ব্র্যান্ডও বিশ্ববাসীর মুখে মুখে উচ্চারিত হবে।
ওয়ালটনের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর উদয় হাকিম বলেন, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল ও এয়ারকন্ডিশনারের মতো উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য তৈরিতে বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। এসব পণ্যের আমদানি বন্ধ হলে চাহিদার চেয়েও বেশি উৎপাদন করতে পারব আমরা। এছাড়া আরো বেশকিছু পণ্য উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে ওয়ালটনের। এজন্য প্রয়োজন সরকারের নীতিগত সহায়তা।
তিনি আরও বলেন, তাইওয়ানের প্রতিনিধি দলটি ওয়ালটনকে শিল্পায়নের মডেল বলায় ওয়ালটন আশাবাদী- আমরা পারব, বাংলাদেশ পারছে এবং পারবে।
উল্লেখ্য, তাইওয়ানের জনসংখ্যা মাত্র ২৩ লাখ। কিন্তু ছোট এই দেশটির ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে শিল্পকারখানা। শুধুমাত্র শিল্পায়নের মাধ্যমেই তাইওয়ান বর্তমানে একটি শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। চীনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পণ্য তৈরি করছে দেশটি। যদিও তাদের মার্কেট রপ্তানি নির্ভর। তাদের বার্ষিক রপ্তানির পরিমাণ ৩০০ বিলিয়ন ডলারের মতো। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের রপ্তানি মাত্র ২৩ বিলিয়ন ডলারের কিছু উপরে।